পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দাবি আদায়ে কি ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্দর সচল ও সক্ষম রাখার সহযোগী বিভিন্ন গ্রুপগুলো প্রায় সময় তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা চাহিদা ও দাবি পূরণের জন্য অনেক সময় বন্দর অচল করার কর্মসূচিতে চলে যায়। এতে ক্ষতির সম্মুখিন বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারীরা। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও থাকে। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘটেও বন্দরের কাজকর্মে একটা অস্বাভাবিকতা তৈরি হতে পারে। এ নিয়ে কথা বলেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করেন, এ সংকটের আশু সমাধান দরকার।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বন্দর চত্বর থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ থেকে নামানো কন্টেইনার রাখার মতো জায়গা কমে যায়। এক পর্যায়ে জাহাজ থেকে কন্টেইনার ওঠা-নামাও বন্ধ হয়ে পড়বে। বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হলে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে দেশের ৯৩ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয়। আর কন্টেইনার পরিবহন হয় ৯৮ শতাংশ। এ বন্দরের যেকোনো প্রভাব পুরো দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, এমনিতে কন্টেইনার জটের কারণে বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে আবার পণ্য পরিবহনে ধর্মঘট। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা। আর অন্য কেউ নয়। এ বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিজিএমইএ স্বরাষ্টমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছে। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।
একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাব অবশ্যই পড়বে। মঙ্গলবার বন্দর থেকে কোন ডেলিভারি হয়নি। সকালের দিকে সীমিত আকারে ছিল, তবে পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে খারাপ প্রভাব পড়বে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এটা সমাধান হোক।
এদিকে কর্মবিরতি চলাকালে সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন পণ্যবাহী গাড়ির মালিক-শ্রমিকরা। এ সময় তারা অবিলম্বে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারে প্রতি আহŸান জানান। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এমন পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, সিসিটি ও জিসিবির জেটি ও ইয়ার্ডে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্দরের ডিপোতেও বন্ধ রয়েছে কন্টেইনার আনা-নেওয়া।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মাইনুদ্দিন বলেন, পুলিশের চাঁদাবাজি, ড্রাইভারদের লাইসেন্স সহজীকরণসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চলছে। দাবিগুলো মেনে না নেওয়ায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ১৫ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আমরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছি।
এছাড়া ২৭ ও ২৮ নভেম্বরও ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা হয়েছে। পণ্য পরিবহন খাতের ওপর নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ে আগামী ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সারাদেশে পণ্য পরিবহনে ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। ইতিপূর্বে ঘোষিত এ কমসূচি সফলে দুপুরে সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির আহŸায়ক মো. নূরুল আবছারের সভাপতিত্বে নগরীর মাদারবাড়ি এলাকায় সংগঠন কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৫ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহŸান জানানো হয়। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন সংগঠনের নেতারা।