পরিবার ছাড়া বেড়ে ওঠা ৩ কন্যার জাঁকজমক বিয়ে

17

পূর্বদেশ ডেস্ক

মাত্র দেড় মাস বয়সে চট্টগ্রামের ‘ছোটমনি নিবাসে’ ঠাঁই হয়েছিল মর্জিনা আক্তারের। এসএসসি ও এইচএসসির গÐি পেরিয়ে তিনি এখন স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছেন। ২৩ বছরের ওই তরুণী বৃহস্পতিবার বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী ওমর ফারুকের সঙ্গে। পরিবার ছাড়াই বেড়ে ওঠা এমন আরও দুই তরুণীর জাঁকজমক বিয়ে হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায়। নগরীর অফিসার্স ক্লাবে গত বৃহস্পতিবার রাতে কনে বেশে দেখা গেছে মর্জিনা আক্তার (২৩), তানিয়া আক্তার (২০) ও মুক্তা আক্তারকে (২০)। খবর বিডিনিউজের
এ বিয়ের জন্য ছাপানো হয়েছে রঙিন আমন্ত্রণপত্র, বিলি করা হয়েছে বিশিষ্ট অতিথিদেরও। নগরীর রৌফাবাদে সমাজসেবা কার্যালয়ের কমপ্লেক্সে বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে তাদের গায়ে হলুদও। মর্জিনা আক্তার সমাজসেবা কার্যালয় পরিচালিত ছোটমনি নিবাস ও সরকারি শিশু পরিবারে বেড়ে ওঠেন। সেখানে থেকে সরকারি মহিলা কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার পাশাপাশি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নার্সিং অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, ‘আমরা অভিভাবকহীন অবস্থায় ছোটমনি নিবাস ও শিশু পরিবারে বেড়ে উঠেছি। সমাজসেবার স্যারেরা আমাদের নিজের মেয়ের মতো বড় করেছেন। তারাই আমাদের তিনজনের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা কখনো কল্পনা করিনি এমন হবে। নিজে হয়তো কখনও পারতাম না।’
সবার দোয়া কামনা করে তিনি বলেন, ‘স্নাতক পাস করে আমি সমাজসেবা বিভাগে চাকরি করতে চাই। আমার মতো অভিভাবকহীন শিশুদের সেবা করতে চাই।’
আরেক কনে তানিয়া আক্তার শিশু পরিবারে থাকার পাশাপাশি মা ও শিশু হাসপাতালে অ্যাটেনডেন্টের কাজ করেন। এসএসসি পাস করেছেন। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ থেকে। তার সাথে বিয়ে হলো বিআরটিসি এলাকার ফলমন্ডির সেলসম্যান হেলাল উদ্দিনের সাথে। হেলালের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার চরখিজিরপুরে।
তানিয়া বলেন, ‘আমাদের বাবা-মা নেই। বিয়ের মধ্য দিয়ে আমরা একটি ভালো পরিবার পাব আশা করি। সমাজসেবার স্যারেরা আমাদের আদর-যত্নে বড় করেছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
চার বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মুক্তা আক্তারকে আদালতের নির্দেশে আনা হয় ছোটমনি নিবাসে। বর্তমানে ২০ বছর বয়সী মুক্তার সাথে বিয়ে হচ্ছে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ নুরউদ্দিনের (২৬)। মুক্তাও একই প্রতিষ্ঠানে অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফরিদুল আলম বলেন, ‘ছোটমনি নিবাস ও সরকারি শিশু পরিবারে বিভিন্ন বয়সী অভিভাবকহীন শিশুদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত আমরা সহযোগিতা করে থাকি। তারা থাকার পাশাপাশি পড়ালেখা করে থাকে। ভালো ফল করলে তাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় পড়ালেখাও করানো হয়। এ মেয়ে তিনটিও ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের এখানে বড় হয়েছে। পরবর্তীতে বিশেষ অনুমতিতে তারা এখানে ছিল। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তিন মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।’
তাদের অভিভাবক নেই উল্লেখ করে ফরিদুল বলেন, ‘আমরাই তাদের অভিভাবক। চেষ্টা করি তাদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছে।’ বিয়ের পর তাদের তিন কন্যা ভালো থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবার সমাজের পরিত্যক্ত ও অভিভাবকহীন শিশুদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে শিশুদের পরিচয় পাওয়া গেলে যথাযথ অভিভাবক বরাবর ফিরিয়ে দেয়া হয়। অভিভাবকহীনদের সমাজসেবা অধিদপ্তর দায়িত্ব নিয়ে ভরণ পোষণের সঙ্গে পড়ালেখা করিয়ে স্বাবলম্বী করে থাকে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, তিনজনের প্রত্যেককে দুই ভরি স্বর্ণালংকার এবং দুই লাখ টাকা করে ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া প্রত্যেক যুগলকে একটি করে ফ্রিজ, টেলিভিশনসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রও দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, যাদের বিয়ে হচ্ছে, তাদের কারোরই পরিবার ছিল না। আমরা তাদের পড়ালেখা করানোর সাথে চাকরিরও ব্যবস্থা করেছি। পরিবারের বন্ধন ছাড়া বেড়ে ওঠা তিন মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে পরিবারে বাঁধার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন মেয়ে পরিবার খুঁজে পেল এবং সুখে সংসার করবে।’
বিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সিটি মেয়র, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তিন মেয়ের বিয়ের দাওয়াত প্রধানমন্ত্রীকেও দেওয়া হয়েছে। তিনি তাদের জন্য উপহার হিসেবে স্বর্ণালংকারও পাঠিয়েছেন।’