আনোয়ারা প্রতিনিধি
চলতি বছরের ডিসেম্বরেই চালু হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের বহুল প্রতিক্ষিত স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল শনিবার সকালে টানেলের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
সকালে তিনি বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে টানেল সংযোগ সড়ক, ক্রসিং ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি মোড় পর্যন্ত ছয় লেন সড়কের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠান, কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগ ও প্ল্যানিং কমিশনের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পরিদর্শনের সময় সারাদেশ থেকে আসা কক্সবাজারগামী যানবাহনগুলোকে ক্রসিং-পটিয়া হয়ে কক্সবাজার যাওয়ার পাশাপাশি চন্দনাইশ কলেজগেইট ও বাঁশখালী টইটং হয়ে কক্সবাজার পৌঁছানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন সেতু সচিব। এতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার কমে আসবে বলেও জানান। এজন্য আনোয়ারা-চন্দনাইশ এবং আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার সম্ভাব্যতা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন সচিব। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরনো অধিগ্রহণের মধ্যেই সড়ক দুইটি ৩৪ ফুটে উন্নীত করা হবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু টানেলের ছয় লেন সংযোগ সড়কের (ক্রসিং-কালাবিবির দীঘির মোড়) চার লেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে। বাকী দুই লেনের জন্য আরো একবছর সময় বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ, ডিসেম্বরের মধ্যেই কর্ণফুলী টানেলের সাথে চার লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। সড়কের বাকী দুই লেন পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া চাতরী চৌমুহনী বাজার, ফাজিল খাঁর হাট ও ফকিরনীর হাটে তিনটি ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সে সাথে চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে সিইউএফএল পর্যন্ত সড়কটিও চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসলে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ছয় লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ জানান, সচিব মহোদয় বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়কের (ক্রসিং- কালবিবির দীঘি) কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে এসেছেন। যেহেতু আগামী ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের সম্ভাব্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে টানেলের সংযোগ সড়কগুলোর কাজও যাতে শেষ করা যায় সেজন্য তিনি পরিদর্শনে এসেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বরকল সেতু ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। সেজন্য বরকল সেতুও পরিদর্শন করেন সচিব।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানান, সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় মূলত বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে সংযোগ সড়কগুলো পরিদর্শন করতে এসেছেন। কীভাবে চট্টগ্রাাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে আসা যানবাহনগুলোকে যানজটমুক্তভাবে কক্সবাজারে পৌঁছানো যায় সেই পরিকল্পনা নিয়ে পরিদর্শনে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু টানেলের গাড়িগুলো ক্রসিং পটিয়া হয়ে কক্সবাজার গমনের পাশাপাশি আনোয়ারা কালাবিরি দীঘির মোড় থেকে চন্দনাইশ কলেজ গেইট দিয়ে এবং বাঁশখালী টইটং হয়ে কক্সবাজারে পৌঁছাতে এই দুই সড়ককে ৩৪ ফুটে উন্নীত করতে চান তিনি। ভ‚মি অধিগ্রহণের জটিলতা এড়াতে পুরনো অধিগ্রহণেই আনোয়ারা-বরকল-চন্দনাইশ সড়কটি ফোর লেনে উন্নীত করে কক্সবাজার সড়কের সাথে সংযুক্ত করতে দ্রæত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। এছাড়া বাঁশখালী, টইটং হয়ে কক্সবাজার সড়কটিও প্রশস্তকরণের সম্ভাব্যতা সরেজমিন দেখতে এসেছেন। যাতে বঙ্গবন্ধু টানেল পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারগামী গাড়িগুলো চন্দনাইশ এবং বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজার যেতে পারে। এজন্য দ্রæততম সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী, প্ল্যানিং কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সড়কগুলো পরিদর্শন করেছেন।
এছাড়া তিনি কর্ণফুলী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কয়েকটি সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেন।
বিকালে তিনি ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সাথে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে নেয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণে ভ‚মিমন্ত্রীর সাথে সমন্বয় করার মতামত ব্যক্ত করেন।