পবিত্র ১০ মাঘ ও এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট প্রসঙ্গে

26

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

 

আগামীকাল নিবিড় স্মরণযোগ্য মর্যাদার দিন ১০ মাঘ ২৪ জানুয়ারি ২০২৩। সময়ের আবর্তনে প্রতি বৎসর এই দিনটি উপমহাদেশে সুফিতাত্তি¡ক-আধ্যাত্মিক পবিত্রতম দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অসাম্প্রদায়িকতা-মানবিকতার উর্বর চারণভূমি এই বাংলায় আধ্যাত্মবাদের সূফিতাত্তি¡ক দর্শনের একমাত্র ত্বরিকার সূচনাপর্ব ছিল প্রায় একশত ষোল বছর আগে। চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার দরবার শরীফ এবং এই অনন্য দর্শনের মহান প্রবক্তা ছিলেন আকাশচুম্বী উঁচুমার্গের সাধক হযরত গাউছুল আযম মৌলানা শাহ্সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভান্ডারী (কঃ)। আগামীকাল তাঁর স্মরণে ১১৭ তম ওরশ মোবারকের অনন্য সাধারণ দিন। শুধু বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নয়; উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-নানা প্রান্ত থেকে এই ওরশ শরীফে যোগ দিতে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাবেশ দিনটিকে বিশেষ মহিমান্বিত করে তোলে। প্রায় তিন মাস পূর্বেই দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রাণবন্ত হয় পুরো চট্টগ্রাম। তাঁরই প্রপৌত্র শাহানশাহ হযরত জিয়াউল হক মাইজভান্ডারীর (কঃ) নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট কর্তৃক যেসব প্রগতিশীল-সৃজনশীল-মননশীল-মানবিক কর্মকান্ডের সমন্বয়ে মাইজভান্ডারী দর্শনের মৌলিকত্ব প্রচার-প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়; তা সত্যিই অপূর্ব ও অসাধারণ। এই অভূতপূর্ব কর্মকৌশলে যাঁর অপরিসীম মেধা-প্রজ্ঞা-চিন্তা-চেতনা-ধ্যান-ধারণা কার্যকর; তিনি হচ্ছেন নির্লোভ-নির্মোহ-উচ্চশিক্ষিত এক মহান জ্ঞান-আধ্যাত্মিক মানস শাহসুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান (মঃজঃআঃ)।
উল্লেখ্য ট্রাস্টের সার্বিক সহযোগিতা-পরিচালনায় দেশের শিশু-কিশোরদের হৃদয়ে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনার সঞ্চারণে বিগত ১৫ বছর যাবৎ যে শিশু-কিশোর মেলার আয়োজন করা হচ্ছে; তা ইতিমধ্যেই নবতর আবেগ-ধার্মিকতার প্রতীক হিসেবে সর্বত্রই সমাদৃত। প্রায় মাসব্যাপী বিভিন্ন স্কুল প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উপস্থিতিতে রবীন্দ্র সংগীত-নজরুল গীতি-চিত্রাঙ্কন, হামদ-নাত-পবিত্র কোরআন তেলওয়াত, মাইজভান্ডারী-দেশাত্মবোধক গান-আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতাসহ নানা ধরনের স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিজ্ঞ-খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের বিবেচনায় প্রতিযোগিতার নির্ধারিত মানদÐে উত্তীর্ণ প্রতিযোগীদের বিশেষ একটি দিনে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এই মাসে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী সমাবেশে সম্মানিত প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম ১২ দিনব্যাপী বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক-মনস্তাত্তি¡ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শিরোনামে সেমিনার আয়োজন। শিক্ষক সমাবেশ-আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি-মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে পরিত্রাণসহ তাৎপর্যপূর্ণ এসব অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক-বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে অনবদ্য প্রাণস্পন্দন নির্মিত হয়। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ হাদিয়ামুক্ত ওরশ-স্বাস্থ্যক্যাম্প-প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রদর্শনসহ এতসব কর্মকাÐে অবশ্যই মহান ¯্রষ্টার অপার কৃপায় উজ্জীবিত মাইজভান্ডার দরবার শরীফের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা প্রতিভাত। প্রসিদ্ধ হক মঞ্জিল ছাড়াও মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সম্মানিত আওলাদগণ পরিচালিত অন্যান্য মঞ্জিলেও বিপুল সংখ্যক অনুষ্ঠানাদি পবিত্র ১০ মাঘকে ঐশ্বর্য্য-কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ধার্মিকতা-মানবকল্যাণের মাইজভান্ডারী দর্শনকে উঁচুমাত্রিকতায় সমাসীন করে।
বাংলার সমাজ সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনায় এটি সুস্পষ্ট যে, প্রাচীন বাংলা ও পরবর্তী বিবর্তন প্রবাহে মূল-প্রান্তিক জনপদ ছিল নানামুখী ধর্মীয় কৃষ্টি-বিশ্বাস-আচার-আনুষ্ঠানে বিভক্ত। খ্রীস্টপূর্ব ১৭৫০ বা এর কাছকাছি সময়ে আর্যদের ভারত আগমনের বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত। প্রথমে রাঢ়ে এবং পরে বরেন্দ্র অঞ্চলে এদের বসতি স্থাপনের আগেও এ অঞ্চলে অষ্ট্রিক, দ্রাবিড়সহ বিভিন্ন নৃ-তাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। ধারাবাহিকতায় সেমিটিক ও মধ্য এশিয়ার লোকদের আগমন ঘটলেও আর্যদের প্রচলিত সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ বহুলাংশে ছিল অপরিবর্তিত। এ অঞ্চলে খ্রিস্টীয় ৮ম শতকের শুরুতে মুসলমানদের আবির্ভাব-প্রবহন সময়কালেও হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সকল ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরাজিত ছিল অপূর্ব ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির নিগূঢ় বন্ধন। ফলশ্রæতিতে হিন্দু বা মুসলিম সংস্কৃতি আলাদা পরিচয় বহন না করে বাঙালির সংস্কৃতি হিসেবে এক সমার্থক স্বরূপে উন্মোচিত হয়েছে। অসাধারণ এই বন্ধনধারায় বাঙালির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক জীবনের পরিচর্যা উনবিংশ শতাব্দীর রেনেসাঁসে সর্বোতভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
বস্তুতঃ পক্ষে পবিত্র কোরআন, হাদিস ও সুন্নাহ্’র আলোকে ইহকাল এবং পরকালের জীবন ব্যবস্থার প্রতি অবিচল আস্থা, ধারণ ও অনুশীলনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যে প্রাগঢ় প্রেমের নিবেদন ও বন্ধন স্থাপন, জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তার সার্বিক প্রতিফলন ঘটিয়ে হযরত গাউছুল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারী মানব মুক্তির পবিত্র সনদ রচনা করে গেছেন। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)’র জীবনাদর্শকে ভিত্তি করে ধর্ম-কর্ম ও জীবন নির্বাহে আত্ম-নির্ভরশীল হওয়া (ফানা আনিল ফালাখ), অনর্থক কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা পরিহার করা (ফানা আনিল হাওয়া) ও খোদার ইচ্ছা শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া (ফানা আনিল এরেদা)-এই তিন মহৎ বৈশিষ্ট্যের সমাহারকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রধান নিয়ামক চিহ্নিত করে আত্ম-সংযম, আত্ম-সমালোচনা ও নির্বিলাস জীবনের গতিময়তায় সর্বোপরি আত্ম-পরিপূর্ণতার পবিত্র দিগ্-দর্শন দিয়ে গেছেন এই মহান অলি। এখানেই তাঁর বিশেষত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। তাঁর বয়স যখন দু’বছর, তখনই স্বেচ্ছায় মাতৃ-দুগ্ধ পান বন্ধ করে এক অর্পূব কেরামতিতে আল্লাহ পাক বর্ণিত কোরআনের আদর্শ পালন শুরু করলেন। বাল্যকালে বাংলা ও আরবী শিক্ষা নিতে গিয়ে পাঠশালায় এক অনুপম চরিত্রের অধিকারী হলেন। সকলের সাথে স¤প্রীতি, গুরুভক্তি, পাঠ্যক্রমে মনোযোগী, মিতভাষী চরিত্রের অধিকারী হয়ে এক গুণী ব্যক্তিত্বের প্রকাশ অব্যাহত রাখলেন। সাত বৎসর বয়সে নামাজ শিখে জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য উদ্বিগ্ন থাকতেন। লেখাপড়ায় উনি সব সময় প্রথম স্থান অধিকার করতেন।
পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলিকাতায় গমন করে ১২৬০ হিজরীতে আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি রাতের অধিকাংশ সময় আল্লাহর ইবাদতে ও ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। ১২৬৮ হিজরীতে হাদিস, তফসীর, ফিকহ্, হেকমত, বালাগাত, উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা ও ফরায়েজ যাবতীয় শাস্ত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করে আরবী, উর্দূ, ফার্সী ভাষায় পারদর্শী হয়ে কলকাতার মাদ্রাসায় শেষ পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এক্ষেত্রে হযরত গাউছুল আজম মাহবুবে সোবহানী গাউসে সমদানী হযরত সাইয়্যেদুনা আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) জ্ঞান অর্জনে বুৎপত্তি লাভের সঙ্গে হযরত গাউছুল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারীর জ্ঞান অর্জন ও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির অপূর্ব মিল খুঁজে পাওয়া যায়। হযরত গাউছূল আজম মাইজভান্ডারীও শিক্ষার জন্য শুধু কলিকাতায় গমন করেননি, সেখানে তিনি তাঁর জীবন যাত্রার কঠিন অনুশীলনগুলো রপ্ত করেছেন। ১২৬৯ হিজরী সনে যশোরে কাজী পদে এবং বৎসর খানেক পরে তা ত্যাগ করে মাদ্রাসায় প্রধান মোদারেছ হিসেবে যোগদান হযরত গাউছুল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারীর পেশাগত জীবনের সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন হওয়ার স্বাক্ষ্য বহন করে। পরবর্তীতে পবিত্র বাগদাদ শরীফের হযরত গাউছূল আজম (রাঃ) বংশধর এবং কাদেরীয়া ত্বরীকত খেলাফত প্রাপ্ত গাউছে কাওনাইন শেখ সৈয়দ আবু শাহমা মোহাম্মদ সালেহ কাদেরী লাহোরী ও তারঁ অগ্রজ চির কুমার শাহ সৈয়দ দেলওয়ার আলী পাকবাজ এর সংস্পর্শে এসে হযরত গাউছুল আজম আহমদ উল্লাহ (কঃ) মাইজভান্ডারী ফয়েজ ও কামালিয়াত প্রাপ্ত হন।
অনাহার-অনিদ্রায় তাঁর দীর্ঘকাল অতিক্রমের ইতিহাস ভক্তকুলের সবাই অবগত আছেন। কথিত আছে যে, এরকমই অভাবের সময় ঘরে জীর্ণ শীর্ণ ছাউনি বদলানোর অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়লে একদিন ঘরে সামান্যতম খাবারের বন্দোবস্ত না থাকা সত্তে¡ও ছাউনি দিতে আসা কামলাদের দুপুরের খাবার আয়োজনের জন্য তাঁর আম্মাজানকে তাগিদ দিতে থাকেন। কিন্তু অকস্মাৎ ঠিক আহারের পূর্ব মুহুর্তে অলৌকিকভাবে খাবারের আয়োজন অর্থাৎ অজানা কোন এক জায়গা থেকে অত্যন্ত উঁচু মানের খাবার আসার ঘটনা হযরত গাউছুল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারীর বেলায়েত ও কেরামতের প্রথম প্রকাশ ঘটায়। এ ধরনের বিভিন্ন কেরামত ও বেলায়েতী জজবা হযরত আহমদ উল্লাহ্(কঃ) মাইজভান্ডারী আগমন ও অবস্থান সম্পর্কে অনেক অলি কেরামের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতকে বাস্তবে রূপদান করে।
হযরত গাউছুল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারী নিজেই ঘোষণা করেন- “রসুলুল্লাহ (সঃ) দুই টুপির একটি আমার মাথায় এবং অপরটি পীরানে পীর ছাহেবের মাথায় পরিয়ে দিয়েছেন। আমার নাম পীরানে পীর ছাহেবের সাথে সোনালী অক্ষরে লেখা ছিল। আমি এবং আমার ভাই পীরানে পীর ছাহেব একদা কা’বা শরীফে ঢুকে রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বক্ষস্থলে ডুব দিলাম। দেখলাম এর অনন্ত দরিয়া”। হযরত গাউছূল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারী এর বর্ণনায় স্পষ্ট যে, হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) এবং তিনি ছাড়া আর কেউ গাউছুল আজম দাবী করেননি। এ বক্তব্য অবশ্যই তাঁর আধ্যাত্মিক কর্তৃত্বকে দায়িত্বের সাথে প্রতিষ্ঠা করে যা আমাদের জ্ঞান বা ধারণা বহির্ভূত। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মোহাম্মদ জালালুদ্দিন রুমীর (রঃ) একটি বাণী প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “দরবেশীর কাজ তোমাদের জ্ঞানের বাহিরে। তোমরা ফকির দরবেশদিগকে কখনও ঘৃণা বা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখোনা”।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, হযরত গাউছূল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারীর আধ্যাত্মিক হেদায়াত অভিযান যখন দ্রæতগতিতে প্রসার লাভ শুরু করে, তখন তাঁর চিন্তা-চেতনা ও অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদের ভাবধারা উপলব্ধি করতে না পেরে অনেক অজ্ঞ ও ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী তথাকথিত মৌলভীর দল নানা অপবাদে তাঁকে অপদস্থ করার হীন অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। কিন্তু কালক্রমে এসব ভিন্ন মতের আলেমগণ বিভিন্ন তর্কযুদ্ধে পরাজয় বরণ করে হযরতের ঐশ্বরিক বেলায়েতী শক্তির কাছে মাথা নত করে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। হযরতের আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাবে একরাতে মক্কা শরীফ হতে চট্টগ্রাম শহরে হাজীর প্রত্যাগমন, সাগরজলে হযরতের প্রভাব ও খালের গতি পরিবর্তন, নিঃসন্তানের সন্তান লাভ, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল, রোগ আরোগ্য, বাঘের মুখ থেকে রক্ষা, সুস্থ জীবিকা অর্জন, বৃষ্টি বর্ষণ, মহামারী নিবারণসহ বহু অলৌকিক ঘটনার উদ্ধৃতি বিভিন্ন লোকমুখে এবং বই পুস্তকে বিস্তৃত আছে।
হযরত গাউছূল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারী প্রবর্তিত মাইজভান্ডারী দর্শনের আদর্শ উদ্দেশ্যকে ধারণ করে অসংখ্য সুফী, অলি-দরবেশ বহুকাল ধরে এ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হেদায়েত করে আসছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত গাউছূল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)’র ওফাত মোবারকের পর তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী হযরত মাওলানা গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারী (রঃ), অছিয়ে গাউছুল আজম হযরত দেলওয়ার হোসাইন মাইজভান্ডারী (রঃ) ও বিশ্ব অলি শাহানশাহ হযরত জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (রঃ) তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার যৌক্তিক সমন্বয় ঘটিয়ে এবং বেলায়েতের শক্তিতে আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতায় মাইজভান্ডারী দর্শনকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-অঞ্চল ইত্যাদি নির্বিশেষে সকল মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনন্যসাধারণ জীবন দর্শন হিসেবে প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন।
এ মহান সর্বজনীন মানবতাবাদী দর্শনের তীর্থভূমি পবিত্র মাইজভান্ডার দরবার শরীফ সম্পর্কে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (কঃ) সঠিক ভাবে বলেছেন, “গধরুনযধহফধৎ ঝযধৎরভ রং ধহ ড়পবধহ. উড় হড়ঃ ঃযরহশ রঃ ড়ঃযবৎরিংব। বর্তমানে এটি স্বীকৃত ও সর্বজনবিদিত যে, মহাসাগর যেমন সকল নদী, সাগর ইত্যাদির সাবলীল স্রোতধারার অনাবিল মিলনকেন্দ্র, মাইজভান্ডার দরবার শরীফও সকল ত্বরিকা ও মতামতকে একই লক্ষ্যবিন্দুতে পরিণত করেছে। এই মহান দর্শনের প্রণেতা হযরত গাউছূল আজম (কঃ) মাইজভান্ডারী যেমন ১ মাঘ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, ৭৯ বছর বয়সে ১৩১৩ বঙ্গাব্দ (১৯০৬ সাল) তেমনি মাঘ মাসের ১০ তারিখে এই ধরাধাম ত্যাগ করেন। আজকের দিনে এ মহান অলি এবং তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী হযরত বাবাভান্ডারী (রঃ), হযরত দেলওয়ার হোসাইন মাইজভান্ডারী (রঃ) ও শাহানশাহ হযরত জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (কঃ)’র প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও অজস্র সালাম নিবেদন করছি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চ.বি