পরস্পরকে দুষছেন ট্যানারি মালিক ও আড়তদার

71

কোরবানির পশুর চামড়া জাতীয় সম্পদ। কারসাজিতে এবার সেই জাতীয় সম্পদের মূল্য যেমন ্র্রমিলেনি, তেমনি নষ্ট হয়েছে অনেক চামড়াও। যার মধ্যে লক্ষাধিক চামড়ার স্থান হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে। চামড়ার ব্যবসা করে অনেকে হারিয়েছেন পুঁজি। পুঁজি হারানো এসব ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের কারসাজি বলে অভিযোগ করলেও আড়তদাররা সে কারসাজির দায় চাপাচ্ছেন ট্যানারি মালিকদের ওপর। চামড়া ব্যবসায় এ ধসের জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা পরস্পরকে দুষছেন।
জানা গেছে, চামড়া শিল্প নিয়ে প্রতিবছর নানা কারসাজি হয়ে থাকে। ট্যানারি শিল্পের কাঁচামাল চামড়া সংগ্রহের জন্য সরকার নানা সুযোগও দিয়ে থাকেন ট্যানারি মালিকদের। এতো কিছুর পরও প্রতিবছরই অভিযোগ উঠে চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ার। এবার সেই দাম ঠেকেছে একেবারে সর্বনি¤œ পর্যায়ে। এমনকি বিনামূল্যে চামড়া নেওয়ার মানুষও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার কারণে লক্ষাধিক চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে যায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। পঁচে যাওয়ায় এসব চামড়ার স্থান হয় ময়লার ভাগাড়ে। আড়তদারদের কারসাজিতেই চামড়া শিল্পের এমন ভয়াবহ বিপর্যয় বলে দাবি করে আসছেন ফড়িয়া বা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
আড়তদারদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের কাছে জিম্মি তারা। অবশ্য কে কার কাছে জিম্মি সেটা এখনো পরিষ্কার না হলেও একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট পুরো চামড়া শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা প্রথমদিকে মনে করেছিলাম রাস্তায় চামড়া রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। পরে জানলাম এগুলো ফেলে চলে গেছেন তারা। কোনো মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়াগুলো পঁচন ধরে গন্ধ বের হতে শুরু করে। এ অবস্থায় প্রায় এক লক্ষ ১৫ হাজার পঁচা চামড়া আমরা সরিয়ে নিই। চামড়ার দাম না পাওয়াতে তারা এসব চামড়া ফেলে যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আছে, চামড়া নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট বা কারসাজি থাকলে সেটা তারা খুঁজে বের করবেন।
চামড়া দ্রæত পঁচনশীল হওয়ার কারণে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সংরক্ষণ করতে হয়। ফড়িয়া বা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তাই কোরবানির পশুর চামড়া দ্রæত আনা হয় আড়তে। আড়তে আনা চামড়াগুলো সংগ্রহ করে তা লবণজাত করেন আড়তদাররা। এবার চামড়ার দাম না থাকায় আড়তে প্রতিবারের সেই রমরমা অবস্থার দেখা মিলেনি। ফড়িয়ারা চামড়া নিয়ে আসলেও আড়তে ছিলো না কেনার লোক। চামড়ার দাম দিনের শেষ সময়ে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতিপিস ১০ টাকায়। এতে মনের ক্ষোভে ফড়িয়ারা রাস্তায় চামড়া ফেলে প্রতিবাদ জানান। প্রায় লক্ষাধিক চামড়া রাস্তার পাশেই পঁচন ধরে। একদিন পর সেগুলো সরিয়ে নেয় সিটি কর্পোরেশন। নগরীর চামড়ার প্রধান বাজার হামজারবাগ, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পঁচা চমড়া সরিয়ে নেয় কর্পোরেশন।
চট্টগ্রাম বৃহত্তর কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, ট্যানারি মালিকরা আমাদের জিম্মি করে রেখেছে। আমরা এখন সর্বহারা হয়ে গেছি। অনেক মাদ্রাসার চামড়া পঁচে গেছে। এ দায় ট্যানারি মালিকদের নিতে হবে। আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে বসে আছে। ঢাকায় একশর উপরে ট্যানারি আছে। তারা আমাদের কাছ থেকে চামড়া নিয়ে বছরের পর বছর বকেয়া রাখে।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতিভুক্ত আড়তদার আছেন ১১২ জন। এর বাইরে আরো প্রায় দেড়শ জন আড়তদার কাঁচা চামড়া সংগ্রহের সাথে জড়িত আছেন। এবার কোরবানিতে ৫ লাখ গরুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে তিনলাখ চামড়া পানির দরে আড়তদাররা সংগ্রহ করলেও বাকি দেড় লাখ চামড়া চলে যায় আবর্জনার ভাগাড়ে। এ অবস্থায় জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সরকার চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত আরও আগে নিলে বিপুল চামড়া রক্ষা পেতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।