পদ্মাসেতু : দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে

13

 

পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, উন্নয়নে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাবে। এরই মধ্যে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। সেগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ওই দিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এতে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ১ থেকে দেড় শতাংশ বাড়বে। দারিদ্র্যের হার কমবে দশমিক ৮৪ শতাংশ। নতুন করে গড়ে উঠবে ভারি শিল্পকারখানা। আর এরই অপেক্ষায় যেন বাংলাদেশ। সব আলোচনা-সমালোচনা, ষড়যন্ত্র রুখে পদ্মার বুকে এখন দৃশ্যমান সেতুটি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটির পিলারগুলো। ভাগ্য খুলবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর। তাই পদ্মার বুকে ভাসছে বাংলার ১৭ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা। এখন শুধু অপেক্ষা আকাশ ছোঁয়ার। চ্যালেঞ্জকে জয় করার অদম্য স্পৃহা এবং আগামীতে দেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার হাতছানি। সব বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এতেই কেটে যায় কালো মেঘ, দিগন্ত আলোকিত করে হেসে উঠে সূর্য। সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞের মধ্যদিয়ে শুরু হয় স্বপ্নের বীজ বোনা। আর সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে ধরা দিচ্ছে। স্বপ্নের দ্বিতল পদ্মা সেতুটির ওপরের তলায় থাকছে চার লেনের সড়ক। আর নিচের তলায় চলবে ট্রেন। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত এই সেতুটি নির্মাণ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। নদীর দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। পদ্মা সেতু এলাকায় ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয়ে জীববৈচিত্র্যের ইতিহাস সংরক্ষণে একটি জাদুঘর স্থাপনের কাজও চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। এদিকে কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে। অপরদিকে এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলাচ্ছে। এখানে বিশ্বমানের অলিম্পিক ভিলেজ, বেনারসি তাঁতপল্লি, রাজউকের উদ্যোগে আইকন টাওয়ার, দেশের মধ্যে একমাত্র ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমিসহ বড় বড় প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। পদ্মা সেতুতে জমি দিয়ে যারা পৈতৃক ভিটা, কৃষি জমিসহ অনেক জমিজমা হারিয়েছে, তারা আবাসন প্রকল্পে প্লট পেয়েছে। পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে এই অবদানের জন্য তাদের পরিবারসহ সবাই খুশি। তারা মনে করছে, এ সেতুর মধ্যমে সারা দেশের যে উপকার হবে, তাতেও ভাগীদার হতে পারল। চালু হওয়ার পর পদ্মা সেতুতে দৈনিক অন্তত ৬ থেকে ৭ হাজার গাড়ি পারাপার হবে। কারণ, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ায় ফেরি ঘাটের বিড়ম্বনা এড়াতে সিংহভাগ গাড়ির গন্তব্য হবে পদ্মা সেতু। এতে সময় ও শ্রম দুই-ই বাঁচবে গাড়িগুলোর। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২ হাজার ৭৯৩টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের জন্য চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ১ হাজার ৫৮৭ জনকে কম্পিউটার, গরু-ছাগল পালন ও হাঁস-মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্নের অবকাঠামো পদ্মা সেতু। এক সময় বাংলাদেশিদের কাছে যা স্বপ্ন ছিল, আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ঋণ প্রস্তাব বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বের অন্যতম খরগ্রোতা নদী পদ্মা। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতে নির্মাণকাজ থেমে থাকেনি। বিশেষ করে, গুজব ছড়ানো হয়েছে অনেক। অনেকে তা বিশ্বাসও করেছেন। এ নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষকে বিজ্ঞপ্তিও দিতে হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে এখানে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। কাজের গতি কম ছিল; কিন্তু বন্ধ হয়নি।
উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ আশপাশের জেলায় পাল্টে যাবে ২১ জেলার চেহারা। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে সরাসরি তিন ধরনের সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে। এই বৃহৎ অঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ইপিজেড। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে। সারাদেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা ৩টি বিভাগের অন্তর্গত। এগুলো হচ্ছে- বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি। ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। এছাড়া খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা।
স্বাধীনতার পর থেকে এই জেলাগুলো ছিল অবহেলিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই এসব জেলায় উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। বৃহত্তর এই অঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রকল্প হাতে নেন। দেশের বড় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বরিশাল বিভাগেই নির্মাণের পরিকল্পনা করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়লে এই এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে। পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন, ফোর লেনের পায়রা সেতু, শেরেবাংলা নৌঘাঁটি ও ইপিজেড স্থাপিত হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলে বরিশালের জেলাগুলোর সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটনের প্রসার বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। পায়রা থেকে কুয়াকাটার বিস্তৃত এলাকা ঘিরে পর্যটনভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে সরকার। এই মাস্টারপ্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ণ, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাভিত্তিক কার্যক্রম। পদ্মা সেতু এসব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। ব্যবসায়ীরা আমদানি ও রপ্তানিতে উৎসাহ পাবেন। একই সঙ্গে পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। আধুনিকায়ন হলে পায়রা বন্দর ভবিষ্যতে এক বৃহত্তম বন্দরে পরিণত হবে। এমনকি ভুটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলো পায়রার মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে উপকৃত হবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মাপারে হচ্ছে তাঁতপল্লি ও আইটি পার্কও। এরই মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় আইটি পার্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিবচরের কুতুবপুরের কেশবপুরে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি অ্যান্ড হাইটেক পার্ক’ নির্মাণে ৭০ একর জায়গা নির্ধারণ করেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। প্রকল্প অনুমোদন হলেই ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। এর বাইরে আরও অনেক ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ, আইএইচটি ভবন, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি ভবন, মুক্তমঞ্চ ও অলিম্পিক ভিলেজ। সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হবে বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও আইকন টাওয়ার। পদ্মা সেতু অর্থনীতির ভিত্তি ও সোনালি সোপান হিসেবে কাজ করবে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘুরে যাবে দ্রæত বেগে। বাড়বে জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান। জাতীয় উন্নয়ন মূলত জাতীয় অর্থনীতির ওপরই নির্ভরশীল এবং যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের প্রভাবক। তদুপরি পদ্মা সেতু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পেই নির্মিত হয়েছে। সুতরাং এটা বলা যায় যে, পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং প্রভাব ব্যাপক। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক সৈয়দ ফারুক হোসেন

পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, উন্নয়নে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাবে। এরই মধ্যে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। সেগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ওই দিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এতে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ১ থেকে দেড় শতাংশ বাড়বে। দারিদ্র্যের হার কমবে দশমিক ৮৪ শতাংশ। নতুন করে গড়ে উঠবে ভারি শিল্পকারখানা। আর এরই অপেক্ষায় যেন বাংলাদেশ। সব আলোচনা-সমালোচনা, ষড়যন্ত্র রুখে পদ্মার বুকে এখন দৃশ্যমান সেতুটি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটির পিলারগুলো। ভাগ্য খুলবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর। তাই পদ্মার বুকে ভাসছে বাংলার ১৭ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা। এখন শুধু অপেক্ষা আকাশ ছোঁয়ার। চ্যালেঞ্জকে জয় করার অদম্য স্পৃহা এবং আগামীতে দেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার হাতছানি। সব বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এতেই কেটে যায় কালো মেঘ, দিগন্ত আলোকিত করে হেসে উঠে সূর্য। সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞের মধ্যদিয়ে শুরু হয় স্বপ্নের বীজ বোনা। আর সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে ধরা দিচ্ছে। স্বপ্নের দ্বিতল পদ্মা সেতুটির ওপরের তলায় থাকছে চার লেনের সড়ক। আর নিচের তলায় চলবে ট্রেন। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত এই সেতুটি নির্মাণ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। নদীর দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। পদ্মা সেতু এলাকায় ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয়ে জীববৈচিত্র্যের ইতিহাস সংরক্ষণে একটি জাদুঘর স্থাপনের কাজও চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। এদিকে কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে। অপরদিকে এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলাচ্ছে। এখানে বিশ্বমানের অলিম্পিক ভিলেজ, বেনারসি তাঁতপল্লি, রাজউকের উদ্যোগে আইকন টাওয়ার, দেশের মধ্যে একমাত্র ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমিসহ বড় বড় প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। পদ্মা সেতুতে জমি দিয়ে যারা পৈতৃক ভিটা, কৃষি জমিসহ অনেক জমিজমা হারিয়েছে, তারা আবাসন প্রকল্পে প্লট পেয়েছে। পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে এই অবদানের জন্য তাদের পরিবারসহ সবাই খুশি। তারা মনে করছে, এ সেতুর মধ্যমে সারা দেশের যে উপকার হবে, তাতেও ভাগীদার হতে পারল। চালু হওয়ার পর পদ্মা সেতুতে দৈনিক অন্তত ৬ থেকে ৭ হাজার গাড়ি পারাপার হবে। কারণ, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ায় ফেরি ঘাটের বিড়ম্বনা এড়াতে সিংহভাগ গাড়ির গন্তব্য হবে পদ্মা সেতু। এতে সময় ও শ্রম দুই-ই বাঁচবে গাড়িগুলোর। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২ হাজার ৭৯৩টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের জন্য চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ১ হাজার ৫৮৭ জনকে কম্পিউটার, গরু-ছাগল পালন ও হাঁস-মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্নের অবকাঠামো পদ্মা সেতু। এক সময় বাংলাদেশিদের কাছে যা স্বপ্ন ছিল, আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ঋণ প্রস্তাব বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বের অন্যতম খরগ্রোতা নদী পদ্মা। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতে নির্মাণকাজ থেমে থাকেনি। বিশেষ করে, গুজব ছড়ানো হয়েছে অনেক। অনেকে তা বিশ্বাসও করেছেন। এ নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষকে বিজ্ঞপ্তিও দিতে হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে এখানে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। কাজের গতি কম ছিল; কিন্তু বন্ধ হয়নি।
উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ আশপাশের জেলায় পাল্টে যাবে ২১ জেলার চেহারা। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে সরাসরি তিন ধরনের সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে। এই বৃহৎ অঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ইপিজেড। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে। সারাদেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা ৩টি বিভাগের অন্তর্গত। এগুলো হচ্ছে- বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি। ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। এছাড়া খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা।
স্বাধীনতার পর থেকে এই জেলাগুলো ছিল অবহেলিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই এসব জেলায় উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। বৃহত্তর এই অঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রকল্প হাতে নেন। দেশের বড় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বরিশাল বিভাগেই নির্মাণের পরিকল্পনা করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়লে এই এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে। পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন, ফোর লেনের পায়রা সেতু, শেরেবাংলা নৌঘাঁটি ও ইপিজেড স্থাপিত হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলে বরিশালের জেলাগুলোর সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটনের প্রসার বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। পায়রা থেকে কুয়াকাটার বিস্তৃত এলাকা ঘিরে পর্যটনভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে সরকার। এই মাস্টারপ্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ণ, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাভিত্তিক কার্যক্রম। পদ্মা সেতু এসব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। ব্যবসায়ীরা আমদানি ও রপ্তানিতে উৎসাহ পাবেন। একই সঙ্গে পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। আধুনিকায়ন হলে পায়রা বন্দর ভবিষ্যতে এক বৃহত্তম বন্দরে পরিণত হবে। এমনকি ভুটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলো পায়রার মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে উপকৃত হবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মাপারে হচ্ছে তাঁতপল্লি ও আইটি পার্কও। এরই মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় আইটি পার্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিবচরের কুতুবপুরের কেশবপুরে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি অ্যান্ড হাইটেক পার্ক’ নির্মাণে ৭০ একর জায়গা নির্ধারণ করেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। প্রকল্প অনুমোদন হলেই ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। এর বাইরে আরও অনেক ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ, আইএইচটি ভবন, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি ভবন, মুক্তমঞ্চ ও অলিম্পিক ভিলেজ। সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হবে বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও আইকন টাওয়ার। পদ্মা সেতু অর্থনীতির ভিত্তি ও সোনালি সোপান হিসেবে কাজ করবে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘুরে যাবে দ্রুুত বেগে। বাড়বে জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান। জাতীয় উন্নয়ন মূলত জাতীয় অর্থনীতির ওপরই নির্ভরশীল এবং যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের প্রভাবক। তদুপরি পদ্মা সেতু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পেই নির্মিত হয়েছে। সুতরাং এটা বলা যায় যে, পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং প্রভাব ব্যাপক। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক