পরিশুদ্ধ সমাজই হোক সিয়াম সাধনার অঙ্গীকার

7

মহিমান্বিত রমজান বিশ্ব মুসলিমের দ্বারে এসেছিল মুমিন মুসলমাদের জীবনে পরিশুদ্ধতা, আত্মার পবিত্রতা ও চারিত্রিক পূর্ণতা দানের লক্ষ্যে। পৃথিবীতে মানুষের সীমিত হায়াতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে অনন্তকালের পাথেয় সংগ্রহ করে নিতে হবে। ইসলাম শুধু আখিরাতের জীবনের কথা বলে না, পার্থিব উন্নত জীবনযাপনের কথাও বলে। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রতিটি মুমিন বান্দা তাক্ওয়া অর্জন করে পার্থিব জীবন উন্নত করে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পাপপংকিলতা, কুচিন্তা, হিংসা বিদ্বেষ, লোভ-ক্রোধ, পরশ্রীকাতরতার মতো কুঅভ্যাসগুলো বিনাস করে উদারতা, ক্ষমা, মহত্ত¡, মানব কল্যাণ, সহমর্মিতা, ধৈর্য, কষ্ট ও সহিষ্ণুতাসহ যাবতীয় মহৎ গুণাবলী অর্জন করার প্রশিক্ষণ লাভ করা রোজার লক্ষ্য। মূলত সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন গঠন ও আল্লাহর নিষিদ্ধ কার্যাবলী ত্যাগ করার অনুশীলনের অভ্যাস রপ্ত করে। তাই পবিত্র রমজানের বিদায়ের প্রাক্কালে মুসলমানদের আত্মসমালোচনা করা দরকার, সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমাদের প্রকৃত আত্মশুদ্ধি অর্জন হলো কিনা? যদি হয়ে থাকে তবেই আমরা সফলকাম। আমরা সাফল্য অর্জন করেছি কিনা তা বুঝা যাবে যদি রোজার প্রকৃত শিক্ষা বাকি এগার মাস আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হয়। জীবন চলায় পরিবর্তন সাধিত হয়। সৎ গুণাবলী, পুণ্যকাজগুলো (নিয়মিত নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত) অব্যাহত থাকে এবং মন্দ স্বভাবগুলো ত্যাগ হয় তবেই। একমাস আমরা যদি মসজিদ মুখী হই, তেলাওয়াত ও সৎকাজে অভ্যস্থ হই তবেই আমরা সফলকাম।
গাউসুল আজম হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রা.) বলেছেন- এ মহিমান্বিত মাসের বিদায়ে ক্রন্দন কর, সালাম প্রেরণ করে উত্তম রূপে বিদায় জানাও। ওহে রমজান মাস, যে মাসে সিয়াম পালন, রাত জাগরণ ও কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, তোমাকে সালাম। হে গুনাহ মুক্তির মাস, তোমাকে সালাম। হে বরকত ও পূণ্যের মাস, তোমাকে সালাম। হে সিয়াম, তারাবিহ ও তাহাজ্জুদে অতিবাহিতকারী মাস তোমাকে সালাম। তোমার বিরহ আমাদের অসহ্য। তোমার দিন ছিল আমাদের জন্য সদ্কা দেওয়ার। রাতগুলো ছিল তেলাওয়াত ও সালাত কায়েমের। তুমি অতিশয় বরকতময় মাস। তোমার বদৌলতে মন-প্রাণ উজ্জ্বল হয়। আমাদের মসজিদগুলো তোমার দরুণ আবাদ হয়। ক্রমে প্রদীপগুলোর আলো সস্কুচিত হচ্ছে। আমরা যে তারাবিহ আদায় করতাম তা দূরে সরে যাচ্ছে। আমরা আবার নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছি। মু’মিন মুসলমান বান্দাদের উচিৎ আল্লাহর দরবারে অশ্রæ বর্ষণ করে মুনাজাত করা- আল্লাহ যেন আমাদের রোজা, এবাদত কবুল করেন। এভাবে প্রার্থনা করা- হে প্রভু দয়াময় আল্লাহ, রমজানের সিয়াম সাধনা ও এবাদতের বরকতে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন। আমাদের যাবতীয় বিপদ দূর করুন। আমাদের অন্তর কলুষমুক্ত করুন। দুর্ভাবনা মুক্ত করুন। দুষ্কৃতকারীদের দুষ্কর্ম ও ধোঁকা হতে নিরাপদ করুন। দুর্ভিক্ষের কবল হতে রক্ষা করুন। যতক্ষণ জীবিত থাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবগণের প্রতি মুহাব্বত কায়েম রাখুন। আমাদেরকে দোজখের আগুন হতে রক্ষা করুন। আমিন।