পরমাণু শক্তির কাতারে বাংলাদেশ আলো, নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত হোক

1

 

অবশেষে বহু কাক্সিক্ষত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (আরএনপিপি-পারমাণবিক চুল্লি­পাত্র) স্থাপনের কাজের সূচনা হল গত রবিবার। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন। এ পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য আরেকটি মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা এ দুঃসাহসী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতাকে স্বাগত জানাই। অভিনন্দন জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আশা করি, এ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র যে লক্ষ্যে স্থাপন করা হচ্ছে, সেই লক্ষ্যপূরণে সরকার বরাবরই সজাগ থাকবে। উন্নয়ন ও শান্তির বাইরে এর বিকল্প ব্যবহার হবে না-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের। উল্লেখ্য যে, ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আমলে রূপপুরে পরামাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানা গেলেও অর্ধশত বছরে শুধু পরিকল্পনা ও সমীক্ষার অনুমোদনের মধ্যেই আটকে ছিল এ প্রকল্প। সর্বশেষ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ প্রকল্প গ্রহণ করে এবং রাশিয়ার সাথে চুক্তি করে বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নেন। রবিবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (আরএনপিপি-পারমাণবিক চুল্লি­পাত্র) স্থাপনের কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, পরমাণু শক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আজকে জায়গা করে নিতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আজকে স্থান করে নিল, সেটা শান্তির জন্য। পরমাণু শক্তি আমরা দেশের শান্তির জন্য ব্যবহার করব। তিনি বাংলাদেশকে আর যেন কখনও পিছিয়ে পড়তে না হয়, এদেশের ওপর আর কখনও যেন কোন ‘শকুনির থাবা’ না পড়ে, বাংলাদেশের এই উন্নতি এবং অগ্রগতি যেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যায় সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এবং নিরাপত্তা ও শান্তির লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে তাঁর সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। এসময় শেখ হাসিনা তার সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, এই রিএ্যাক্টর বসানোর জন্য মাটি তৈরি করা থেকে নদী ড্রেজিং অর্থাৎ রাশিয়ার ভলগা থেকে পদ্মা আমরা পাড়ি দিয়েছি। কাজেই এটাও আমি মনে করি যে, ভবিষ্যত ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আরও একটি আলোর দুয়ার খুলে গেল। তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে, ইতোমধ্যে আমরা সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছি। ২০২৩ সালে আমাদের প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি আরও ত্বরান্বিত হবে, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, এই সময়ে আমরা এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম, আমরা বিশেষ করে রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করলাম। যেটা সত্যিই আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। পাশাপাশি, ২০৪১ সালের মধ্যে এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশকেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু, এখানেই থেমে গেলে চলবে না, ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ব।
ঊলা অপেক্ষা রাখেনা যে, পারমাণবিক চুলি­পাত্র বসানোর এ ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই কেন্দ্রের যে যন্ত্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তার মূল কাঠামো হচ্ছে এই বিশেষ যন্ত্র, পারমাণবিক চুল্লি। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হৃদপিন্ড বলা হয়।