পর্দা নামল অমর একুশে বইমেলার

15

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যস্ততার দিনগুলোতে সন্ধ্যা শেষে বইমেলায় ঢুঁ মারা, প্রাণের কতকথায় মেতে উঠা আড্ডা, পাঠক, লেখক-প্রকাশকের মিলনস্থলে রূপ নিয়েছিলো নগরীর কাজীর দেউড়িস্থ অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ। গতকাল ছিলো এমন আয়োজনের শেষ দিন। পর্দা নামল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত ২১ দিনব্যাপী বইমেলার। এবারের মেলায় ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রাম এম.এ. আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে বইমেলা মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কনসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ অংশগ্রহণকারী ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রকাশকদের মাঝে সনদ প্রদান ও সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ স্টলকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করতে হলে তাদের হাতে বই তুলে দিতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির যুগে বইয়ের জায়গা কেড়ে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নতুন প্রজন্মকে গড়তে হলে আমাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে তাদের হাতে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বইগুলো তুলে দিতে হবে।
মন্ত্রী আগামীতে এই বইমেলাকে আরো বড় পরিসরে আয়োজনের জন্য মঞ্চ নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সংযুক্ত করার পরামর্শ দেন। সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বই মানুষকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে বই ভ‚মিকা রেখেছে। মেয়র হিসেবে বীর চট্টলাবাসীর বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশে এই বইমেলার আয়োজন করেছি। আর আগামী বছর এ বইমেলার প্রাঙ্গণ আরো বড় করব। মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শ অনুসারে আগামী বছর বইমেলায় মঞ্চনাটকসহ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পরিধি বাড়াবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা এমপি বলেন, বইয়ের চোখে ইতিহাস দেখেন পাঠকরা। বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীনের মতো বইগুলোর মাধ্যমে পাঠকরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারছে, বুুঝতে পারছে তৎকালীন ঐতিহাসিক বাস্তবতা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। মেলা আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান আহব্বায়ক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি) আবদুল মালেক, কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধ‚রী, মো. আবদুস সালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহীন আকতার রোজী, রুমকি সেনগুপ্ত, হুরে আরা বেগম, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু), জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস প্রমুখ।
এবার মেলার অনুষ্ঠানমালায় ছিল নজরুল দিবস, মাতৃভাষা দিবস-২১ ফেব্রুয়ারি, লোক উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।