পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন গেল মন্ত্রণালয়ে

21

সবুর শুভ

পরীর পাহাড় তথা আদালত ভবন ইস্যুতে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের তরফে (মহানগর) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গেল পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে। ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তর হয়ে এ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে গেছে। অনুলিপি দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের চিঠির প্রেক্ষিতে গঠিত পরিবেশ অধিদপ্তরের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন গতকাল রবিবার বিকেল ৫টায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের (মহানগর) পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী জানান, প্রতিবেদনে মূলতঃ পরীর পাহাড় তথা আদালত অঙ্গনে নতুন করে কোন স্থাপনা গড়ে না তোলার সুপারিশের বিষয়টি রয়েছে। আর কোন স্থাপনা গড়ে তোলা মানে এ পাহাড়কে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা। প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বললেন, নুরুল্লাহ নুরী। এ প্রতিবেদনে সকল পক্ষের বক্তব্য এবং পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের (মহানগর) বিভিন্ন সুপারিশও রয়েছে। আদালত অঙ্গনের বাস্তব অবস্থার অনুষঙ্গগুলো উল্লেখিত হয়েছে এতে।
ঠিক কত পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জানতে চাইলে জনাব নুরী বলেন, প্রতিবেদনটি বড়। তবে কত পৃষ্ঠার এটা ঠিক এখন মনে করতে পারছি না।
এদিকে একই ইস্যুতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের (মহানগর) মতামত সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ সোমবার এটাও দাখিল করার কথা জানিয়ে নুরুল্লাহ নুরী বলেন, এটা পরিবেশ অধিদপ্তরের মতামত সংক্রান্ত। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমি নিজে প্রস্তুত করেছি। সাথে অবশ্য আমার দুই সহকর্মীর সহায়তা নিয়েছি। এ প্রতিবেদনটি তিন পৃষ্ঠার।
কি থাকছে এতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত অঙ্গনে চোখে যেটা যেভাবে দেখেছি সেভাবেই উল্লেখ করেছি প্রতিবেদনে। স্থাপনা কোথায় কোথায়? খালি জায়গা কোথায় সব হুবহু তুলে ধরেছি। এমনকি আদালত এলাকায় কার কোন সাইনবোর্ড রয়েছে তাও তুলে ধরা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির বক্তব্য ও ভবন সংক্রান্ত ডকুমেন্টগুলোর কথা তুলে ধরেছি প্রতিবেদনে।
প্রসঙ্গতঃ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের চিঠির প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের তরফে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে প্রতিবেদন প্রস্তুতে নেতৃত্ব দেন উপ-পরিচালক (মহানগর) মিয়া মাহমুদুল হকসহ তিনজন। সার্বিক তদারকিতে ছিলেন নুরুল্লাহ নুরী।
এদিকে আইনজীবী সমিতির তরফে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের দিনই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হল। বর্তমান সময়ে তুমুল আলোচনার ইস্যু পরীর পাহাড় তথা আদালত ভবন এলাকায় আসছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। ৬ দিনের লম্বা এ কর্ম তৎপরতা শুরু হবে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব চট্টগ্রামে থাকবেন ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি পরীর পাহাড়ে আসবেন।
তথ্য মতে, পরীর পাহাড়ে আইনজীবী সমিতির দু’টি নতুন ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে পত্রিকায় সম্প্রতি বিজ্ঞাপন দেয়া হয় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের তরফে। এ নিয়ে আইনজীবীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর আইনজীবী সমিতি সাধারণ সভা করে।
এদিকে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টির মধ্যেই ১৪টি সেবা সংস্থার কাছে চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। এসব চিঠির মূল উপজিব্য হচ্ছে আইনজীবী সমিতির ওই দুই ভবনই। যেগুলো আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নির্মাণ প্রক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে। ১৪ চিঠির মধ্যে আদালত অঙ্গনে সংযোগ না দিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে নির্দেশনা দেয়ার তিনটি চিঠিও রয়েছে। গতকাল আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলন ডেকে ডিসির এ ধরনের কর্মতৎপরতাকে এখতিয়ার বহির্ভ‚ত বলে উল্লেখ করেছে।
জানা গেছে, ১৩০ বছরের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পরীর পাহাড় তথা আদালত ভবনে আইনজীবীদের জন্য দু’টি ভবন করা না করা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে যায় দু’পক্ষ। আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবীদের নতুন দু’টি ভবন নির্মাণের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ‘চেম্বার বরাদ্দ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি’ দেয়ার ৯ দিনের মাথায় স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সেই পাল্টাপাল্টি ও বিরোধের জল অনেকদূর গড়িয়েছে ইতোমধ্যে। জেলা প্রশাসনের তরফে সর্বোচ্চ তৎপরতার পাশাপাশি আইনজীবী সমিতিও তৎপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আইনমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন।
তিনি জানান, হাঙ্গামা চাই না। তবে বাধ্য করলে আমরাও আমাদের পথে হাঁটবো।
আদালত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন অফিসের সামনে সশস্ত্র আনসার মোতায়েন ছিল গতকাল সকাল থেকে। যাতে যেকোন অনাকাংখিত পরিস্থিতি এড়ানো যায়। তবে আদালত অঙ্গনে আইন শৃংখলার অবনতি হওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।