পরিবেশ রক্ষায়, পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন

39

সুপ্রতিম বড়ুয়া

বৃক্ষরোপণের উত্তম সময় হল জুন-আগস্ট। পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন (পমা) এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে। পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন (পমা) এর একঝাক সংগঠক শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতন করার মহান উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটে যাচ্ছেন। তাঁদের মুখ্য আন্দোলন আমাদের পুরো দেশ হোক সবুজে সবুজে বাংলাদেশ। তাঁদের আন্দোলনে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি থেকে বাদ যায়নি গ্রামভিত্তিক পরিকল্পনাও। এমনই একটি পরিবেশ সংগঠন, পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন ( পমা) তাঁদের একটাই ব্রত জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা। সংগঠনটি গঠনের পর থেকেই গ্রামের পরিবেশ রক্ষা, পুষ্টির চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রাণবৈচিত্র্যের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করে আসছে। এলাকায় প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে এবং গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সুন্দর করতে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিগত কয়েক বছর যাবত পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন (পমা) শিক্ষার্থীদের সাথে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণ ও অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণসহ পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে শিক্ষামূলক অধিবেশন আয়োজন করে আসছে।
পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন এর উদ্যোগে নতুন প্রজন্মকে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে স্থানীয়ভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় সংগঠনটি একটি আদর্শ ও সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির পাশাপাশি বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদন নিশ্চিতকরণে স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশীয় ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যাচ্ছে। সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্কুল ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ করা সহ পরিবেশ সচেতনতার কাজ করে যাচ্ছে। এই সচেতনতার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে নানা জাতের ফলের চারা এবং ঔষধি গাছ রোপণ করা শুরু করে দিয়েছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছে বৃক্ষ রোপণ ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। এক সময় তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ, বান্দরবন কোথাও গাছপালার কোন অভাব ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ইট ভাটা, ব্যাপক সুবিধাসম্বলিত উচ্চতর আবাসন নির্মাণে প্রতিনিয়ত বনভূমি উজাড় হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজন প্রাণের বৈচিত্র্যতা। পরিবেশ ও প্রাণ একটি অন্যটিকে আকড়ে ধরে টিকে থাকে এবং বিকশিত হয়। গাছপালা-লতাগুল্ম ও প্রাণ পরস্পর নির্ভরশীল। কিন্তু মানুষ এদের থেকে অন্য প্রজাতির প্রাণী এবং এদেরকে ক্রমাগতভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে পরিবেশ হচ্ছে বিনষ্ট এবং প্রকৃতি হচ্ছে বিরূপ। জলবায়ু তার পরিবর্তনের স্বাভাবিক গতি হারিয়ে দ্রæত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতিও প্রতিনিয়ত বিরূপ আচরণ করছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রকৃতির বিরূপ আচরণ মোকাবেলার অন্যতম উপায় হল পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃক্ষের সমারোহ ঘটানো। আর এজন্য আমাদের সকলকে বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। সকল শিক্ষার্থীদেরকে প্রতি বছর নিজ উদ্যোগে বেশি বেশি করে ফলের গাছ রোপণের আহবান জানান পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা যেন একযোগে প্রতি বছর একাজ করে সামাজিক আন্দোলন তৈরি করার আহবান জানান পমা। মানসম্মত শিক্ষার জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ। শহরাঞ্চলে স্কুল ক্যাম্পাসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির তেমন কোন সুযোগ না থাকলেও গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ। প্রতিটি স্কুলের রয়েছে বড় বড় মাঠ। এসব মাঠের চারিদিকে বৈচিত্র্যময় ফল, ফুল, কাঠ ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী বৃক্ষ রোপণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব মাঠের চারিদিক পতিত পড়ে থাকে। পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন এবং পরিবেশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ন্যায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা জনসংগঠনগুলো বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে স্কুল ক্যাম্পাস ও এলাকার পরিবেশ যেমন সুন্দর ও সংরক্ষিত হবে, তেমনি প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে।
লেখক: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট