পরিবেশ আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি

7

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে প্রশাসনের ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে উঠেছে ২৮টি ইটভাটা। রাঙ্গুনিয়ায় প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে পাহাড় ও ফসলি জমি। সাতকানিয়ায় জমির মাটি কাটার দায়ে ৪ জনের কারাদন্ড। এমন খবর পত্রিকান্তরে অহরহ। দেশে পরিবেশ আইন আছে, মন্ত্রণালয় আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, আছে প্রশাসন, কিন্তু দেশব্যাপী পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ চলছে তো চলছেই। এমন কাজে হয়তো দু’একজনের শাস্তির খবর যে পাওয়া যায় না তা নয়। যে পরিমাণে পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে সে পরিমাণে পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, পুকুর-দিঘি ভরাট, ফসলি জমি হতে মাটি উত্তোলন, ফসলি জমি ভরাট, নদী-নালা-খাল ভরাট ইত্যাদি কর্মকান্ড বন্ধ হবার মতো আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও শাস্তি হচ্ছে না। যার কারণে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে রয়েছে। পাহাড় কেটে, বন কেটে পরিবেশ নষ্ট করা তো দেদারচে হচ্ছে। তার উপর ফসলি জমিতে দোকান পাট, মার্কেট এবং আবাসিক এলাকা করে দেশের কৃষিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আমাদের দেশে যতটুকু বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন তা নেই। কিন্তু বন কেটে উজাড় করে বায়ু স্তরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়। এইসব পরিবেশের ক্ষতিকারক কর্মকান্ড বন্ধে দেশে আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগ বৈষম্য যেমন আছে তেমনি দুর্নীতির মাধ্যমে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমকে অনেক ক্ষেত্রে ধর্তব্য বিবেচনাও করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক আর ব্যক্তি বিবেচনায় হয় তো হাজার হাজার ঘটনার মধ্যে দু’একটার বিচার কিংবা শাস্তি হতে দেখা যায়। ‘আইন সবার জন্যে সমান’-এ কথা মুখে আছে, কিতাবে আছে মাত্র। বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম দেশে থামছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রশাসন কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতি এবং উদাসীনতার কারণে উল্লেখ্য অপরাধিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। দেশ ও দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা কোনভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য ধানি জমির ব্যবহার, পাহাড় কাটা, বন উজাড় চলছে কিন্তু পরিবেশ রক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। বনায়ন যতটুকু ঢাকঢোল পিটিয়ে হয় বাস্তবে তার কোন সুফল দেখা যায় না। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশে পরিবেশ রক্ষার যে কার্যক্রম তা আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে দেশ ক্রমে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। জলবায়ু স্বাভাবিক রূপে তার কাজ করছে না। অনাবৃষ্টি অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা এবং মানবদেহের রোগবালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশকে বসবাসের উপযোগী করতে এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে সততা, দায়বদ্ধতা ও নিষ্ঠার সাথে কার্যক্রম চালাতে হবে। সরকারি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে দেশে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে এমন কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ হতে আন্তরিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, খাল, বৃক্ষ, পুকুর, দিঘি, জলাশয় ইত্যাদি পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। মানুষ এই প্রকৃতি ধ্বংসের হুলিখেলায় মেতে উঠেছে। জেনে না জেনে, লোভে আর লাভের বশবর্তী হয়ে দেশের সাধারণ মানুষ এবং বিত্তশালীরা পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছে। এতদবিষয়ে সরকারের আইন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা, সততা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব। কেউ সঠিকভাবে এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের পরিবেশ রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে এমন ধারণা পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং দেশের সুনাগরিকদের।