পশু জবাইয়ে যাচ্ছেতাই!

133

পশু জবাই করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তিনটি কসাইখানা রয়েছে। যার একটিতেও নেই কোনো পশু চিকিৎসক। কোনো রকমের পরীক্ষা ছাড়াই জবাই হয় গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া। এতে পশু জবাইয়ে কোনো ধরনের বাছবিচারের বালাই নেই, আর এসব ‘অনিরাপদ মাংস’ বাজার থেকে কিনে নিচ্ছেন নগরবাসী। মাত্র তিনটি কসাইখানা এতবড় নগরীর জন্য অপ্রতুল সে কারণে নগরীর যত্রতত্রই প্রতিদিন জবাই হচ্ছে শত শত পশু। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রশ্নই আসে না মাংস বিক্রেতাদের কাছে। অথচ আইনে রয়েছে পশু জবাইয়ের পূর্বে একজন পশু চিকিৎসক পশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং কেবলমাত্র নিরাপদ ঘোষিত হলেই পদ্ধতিগতভাবে তা জবাই হবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না থাকায় অনিরাপদ মাংসই খাচ্ছেন নগরবাসী। এতে চরম ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকির অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে পশু জবাইয়ের জন্য করপোরেশন নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি কসাইখানা রয়েছে। রৌফাবাদ, ফিরিঙ্গিবাজার ও পাহাড়তলীতে রয়েছে এই তিন কসাইখানা। গুটিকয়েক মাংস বিক্রেতা ছাড়া সাধারণ লোকজন এসব কসাইখানায় তাদের পশু জবাই করেন না। সাধারণ লোকজন বিয়ে- মেজবানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক আচার-অনুষ্ঠানে যেসব পশু জবাই করেন তা তাদের বাসা-বাড়ির সামনে বা কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় জবাই করে থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই নগরীর কোথাও না কোথাও এভাবেই নির্ধারিত স্থানের বাইরে পশু জবাই করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এসব কসাইখানার প্রতি মানুষের আগ্রহ না থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে অব্যবস্থাপনা। সিটি করপোরেশনের একটি অবহেলিত খাত হিসেবে এটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এমনকি ইজারাদাররাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে ‘লস্ট প্রজেক্ট’ হিসেবে এসব কসাইখানার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাছাড়া এসব কসাইখানার পরিবেশও স্বাস্থ্যকর নয়। এমননি এসব কসাইখানার সামনে ময়লার ভাগাড় করে রাখা হয়েছে। ফলে পরিবেশগত ও অব্যবস্থাপনার কারণেই বিলুপ্তির পথে এসব কসাইখানা। ফলে যত্রতত্র গবাদি পশু জবাই করা হচ্ছে। প্রথমত ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া জবাই হচ্ছে এসব পশু। ফলে অনিরাপদ মাংস ছড়িয়ে পড়ার আশংঙ্কা থেকে যায়। অন্যদিকে নগরবাসী জানেনও না ডাক্তারি পরীক্ষাসহ বা কসাইখানায় পশু জবাই করতে হবে। পশু জবাই ও মান নিয়ন্ত্রণ ২০১১ অনুযায়ী, কোনো বিশেষ অবস্থা ব্যতীত কসাইখানা ছাড়া পশু জবাই করা যাবে না। আবার কসাইখানার পরিবেশতগত মানও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেসবের বালাই নেই নগরীর কোথাও।
তাছাড়া প্রতিবছর কোরবানি ঈদে পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব জায়গায় পশু জবাই করেন না নগরবাসী। ফলে দ্রæত বর্জ্য অপাসারণে রীতিমত বেগ পেতে হয় সিটি করপোরেশনকে। এক্ষেত্রে নগরবাসীর অসচেতনতাকে দায়ী করছে সংস্থাটি। আগামী ১০ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগে কোরবানি পশু জবাই ও দ্রæত বর্জ্য অপসারণের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে চসিকের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের পাহাড়তলী কসাইখানার ইজারাদার আব্দুল গণি পূর্বদেশকে বলেন, কসাইখানায় কোনো ডাক্তার আসেন না। তিনি হেসে উল্টো আরও প্রশ্ন জুড়ে দেন, কিসের ডাক্তার? এসব ‘লস্ট প্রজেক্ট’। তাই এবার আর ইজারাও নিব না। একইভাবে ডাক্তারের কোনো হদিস নেই বলে জানিয়েছেন রৌফাবাদ কসাইখানার ইজারাদার সালামত আলী। তিনি আরও জানান, কসাইখানায় এখন তেমন কেউ পশু জবাই করতে আসেন না। সবাই ভোর রাত্রিতে রাস্তার পাশে বা মাঠে পশু জবাই করে ফেলেন। স্থানীয় নেতা ও পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব কর্মকাÐ চলছে বলে জানান তিনি।
অনিরাপদ মাংস গ্রহণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, অনিরাপদ মাংস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক রোগের জন্ম হয় অনিরাপদ মাংস থেকে। তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষতিকর কৃমির সংক্রমন হয়, যেগুলো কোনো সাধারণ কৃমি নয়। এছাড়াও লিভার ও কিডনির জন্য তা মারাত্মক ক্ষতিকর।
এই বিষয়ে সিটি করপোরেশনের এস্টেস অফিসার এখলাছ উদ্দীন আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের একজন পশু বিষয়ক কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনি ট্রেনিংয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন। তাই কসাইখানাগুলোতে আপাতত কোনো ডাক্তার নেই। এছাড়াও সাধারণ মানুষের চাহিদা কমে যাওয়ায় এসব কসাইখানাগুলোর আয় অনেক কমে গেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তবে এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, এসব কসাইখানা এই সময়ের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই সিটি করপোরেশন আধুনিক কসাইখানা করতে যাচ্ছে। যেটার বাস্তবায়ন শেষ হলে মানুষের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি হবে। তখন এগুলো সংষ্কার করে সচল করা হবে। কেননা তখন কসাইখানায় পশু জবাইয়ের চাহিদা তৈরি হবে।