পাঁচশ বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাহেব বিবি মসজিদ

64

সবুর শুভ

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসর একটি এলাকা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা সংগ্রাম, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই এলাকাটি ইসলামি ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলীতেও সমৃদ্ধ। রাউজানের ৯ নং ওয়ার্ডের হাড়ি মিয়া চৌধুরী এলাকায় আছে ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের স্মারক সাহেব বিবি মসজিদ। চুন-সুরকির গাঁথুনিতে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপত্য। এর পাশে ও সামনে প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে গেইট। স্থাপনাটি ৮টি পিলার, ৩টি দরজা, দুটি জানালা ও এক গম্বুজ বিশিষ্ট। কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শৈল্পিক রূপ। স্থাপত্যের পাশে খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘি। ৫০০ বছর আগে নির্মিত স্থাপনাটির রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস। বাদশা মুহাম্মদ শাহ স্টেট’র আমলে ডিমের আটা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে অভিন্ন নকশায় ২২টি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ২২টি মসজিদের মধ্যে প্রথম নির্মিত হয়েছিল সাহেব বিবির মসজিদ।
তথ্যমতে, জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর পত্নী ও চট্টগ্রামের আলোচিত প্রসিদ্ধ মালকা বানুর মাতা সাহেব বিবি এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদের পাশের ফুলবাগান সম্বলিত কবরস্থানে শায়িত আছেন এটির প্রতিষ্ঠাতা সাহেব বিবি। এর পাশে আছে সাহেব বিবি দিঘি, যেটি শাহী পুকুর নামেও পরিচিত। মসজিদ ও কবরস্থান ৩০ শতক জায়গায় নির্মিত।কালের সাক্ষী এই মসজিদ দেখতে আসেন পর্যটকরা। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকাটা যেন নৈসর্গিক আবেশে পরিবেষ্টিত।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ৫শ’ বছর আগে সমজিদটি নির্মাণ করেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা রাউজান গ্রামের জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর স্বনামধন্য পত্নী মলকা বানুর মাতা সাহেব বিবি। মসজিদের আছে কারুকাজ-সম্বলিত টেরাকোটার ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনি। মসজিদটির সামনে একটি ঈদগাহ্ ও পাশে আছে কবরস্থান। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশপথ। পাশ্চিম দিকে গম্বুজ থেকেও উঁচু মিম্বর। জনশ্রুতি আছে, অতীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েকদিনের খাবার নিয়ে পায়ে হেঁটে এ মসজিদে অনেকেই নামাজ পড়ার জন্য আসতেন। মসজিদকে ঘিরেই পুরো এলাকায় একটি ধর্মীয় আবহ বিদ্যমান। প্রাচীন এই স্থাপত্য ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদেরকে আরও তৎপর হওয়ার দাবি স্থানীয়দের।