পলাশ কেন বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে জানি না

44

বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ ফ্লাইট ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় করা মামলায় চিত্রনায়িকা শামসুন নাহার সিমলাকে সাড়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত দামপাড়া পুলিশ লাইনসে সংস্থাটির কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ফ্লাইট ছিনতাই করতে গিয়ে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন সিমলার দ্বিতীয় স্বামী পলাশ আহমেদ। কেন, কী কারণে ছিনতাই করতে চেয়েছিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিমলা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিয়ের পর মনে হয়েছিল পলাশের মানসিক সমস্যা আছে। তাই ডিভোর্স দিই।’ তিনি বলেন, কেন বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে গেছেন, তা বলতে পারছি না।
বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নায়িকা সিমলার সঙ্গে পলাশের কীভাবে কখন পরিচয় হয়, বিয়ে, তালাকসহ দুজনের সম্পর্ক কেমন ছিল, জানতে চাওয়া হয়। পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। পলাশ কোনো জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না, তাও জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে সিমলা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। হতাশা থেকে পলাশ এই কাজ করতে পারেন বলে শিমলার ধারণা। তবে কী কারণে হতাশা, তা জানাতে পারেননি।
পুলিশ সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সিমলা জানিয়েছেন ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় দু’জনের। এসময় পলাশ নিজেকে প্রযোজক বলে পরিচয় দেন। পরিচয়ের সময় একে অপরের ফোন নম্বর নেন। পরে মোবাইলে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। এতে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
২০১৮ সালের ৬ মার্চ দু’জন বিয়ে করেন। পরে বাসায় থাকতে চাইলে পলাশ সিমলাকে উত্তরায় নিজের বাড়িতে ভাড়াটিয়ারা থাকছেন, নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বলে অজুহাত দেখান।
এরপরও বিভিন্ন সময় কথা বলতে বলতেই সিমলা বুঝতে পারেন পলাশ একজন শঠ, প্রতারক। তার ‘মানসিক সমস্যা’ রয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান তাকে।
বিচ্ছেদের নোটিশ পেয়ে পলাশ বহুবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানান সিমলা। বলেন, বারবার চেষ্টা করলেও পলাশের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি তিনি।
রাজেশ বড়ুয়া জানান, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পলাশের বিষয়ে জানতে সিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। কিন্তু মুম্বাইয়ে অবস্থান করায় তিনি তখন সময় দিতে পারেননি। দেশে ফিরে নিজ থেকেই সিমলা ফোন করার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। তদন্তের প্রয়োজনে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ময়ূরপঙ্খী ফ্লাইটটি (বিজি-১৪৭ ফ্লাইট) ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরই উড়োজাহাজটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। প্রায় ২ ঘণ্টার টান টান উত্তেজনার পর উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার অবসান ঘটে। কমান্ডো অভিযানে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী ব্যক্তি নিহত হন। পরে র‌্যাব জানায়, নিহত ব্যক্তির নাম মো. পলাশ আহমেদ। বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার পিরিজপুরে। বাবার নাম পিয়ার জাহান সরদার। পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এবং বিমান নিরাপত্তাবিরোধী অপরাধ দমন আইনে মামলা করে তা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ফ্লাইটে থাকা এক তরুণ বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। তার কিছু দাবিদাওয়ার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শোনানোর জন্য ফ্লাইটের ক্রুদের বলেন। একপর্যায়ে পটকা-জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া না হলে বিমানটি ধ্বংসের হুমকি দেন পলাশ। দুষ্কৃতকারী বোমাসদৃশ বস্তু দেখিয়ে বিমানের ককপিটে ঢুকতে চেষ্টা করেন। এ সময় তার কাছে বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখা যায়। পরে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদে জরুরি নির্গমন পথ দিয়ে নামানো হয়। ইতিমধ্যে বিমানটি ছিনতাইয়ের খবর দেওয়া হলে র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো এসে উপস্থিত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত ওই তরুণকে বিমান থেকে নামানো হয়। পরে দেখা যায় তিনি মারা গেছেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফরেনসিক পরীক্ষায় জানা যায়, পলাশের হাতে থাকা সেদিনের পিস্তলটি ছিল দেশে তৈরি প্লাস্টিকের খেলনা। গত ২৪ মার্চ কাউন্টার টেররিজমের একটি দল পলাশের বাবা পিয়ার জাহান, মা রেনু বেগম, চাচা দ্বীন ইসলাম, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।