পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের তাগিদ

12

নিজস্ব প্রতিবেদক

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দৈনিক পূর্বদেশকে জানান, স্থানীয় বাজারে অনেক পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বেশি। এর অর্থ হলো, ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামের অজুহাতে মানুষের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে সরকারের নিত্য প্রয়োজনীয় সংক্রান্ত দর নির্ধারণ কমিটি কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কৃষি বিপণন অধিদফতরও কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দর নির্ধারণ কমিটি সয়াবিন ও পাম তেলের দর ঠিক করে। এর আগে চালের দর ও আলুর দর নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিপণন অধিদফতর। তবে নির্ধারিত দরে আলু, সয়াবিন তেল, চাল কোনোটাই দেশের কোথাও ক্রেতারা বাজারে পাননি। ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সংগঠনের মাঝে ব্যবধান বাড়ায় এবং সরকারের ওপর ব্যবসায়ীদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা অপরাধে জড়ালেও শাস্তির দৃষ্টান্ত তেমন নেই। ফলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা সেজে ব্যবসায়ীদের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদের বক্তব্য
অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রধান প্রধান নিত্যপণ্যের জন্য বিদেশের বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকায় বাংলাদেশ সব সময় আমদানি-প্ররোচিত মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে থাকে। ফলে এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র উপায় হচ্ছে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করা। প্রকৃতপক্ষে, এটি আগেই করা উচিত ছিল। দাম কমিয়ে আনার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা উচিত। পাশাপাশি, দামের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে- এমন লোকজনকে সরকারি সহায়তা হিসেবে নিজস্ব স্টক থেকে কিছু নিত্যপণ্য সরবরাহ করা বা ভর্তুকি দেওয়া এবং খুচরা বাজারে সরকারের মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এসব পণ্য বিক্রির ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, করোনা মহামারির পর মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা নেমে এসেছে। পণ্যের দাম বাড়লেও নি¤œ আয়ের মানুষের আয় বাড়েনি। মানুষের আয় বাড়ানো হলে পণ্যের দাম বাড়লেও সমস্যা নেই। এতে কোনও প্রভাব পড়তো না। এখন দেখছি কৃষিপণ্যের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে একটি চক্র। তবে দাম বৃদ্ধিটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাড়ায় চক্রটি। তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হলে অর্থাৎ কয়েকমাস পর আবার কমিয়ে আনে। যেমন- গরীব মানুষের পণ্যের দাম বাড়ে কিন্তু দেখবেন বড়লোকের পণ্যের দাম কমে যায় দিন দিন। ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দিকে একটু নজর দিলে তা সহজে বুঝতে পারবেন। আমি মনে করি ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটার জন্য দামের এ পরিবর্তন ঘটায়।
দাম নিয়ন্ত্রণে কি করণীয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দামবৃদ্ধির মত সমস্যা নিরসনে সরকারকে কঠোরভাবে ভাবতে হবে। একটা পণ্যের মুনাফা কতটুকু করা যায় তা বেঁধে দিতে হবে। ইচ্ছেমত করলে হবে না। আইন অমান্যকারীকে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি নিয়মিত বাজারগুলোকে তদারকির আওতায় আনতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের বক্তব্য
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, চট্টগ্রামে কোনও ব্যবসায়ী দাম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে না। বিশ্ববাজার তথা আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেইট বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকে (বুধবার) জানতে পেরেছি ডলারের দাম আরও ৬০ সেন্ট বেড়েছে। তাহলে এখন ডলার ৮৫ টাকা ৬০-৭০ পয়সার দিকে পড়তে পারে। যার প্রভাবটা আল্টিমেটলি ভোগ্যপণ্যের বাজারে গিয়ে পড়বে। এখানে আমাদের কোনও হাত নেই।
তিনি আরও বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি কারও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেই। বাজারে কোনও ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারবে না। আমরা সবসময় তদারকির মধ্যে রেখেছি। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করলে বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকব। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ তৈরি করতে পারবে না।