পরিকল্পনার ত্রুটি সারাতে আলাদা প্রকল্প

124

এম এ হোসাইন

টেকসই যোগাযোগ অবকাঠামো বাড়াতে সমুদ্র তীরবর্তী বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণে আউটার রিং রোড প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এক সড়কে বিমানবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গাড়ির চাপ থাকবে। আবার বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্পও এই সড়ককে ঘিরে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তিনটি ফিডার রোডের মাধ্যমে শহরের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে প্রকল্পটিতে। প্রকল্পের শেষার্ধে এসে জানা গেলে এতো গাড়ির চাপ সামলাতে অক্ষম প্রকল্পটি। তাই নেয়া হচ্ছে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো একটি প্রকল্প। যদিও সিডিএ’র দাবি, কয়েক বছরের চাপ সামাল দেয়ার সামর্থ্য আছে সড়কটির।
বে-টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু টানেল কিংবা নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এসব গাড়ির চাপ পড়বে আউটার রিং রোডের ওপর। এত গাড়ির চাপ চার লেনের সড়কটির পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। আবার পরিকল্পিত সংযোগ, প্রবেশ কিংবা নির্গমন কাজের সমন্বয় না থাকায় সড়কটিতে যানজটসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। শুরুতে এসব মেগা প্রকল্পগুলোকে বিবেচনায় আনা গেলে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে শতভাগ সুফল পাওয়া যেতো। প্রকল্পের শেষ দিকে এসে বড় প্রকল্পগুলোকে পরিকল্পনায় এনে নতুন করে প্রকল্পটি পরিমার্জন, পরিবর্তন ও সংশোধন করার পরিকল্পনা করছে সিডিএ। আউটার রিং রোডকে আট লেনের সড়কে রূপান্তর করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় নতুন করে আরো চার লেনের সড়ক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সিডিএ।
সিএমপির উপকমিশনার (ভূ-সম্পত্তি ও উন্নয়ন) এসএম মোস্তাইন হোসেন বলেন, সড়কটি দিয়ে প্রচুর গাড়ি চলাচল করছে। বে-টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু টানেল কিংবা নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এসব গাড়ির চাপ পড়বে আউটার রিং রোডের ওপর। এত গাড়ির চাপ চারলেনের সড়কটির পক্ষে বহন সম্ভব নয়। সে কারণে আমাদের ট্রাফিক বিভাগ সিডিএ সহ অন্য সংস্থাগুলোকে বিষয়টি অবহিত করেছে।
একই সংযোগস্থলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বন্দরের বে-টার্মিনাল, টানেল প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। আবার সীতাকুÐ পর্যন্ত রিং রোড বৃদ্ধি করা হলে মিরসরাই ইকোনমিক জোনসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গাড়ির বড় একটি চাপ পড়বে রিং রোডের ওপরে। সুনির্দষ্ট পরিকল্পনার অভাবে তখন ট্রাফিক সংকট দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কা করে আসছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ট্রাফিক বিভাগ থেকে সিডিএ সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে জানানো হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে এতো গাড়ির চাপ সামলানো রিং রোডের পক্ষে সম্ভব নয় বলে সিডিএও স্বীকার করে। আর এজন্য রিং রোডকে আট লেনে প্রশস্ত করার বিকল্প নেই বলে মনে করছে সিডিএ। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রিং রোডে বড় ধরনের যানজট লেগে থাকতে পারে। কারণ দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে আরো কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু টানেলের নির্মাণ কাজ ২০২২ সালে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালে এবং বন্দরের বে-টার্মিনালের কাজ ২০২৪ সালে শেষ হতে পারে। ফলে এসব প্রকল্পের চাপ যখন শুরু হবে তখন সড়কটির যানজটসহ নতুন জটিলতায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আউটার রিং রোডের ভবিষ্যৎ যানজটের কথা চিন্তা করে আমরা ফেজ-২ হাতে নিয়েছি। বিমানবন্দরের চাপ, টানেলের সংযোগ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ, বন্দরের টার্মিনাল সব কিছু মিলে প্রচুর যান চলাচল হবে। ট্রাফিক বিভাগের সাথে আলোচনা করেই আমরা সড়কটি বড় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া মিরসরাই ইকোনমিক জোনের কারণে এ রোডটি আমরা সীতাকুন্ড পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ের রোডের সাথে সার্ভিস রোড হবে। ইপিজেড পর্যন্ত চার লেনের এবং ইপিজেডের পর থেকে দুই লেনের সার্ভিস রোডটি হবে। সবগুলোর সাথে ইন্টারকানেকশন হবে। এখন আপাতত যান চলাচল সমাল দেয়া যাবে। আগামী দশবছর পরে যে চাপ হবে সেটা সামাল দেয়ার জন্য দ্বিতীয় ফেজের প্রকল্প আমরা পাঠাচ্ছি। দুয়েকমাসের মধ্যে আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ে তুলবো।
উপক‚লীয় বাঁধ শক্তিশালী করা, নগরীতে যানজট কমানো, আবাসন-বাণিজ্য ও পর্যটন উৎসাহিত করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আউটার রিং রোড প্রকল্প হাতে নেয় সিডিএ। প্রকল্প নেয়ার সময় এটি কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। ২০১১ সালের জুলাইয়ে আউটার রিং রোড প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর করে সিডিএ। সেই অনুষ্ঠানে সিডিএ’র তখনকার চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেছিলেন, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে। পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী পর্যন্ত ১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণে তখন প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। জুলাইতে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। সেসময় সংশোধিত ব্যয় নির্ধারিত হয় এক হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। তখন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুন। এরপর ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় বেড়ে হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৯ সালের জুন। শুরুতে ঢেউ প্রতিরোধক দেয়াল না থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৩০ কোটি টাকা। তাতেও প্রকল্পটি সমাপ্তির মুখ দেখেনি। এর পর আরো দুই দফা খরচ বাড়ানো ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন এই প্রকল্পের মেয়াদ আরো ৬ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের খরচ আরো ১০.২৩ শতাংশ বা ২৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে বাস্তবায়ন ব্যয় ২ হাজার ৬৭৪ কোটি ২৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার বিষয়টি অনুমোদন পায় গতবছর একনেকে। কাজের অগ্রগতিতে দেখা যায় প্রকল্পটির ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধের উপর ১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড। চার লেনের সড়কটি চওড়ায় ৮৪ ফুট। প্রকল্পের ত্রæটিগুলো সংশোধন-পরিমার্জনের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ত্রুটি সংশোধন করতে চায় সিডিএ।