পরিবেশের ছাড়পত্র না পেলে হবে ইতিবাচক

20

 

প্রকল্প বাস্তবায়নকালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র না এলে সেটাকে অনাপত্তি ধরে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা যদি চুপচাপ বসে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে তাদের কিছু বলার নেই।’ বিষয়টি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার (১ জুন) অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন বলে বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দিতে দেরি হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের কাছে যেতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেরি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে ছাড়পত্র চাওয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে যদি তারা ছাড়পত্র না দেয়, বা কোনও সিদ্ধান্ত না দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে এ বিষয়ে তাদের কোনও আপত্তি নেই। এ ক্ষেত্রে ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আমরা এই বিষয়টিকে আইনি পর্যায়ে নিয়ে আসবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনও ক্যাটাগরির দিকে যাওয়া হয়নি। জেনারেলি একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বা যেকোনও কারণে ছাড়পত্র পেতে দেরি হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেরি কেন হবে। একটি রিজনেবল টাইম ধরে আপনারা এটি চাইবেন। এ সময়ের মধ্যে তারা ছাড়পত্র দিতে পারে। আপত্তি জানাতে পারে কিংবা রিভাইস করার পরামর্শ দিতে পারে। তারা চুপচাপ বসে থাকবে, জবাব দেবে না, এটা হবে না। যদি তারা চুপচাপ বসে থাকে, তাহলে ধরে নেবো তাদের কিছু বলার নেই। এর মানে মৌনভাব সম্মতির লক্ষণ।
প্রকল্প শুরু হওয়ার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে যদি কোনও আপত্তি আসে, সে ক্ষেত্রে কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ সরকারের অংশ, যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে তারাও সরকারের অংশ। কোনও প্রকল্প বাস্তবায়নকালে যদি এমন কোনও সমস্যা দেখা যায়, সত্যিই সেটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর থেকে তখনও যদি কোনও আপত্তি আসে, তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। নিশ্চয়ই আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এমন কোনও কিছু করবো না, যা পরিবেশের ক্ষতি হয়।
পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারী বলেন, অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তি চাওয়া হয়, কিন্তু সময় মতো অনাপত্তি পাওয়া যায় না। এ কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গাছ কাটলে গাছ লাগাতে হবে। এটা তিনি আগেও বলেছেন আজও বলেছেন।
কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো যেন বন্ধ না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেগুলোর দিকে নজর দিতে বলেছেন বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি বলেন, নদী, বড় নদীতে পানি প্রবেশ ও বের হওয়ার যে খালগুলো রয়েছে, এগুলো যেন বন্ধ না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। নদী এলাকায় কোনও প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, অনেক জায়গায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খালগুলো বন্ধ করা হয়। ¯øুইসগেটের নামে পানি চলাচলে বিঘœ ঘটানো হয়। পরে দেখা যায় ¯øুইসগেটগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। অযথা অনেক টাকা ব্যয় করা হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এসব বিষয় দেখতে বলেছেন।’
একনেকে ৯ প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ৫ হাজার ২৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ের ৯টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫ হাজার ৪ কোটি ৩৯ লাখ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ২৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (১ জুন) গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, ৬৪৩ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ (আর-৭৪৫) আঞ্চলিক মহাসড়কটির কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প; ২৩৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর নবসৃজিত নারায়ণগঞ্জ (৬২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অবকাঠামোগত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ’ প্রকল্প; ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র’ প্রকল্প; ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প; ৮৮ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প; ৩৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায় (ইরেসপো-দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প; তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ল²ীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদের পÐিতের হাট এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প; ২৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্প (পিজিসিবি) অংশ: মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং ৩০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভায় অংশ নেন। বাংলাট্রিবিউন