পরীক্ষকের ভুল পরীক্ষার্থীদের সাড়ে ৮১ লাখ টাকা মাশুল

47

পরীক্ষা শেষে খাতা মূল্যায়ন করেন পরীক্ষকরা। এরপরই ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষাবোর্ড। প্রকাশিত সেই ফলকে চ্যালেঞ্জ করে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন পরীক্ষার্থীরা। পুনঃমূল্যায়ন নয় পুনঃনিরীক্ষণেই প্রতিবার ফলাফল পরিবর্তন হচ্ছে। যার জন্য পরীক্ষার্থীকে প্রতি উত্তরপত্রের জন্য ১৫০ টাকা করে ফি দিতে হয়। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এ বছরের পুনঃনিরীক্ষণ আবেদনে ফি বাবদ প্রায় সাড়ে ৮১ লাখ টাকা দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। অর্থাৎ পরীক্ষকের ‘যোগ’ সংক্রান্ত ভুলের কারণে এ টাকা মাশুল হিসেবে গুণতে হয় পরীক্ষার্থীদের।
গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত হয় এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। প্রকাশিত সেই ফলাফলে সন্তুষ্ট হতে না পেরে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন ১৬ হাজার ৬৭৬ পরীক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থী ৫৪ হাজার ২৭৫টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছিলেন। প্রতিটি উত্তরপত্রের জন্য পুনঃনিরীক্ষণের ফি দিতে হয়েছে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ এতে পরীক্ষার্থীরা দিয়েছে ৮১ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা। গতকাল এই পনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। যেখানে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৩৬৫ পরীক্ষার্থীর। ফেল থেকে পাস করেছেন ২১ শিক্ষার্থী এবং নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৪ শিক্ষার্থী। এছাড়াও গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ২৯৭ জনের।
এটি শুধুমাত্র এই বছরের চিত্র নয়, প্রতিবছরই এভাবে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ হয়ে আসছে। ২০১৮ সালেও ১৭ হাজার ৭৪০ জন শিক্ষার্থী ৬১ হাজার ৬৯৯টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছিলেন। এতেও ৯২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫০ টাকা মাশুল দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন নির্ধারিত কলেজ শিক্ষকরা। প্রতিটি উত্তরপত্র মূল্যায়ন বাবদ পরীক্ষকরা পান ৩০ টাকা করে। অন্যদিকে পুনঃনিরীক্ষণের টাকা শিক্ষাবোর্ড পুনঃনিরীক্ষণের খরচ বাবদ ব্যয় করে। সাধারণত পুনঃনিরীক্ষণে উত্তরপত্রে কোনো প্রশ্নে নম্বর বাদ পড়েছে কি না, প্রশ্নভিত্তিক নম্বরের যোগফল, মোট নম্বরের যোগফল ও প্রাপ্ত নম্বরের বৃত্ত ভরাটে নিরীক্ষণ করা হয়। তবে কোনো প্রশ্নে কোনো ধরনের মূল্যায়ন করা হয় না। অর্থাৎ পরীক্ষকের যোগ সংক্রান্ত ভুলের কারণে পরীক্ষার্থীদের মোটা অংকের মাশুল গুণতে হয়। তবে এতে খাতা মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই।
পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে পরীক্ষার্থীরা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। সেইভাবে আমরা পুনঃনিরীক্ষণ করি। তারজন্য যা ফি নেওয়া হয়, সেগুলো সেই ইস্যুতেই খরচ করা হয়। তবে এখানে কোনো ধরনের পুনঃমূল্যায়ন করা হয় না। পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত চারটি বিষয় দেখা হয়। সেগুলো হল কোনো প্রশ্নের উত্তরে নম্বর বাদ পড়েছে কি না, প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর যোগ, মোট নম্বর যোগ ও প্রাপ্ত নম্বরের বৃত্ত ভরাটে ভুল হয়েছে কি না?
এই বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, শিক্ষকের উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় নম্বর যোগে ভুল বিষয়টা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এরজন্য প্রতিবারই পরীক্ষকদের শাস্তি দেওয়া হয়। ভুলের মাত্রার উপর কাউকে আজীবন বা বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তারপরও ভুলগুলো কমানো যাচ্ছে না। তার অন্যতম কারণ হলো, শিক্ষকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ড ও চরম মাত্রায় গাফিলতি। এটাকে আমি শুধু ভুল বলতে নারাজ, রীতিমত একটা অপরাধ। যখনই শিক্ষকদের সাথে আমার কথা হয়, বসা হয়, তখনই বিষয়টি নিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করি। কেননা আবেদন ফি দিতে হচ্ছে সেটা না হয় বাদই দিলাম। ফলাফল প্রকাশের পর একজন পরীক্ষার্থী ও তার পরিবারের যে মানসিক যন্ত্রণা, তার দায়ভার কি কোনো শিক্ষক নিতে পারবেন?
তিনি আরও বলেন, এমন কর্মকান্ডের কারণে শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা কমে যাচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। এটি একটি ‘শ্লো প্রসেস’, কিন্তু পরিণতি ভয়াবহ। প্রতিটি শিক্ষকের সন্তান রয়েছে, তাদের সন্তানও তো পরীক্ষা দেয়। এমন কাজ করার সময় তো নিজের সন্তানের কথা মনে রাখা উচিত।