পাঁচলাইশ অফিস ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়েও জমা হয় না পাসপোর্ট

87

রাহুল দাশ নয়ন

জামাল উদ্দিন। লোহাগাড়ার পদুয়া থেকে পাঁচলাইশে পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে যান সকাল ৭টায়। সাড়ে ১২টার দিকে কাউন্টারের সামনে গেলে তার আবেদনে ভুল আছে বলে ফেরত দেয়া হয়। বেকায়দায় পড়ে তিনি নানাভাবে আবেদন জমা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাসপোর্ট আবেদনটি জমা দিতে বাড়তি টাকা দাবি করেন অফিস প্রাঙ্গণে ঘুরপাক করা দালাল চক্র। তার হাতে বাড়তি টাকা না থাকায় ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও আবেদনটি জমা না দিয়ে ফেরত যাচ্ছেন তিনি। গতকাল দুপুর ১টার দিকে পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সামনে এই প্রতিবেদককে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি।
পাসপোর্ট আবেদন, সংশোধন, পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ নানা কাজে প্রতিদিন হাজারখানেক মানুষের আনাগোনা হয় পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু প্রতিটি ধাপেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের দুটি প্রবেশমুখেই মানুষের জটলা। অফিসের মাঠজুড়ে এবড়োখেবড়ো ভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের কাক্সিক্ষত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে কেউ সফল হচ্ছেন, কেউ হচ্ছেন হয়রানি শিকার। প্রতিদিন এই পাসপোর্ট অফিসে সাড়ে ৪০০-এর মতো পাসপোর্ট জমা হয়।
পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মো. তারিক সালমানের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি অনেকটা ব্যস্ততা দেখান। পরে মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি বলেন, পাসপোর্ট এখন বেশি ডেলিভারি হচ্ছে বলেই লাইন বেশি। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শতাধিক পাসপোর্ট আবেদন পড়ছে। মাঝখানে প্রিন্ট স্লো থাকায় ডেলিভারি পায়নি। অফিসের ভেতরে বাইরের কোনো মানুষ প্রবেশ করতে পারে না। অফিসের বাইরে দালাল থাকলে সেটি আমাদের বিষয় না।’
সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে সকাল ৭টায় পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে এসে সাড়ে ১১টায় জমা দেন মোহাম্মদ শফি। পরে ছবি তুলতে লাইনে দাঁড়ালেও দুপুর ১টার দিকেও ছবি তুলতে পারেননি। তার সামনে তখনোও প্রায় অর্ধশত লোক ছবি তুলতে অপেক্ষমাণ। তিনি বলেন, ‘আমার পরে এসে অনেকেই ছবি তুলে চলে গেছেন।’
নামের একটি ভুল বানান শুদ্ধ করতে দুইমাস আগেই আবেদন করেছিলেন মোহাম্মদ শামীম নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি কয়েকদফা পাসপোর্ট অফিসে গেলেও সেটি সংশোধন করতে পারেননি। অথচ তার আগের পাসপোর্ট ও এনআইডিতে শুদ্ধ নামই আছে। তার অভিযোগ, ‘ফরম জমার সময় তার নামের বানানটি ভুল হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিক জমা ¯িøপটি চেক না করায় নামের বানানটি ভুল রয়ে যায়। এই অফিসে টাকা দিলেই সব দ্রুত ঠিক হয়।’
অফিসের প্রধান গেটে পুলিশ বক্সের পাশে একটি বেঞ্চে বসে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের সাথে পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন এক ব্যক্তি। একপর্যায়ে এই প্রতিবেদককে ছবি তুলতে দেখে সামনে থেকে সরে যেতে চান। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে থমকে দাঁড়ান। নিজেকে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে আরিফ নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসে সাংবাদিক আসলে আগে অনুমতি নিতে হয়।’ কিন্তু অফিস চলাকালীন সময়ে তিনি বাইরে বসে গ্রাহকদের কী সেবা দিচ্ছেন তার উত্তর মিলেনি। এ ব্যক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক মো. তারিক সালমান বলেন, ‘আরিফ নামে আমাদের অফিসে কেউ নেই।’