আমাদের দেশের ঋতু পরিক্রমায় আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাস বর্ষাকাল। এ দেশে বর্ষা প্রায় আট মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে দেখা যায়। গ্রীষ্মকালের বৈশাখ মাসে কালবৈশাখির হাত ধরে বর্ষণ তথা ঝড়-বৃষ্টি শুরু। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষার চরিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করে। তখন হতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এদেশে সাগরে নিম্নচাপ সৃৃষ্টি হয়। কখনো এ নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়, আবার কখনো তা দুর্বল হয়ে ভারি বর্ষণ কিংবা হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক আবহাওয়ায় ফিরে আসে। এদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ঝড়-বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে অভ্যস্ত। চলতি বছর কালবৈশাখি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোঁবল মারলেও বৃহত্তর চট্টগ্রামে তার প্রভাব ছিল অপেক্ষাকৃত কম।
এ বছর বর্ষা মৌসুমে বেশ ক’টি নিম্নচাপ সাগরে সৃষ্টি হলেও ভয়াবহভাবে এতদ অঞ্চলের উপকূল অতিক্রম করতে দেখা যায়নি। তবে বর্ষায় বৃষ্টির পরিমাণ নিতান্ত কম হয়নি। বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে দু’মাস অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বর্ষার পর শরৎ ঋতু যায় যায় অবস্থা। শরৎকালে মাঝেমধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে দেখা গেছে। ২ অক্টোবর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বর্ষার মতো একটানা বৃষ্টি হয়েছে। মাঝেমধ্যে কোন কোন এলাকায় ঝড়োহাওয়া বয়ে গেছে। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় মধ্য অক্টোবরে বিদায় নিতে যাচ্ছে বর্ষা মৌসুম। প্রতিবেদক আবহাওয়া অধিদপ্তরের সম্ভাব্য আবহাওয়া বিষয়ক মন্তব্য বিশ্লেষণ করে আমাদের জানিয়েছে। আবহাওয়ার আগাম প্রতিবেদন শতভাগ সত্য নাও হতে পারে। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে এ মাসের শেষের দিকে এবং নভেম্বরে সাগরে অন্তত দু’টি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা বাস্তব রূপ লাভ না করুক এমন প্রত্যাশা আমাদের।
আগাম আবহাওয়া সংবাদ সত্য হলেও আমাদের করার কিছু নেই। প্রকৃতির উপর মানুষ এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। প্রকৃতির খেয়ালিপনায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে অবাক হবার কিছু নেই। আমরা দেখেছি কার্তিক মাসে ভারি বর্ষণসহ প্রবল ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল তা কার্তিক মাসে। তাছাড়া ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল এপ্রিল মাসে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৎসরের বৈশাখ হতে কার্তিক মাসের মধ্যে যেকোন সময় এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ঘটা সম্ভাব। তবে সুখের বিষয় হলো বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনগণকে এ বছর বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়নি। সামনে বর্ষা নেই বলে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির মোকাবেলা এখানকার জনগণকে করতে হবে না এমন নিশ্চয়তা কারো পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। সে কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগাম মন্তব্যের রেশ ধরে বলতে চাই- আশ্বিনের শেষে কিংবা আসন্ন কার্তিক মাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, খুলনাসহ উপক‚লীয় জেলাসমূহের জনসাধারণকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সতর্ক থাকতে হবে। দেশের প্রচার মাধ্যমে যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচার করা হয় তার গুরুত্ব অনুধাবন করে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে যেসব সর্তকতা তা যথাযথ পালন করতে হবে। জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক আগাম প্রস্তুতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মানুষকে যানমালের ব্যাপক ক্ষতি হতে অনেকখানি রক্ষা করতে পারে। আমরা আশা করবো আসন্ন হেমন্তে দেশের মানুষের জন্য বড় ধরনের কোন বিপর্যয় অপেক্ষা না করুক। কার্তিক মাসে ভারিবর্ষণের নজির এদেশে ঐতিহ্যগতভাবে রয়েছে। তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় প্রশাসন যথাসময়ে সতর্কতার সঙ্কেত দিয়ে জনগণকে সচেতন করবে। আর জনগণ সচেতনতার সাথে সম্ভাব্য দুর্যোগ ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। জনসচেতনতাই যেকোন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক যানমালের ক্ষতির অবস্থা হতে জনগণকে রক্ষা করতে পারে।