পরিবহন সেক্টর মানবিকতা ও আইন মানার সংস্কৃতিতে ফিরতে হবে

12

 

সরকার দেশের সড়কসমূহের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। সরকারের উদ্দেশ্য দেশের সড়ক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন। বর্তমানে দেশের সড়ক উন্নয়ন ব্যবস্থায় যে সকল পরিবর্তন এসেছে তা আজ হতে চল্লিশ বছর পূর্বে কেউ কল্পনাও করেনি। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম হন। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন, পদ্মাসেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগের অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন, দেশের প্রায় সকল জেলার সাথে রাজধানী শহর ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগের যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে সরকারের এ কৃতিত্বের কথা বাড়িয়ে বলা নয়। সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় ধারাবাহিক ভাবে দেশের সড়ক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। সরকার দেশের সকল অঞ্চলের মানুষের পরিবহন সুবিধা প্রদান করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশের মানুষ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নিরাপদে যাতাযাত ও পণ্যসামগ্রী দ্রæত পরিবহনের সুবিধা প্রদানই সরকারের সড়ক উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য। এ সেক্টরে সরকার সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করছে। দেশিÑবিদেশি অর্থায়নে সরকার সড়ক যোগাযোগসহ দেশের রেল যোগাযোগ, জলপথের যোগাযোগ এবং আকাশ পথে আভ্যান্তরিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সব কিছুর উদ্দেশ্য দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন। যোগাযোগা ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি।
দেশে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের নিকট হতে সাধারণ জনগণ যে পরিমাণ সেবা পাওয়ার কথা তা থেকে দেশের জনগণ বঞ্চিত। এর পেছেনে যানবাহন মালিক সমিতি এবং যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি দায়ী। তার সাথে যুক্ত রয়েছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সদস্য। সড়ক পরিবহন সংক্রান্ত সরকারি যে সকল আইন কানুন রয়েছে তা সড়ক পরিবহন সেক্টরে কার্যকর নেই বললেই চলে। দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরের দুর্নীতি, অনিয়ম, বিআরটিএ’র নিয়মনীতি কার্যকর ভাবে মেনে দেশের পরিবহনগুলো সড়কে চলতে দেখা যায় না। পরিবহন সেক্টরের বড় মাফিয়া হলো মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন। তারা সরকারের সাথে যখন বসে তখন সব আইন মেনে সড়কে গাড়ি চালানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু কার্যত দেখা যায় সরকারি রোডপারমিট আইন, ট্রাফিক আইন, পণ্যপরিবহনের নিয়মনীতি, এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স আইন অহরহ লঙঘন করে সরকারি রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে চলছে। অসাধু কিছু পুলিশ ও ট্রাফিক এদের সাথে দুর্নীতির ভাগিদার হচ্ছে। যার ফলে ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে চলছে অহরহ। অদক্ষ চালকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষত দুর্ঘটনার জন্য সড়ক আইন ও যাত্রী পরিবহন আইনের লঙ্ঘন বেশি দায়ী।
গণ-পরিবহন সেক্টরে সাধারণ যাত্রীরা বিচিত্রি ভাবে হয়রানির শিকার। রিক্সা, অটোরিক্সা, মিনিবাস, বাস, দূরপাল্লার যানবাহনসহ সবধরনের যানবাহনের ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত আইন প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করছে যানবাহন মালিক ও শ্রমিকরা। নানা অজুহাতে তারা যাত্রী সাধারণের নিকট হতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রী হয়রানি সমগ্র দেশে অসহনীয় পর্যায়ে চলছে। মাঝে মধ্যে মোবাইল কোটের মাধ্যমে তাদের দমনের চেষ্টা করলেও তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। কেননা সরকারি ম্যাজিস্ট্রেটরা চলে যাবার সাথে সাথেই তারা পূর্বের দুর্নীতি, অনিয়ম এবং যাত্রী হয়রানি সচল রাখছে। বিশেষত সন্ধ্যার পর মোবাইকোর্ট থাকে না। তখন বেপরোয়া ভাবে যাত্রী হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে গাড়ি শ্রমিকরা লিপ্ত হয়। প্রতিবাদ করলে তারা গাড়ি না চালিয়ে যাত্রীদের হয়রানির মুখোমুখি হতে বাধ্য করে। গাড়ি শ্রমিকদের কাছে দেশের যাত্রী সাধারণ জিম্মি। এ অবস্থা হতে উত্তরণ খুবই জরুরি।
বিগত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা বিনা ঘোষণায় গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়। যা দৈনিক পূর্বদেশসহ স্থানীয় পত্রিকাসমূহে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ পেয়েছে। চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে প্রতিদিন নানা অজুহাতে একশ্রেণির মালিক-শ্রমিকদের চাঁদাবাজি চলে। মহানগরীর অলংকার মোড় থেকে ৪ জন চাঁদাবাজকে র‌্যাব আটক করায় তারা অঘোষিতভাবে গণপরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রাখে। যার জন্য শ্রমিক ও মালিক সংগঠনই দায়ী। সমগ্র চট্টগ্রামের কর্মমুখী মানুষ, স্কুল-কলেজমুখী শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিকদের এই হয়রানির জন্য সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন দায়ী। তারা একদিকে বলছে ধর্মঘট ডাকেনি। অন্যদিকে গোপনে গাড়ি চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা করেছে এতে সন্দেহ নেই। আর তারা চাঁদাবাজদের তাদের লোক দাবি করায় একথা স্পষ্ট যে, এদের আটক করার কারণে ওইদিন হঠাৎ করে গণপরিবহন বন্ধ করে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকারে পরিণত করেছে। এভাবে যারা কারণে-অকারণে যাত্রীদের হয়রানি ও দুর্ভোগের মুখোমুখি করে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা প্রয়োজন। পরিবহন সেক্টরকে স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসনসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।