পর্যটন সম্ভাবনার অপার সৌন্দর্য ধোপাছড়ি

320

পাহাড় নদীতে ঘেরা চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকা ধোপাছড়ি হয়ে উঠতে পারে পর্যটন এলাকা তথা ইকোপার্ক। চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত ধোপাছড়িতে ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা পাহাড়। ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্তে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, দক্ষিণে সাতকানিয়া, উত্তরে রাঙ্গুনিয়া। ইউনিয়নটির দক্ষিণ পার্শ্বে শঙ্খ নদী বয়ে যাওয়ায় পাহাড় নদীর মধ্যখানে হাতছানি দেয় মেঘ পাহাড়ের দেশের মত। ইউনিয়নের পুরো এলাকা জুড়ে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও মৌসুমী শাকসবজি। বনজ গাছগুলো সারিসারি দেখতে অপূর্ব লাগে।
১৪ হাজার ২ শত ৭৭ বর্গ একর এলাকার এই ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার লোকের বসতি রয়েছে। তৎমধ্যে পাহাড়ি, বাঙালি, রোহিঙ্গা, মগসহ বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করে থাকে। সবাই মিলে যেন একটি পরিবার। এ এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য একটি পুলিশের তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। চন্দনাইশ উপজেলার বিচ্ছিন্ন এ ইউনিয়নটির সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে শঙ্খ নদীতে ইঞ্জিনবাহী বোট। তাছাড়া সাতকানিয়া, কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক হয়ে শঙ্খের পাড়ে গিয়ে নদী পারাপারের মাধ্যমেও এ ইউনিয়নে যাওয়া যায়। সম্প্রতি বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী চৌকিদার ফাঁড়ি থেকে সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে ধোপাছড়ি যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা করেছেন। যা এ এলাকার মানুষের জন্য একটি অনন্য পাওয়া। ধনে ধান্যে পুষ্প ভরা আমাদের এ বসুন্ধরা। দেশাত্ববোধক এ গানটির সাথে কতটাই যথার্থ তা বোঝা যায় বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ দৃশ্যপটগুলো পরিদর্শন করলে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো পড়ে আছে অজস্র প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। সেগুলোতে পরিদর্শনে গেলে মন একবার হলেও নেচে উঠবে অপার আনন্দে। সেরকম একটি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের স্থান হচ্ছে চন্দনাইশ উপজেলার এ ধোপাছড়ি ইউনিয়ন। নামের সাথে ধোপাছড়ির মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে। নদী পাহাড় বেষ্টিত এ ধোপাছড়িকে দেখতে অন্যরকম লাগে। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে ঘেরা এ ধোপাছড়িতে প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য অকৃপণভাবে ঢেলে দিয়েছে। যা না দেখলে বোঝায় যায় না। বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম সেগুন বাগান গড়ে উঠেছে এ ধোপাছড়িতে। আর এ সেগুন বাগানগুলো আরো মহিমান্বিত করে তুলেছে ইউনিয়নকে।
চতুর্দিকে পাহাড় ঘেরা এ ধোপাছড়িতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। অথচ সামান্য একটু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে ধোপাছড়িতে গড়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র ও বোটানিকেল গার্ডেন। এক নাগারে ২ ঘণ্টার নদীপথে ধোপাছড়িতে আসা-যাওয়া একটি রামাঞ্চকর মুহূর্তও অনেকে অনুভব করেছেন। নদীপথে যেতে হলেও এ ধোপাছড়ির সৌন্দর্য্য এখনো ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। যারাই একবার নৌপথে ধোপাছড়িতে গেছেন তারাই বারবার যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সুন্দরবনের আদলে গড়ে উঠা ধোপাছড়িতে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট কোন দর্শনীয় স্থান না থাকলেও এখানকার সেগুন, গর্জন, গামারি, চাপালিশ, একাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান যে কারো মন কেড়ে নেবে প্রথম দর্শনে। এক কথায় বলা যায়, পুরো ধোপাছড়িটাই যেন একটি বোটানিকেল গার্ডেন। পাহাড়ের নিম্নাশে যেন সবজির ভান্ডার। কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা দায়িত্ব নিয়ে এ ধোপাছড়িকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুললে এটিও হয়ে উঠবে বিনোদনের বিশাল একটি কেন্দ্র।