পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার নেতৃত্বে চসিকের উচ্ছেদ অভিযান

26

নিজস্ব প্রতিবেদক

নালার অস্তিত্ব নেই। খুঁজতে গিয়ে বিরানির ডেকের নিচে সন্ধান মেলে নালাটির। টাইলস বাঁধিয়ে নালার উপর দোকান নির্মাণ করা হয়। তার উপর হাজী বিরানির ডেক, মোবাইল রিচার্জের দোকান, রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে। এমন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মিরা। হামলার মুখে তারা উচ্ছেদের জন্য নিয়ে যাওয়া বুলডোজার ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল শনিবার দুপুরে চকবাজারের গুলজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী কর্মীরা গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চকবাজারের গুলজার মোড়ে ফুটপাতের ওপর স্থাপিত দোকানের সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙা শুরু করেন। তখন বিদ্যুতের একটি তার ছিঁড়ে আগুন ধরে যায়। এতে এলাকায় একদিকে আতঙ্ক ছড়ায়, অন্যদিকে অবৈধ দখলদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাদের সঙ্গে চসিকের কর্মিদের প্রথমে কথা কাটাকাটি, এরপর শুরু হয় হামলা। একপর্যায়ে চসিকের লোকজন বুলডোজারসহ উচ্ছেদে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম ফেলে চলে যেতে বাধ্য হন। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে আগুন নেভায়।
তবে উচ্ছেদ অভিযানের সময় চসিকের কর্মীদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ ছিল না। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা সহজেই আতঙ্ক ছড়িয়ে সাধারণ লোকজনকে ক্ষুব্ধ করে তোলেন। এরপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ও চসিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে পুলিশ বিক্ষুব্ধ লোকজনকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন। চসিকের সরঞ্জামগুলো এরপর নিয়ে যাওয়া হয়।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, শুধু চকবাজার না কাজীর দেউড়ি, দামপাড়া ওয়াসা মোড় থেকে জহুর আহম্মদ চৌধুরীর বাড়ির পল্টন রোডসহ চট্টেশ্বরী রোডের দুইপাশে উচ্ছেদ করা হয়েছে। অফিসিয়ালি দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গুলজার মোড়ে এসে নালা খোঁজে পাচ্ছি না। পরে দেখি বেশ কয়েকটি দোকান নালা দখল করে টাইলস লাগিয়ে দোকান বানিয়েছেন। এগুলো ভেঙে নালা বের করতে গেলেই বিপত্তি বাঁধে। ইয়াছিন নামে একজন লোকজন নিয়ে আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরা এ ঘটনায় মামলা করতে চেয়েছিলাম। পরে মেয়রের নির্দেশে করা হয়নি।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি ফেরদৌস জাহান জানান, উচ্ছেদ যতই নিয়মিত কাজের অংশ হোক, পুলিশ ছাড়া যাওয়াটা ছিল ভুল। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। দুইপক্ষকে নিয়ে একটি সমঝোতার চেষ্টা করি।
ফুটপাতে উচ্ছেদ নিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ফুটপাত বানানো হয় মানুষ হাঁটার জন্য, দোকান বসিয়ে ব্যবসা করার জন্য নয়। হকাররা ফুটপাতে বসে ভাসমান ব্যবসা করে। দখল করে তো প্রভাবশালীরা। সোজা কথা যে যত প্রভাবশালী হোক না কেন ফুটপাত ছাড়তে হবে। পানি চলাচলের নালা দখল করলেও ছাড়তে হবে। পরিচ্ছন্ন বিভাগকে অফিসিয়ালি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সেভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি আরও বলেন, হকারদের পুনর্বাসন করলে ফুটপাত দখলমুক্ত হয়ে যাবে না। আগেও হয়নি। ৭২ সাল থেকে নগরে দেখছি। হকার মার্কেট হয়েছে কিন্তু হকারমুক্ত কি হয়েছে, হয়নি। তাই যেসব ফুটপাতের পাশে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা রয়েছে সেখানে হকারদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। বায়েজিদ-শেরশাহ এলাকায় করা হচ্ছে। আগ্রাবাদে ফুটপাত থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেখানে ফুটপাতের পাশে খালি জায়গা তাদের ব্যবসা করতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। তবে কোনোভাবে ফুটপাত সড়কে সহ্য করা হবে। হকারদের সামনে রেখে অনেক প্রভাবশালী ফুটপাত দখলে সাথে যুক্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।