পটিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১১শ ৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন

100

আবেদ আমিরী, পটিয়া

পটিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১১শ ৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম শহরের পাশে পটিয়া পরিণত হবে উপ শহরে। এ প্রকল্পের সকল কৃতিত্ব পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীর। তিনি আমার পেছনে লেগেছিলেন। সংসদ বা মন্ত্রণালয় যেখানেই দেখা হয় এ প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজ নিতেন। তার বিরক্তের জ¦ালায় থাকতে না পেরে দ্রুত তা পাশ করে দিয়েছি। করোনাকালীন সময়ে এ প্রকল্পের অনুমোদন হয়। হুইপ যদি আমার পিছনে লেগে না থাকত তবে এ প্রকল্প সহজে মুখ দেখত না। তিনি কাজের মানুষ। তার হাত ধরে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পটিয়া উপ শহরে পরিণত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দিনে দিনে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হলে দেশে আর কোন গরীব থাকবে না। করোনাকালীন সময়ে অন্য দেশ যেখানে হিমসিম খেয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এ সরকারের সময়ে যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাতা পান, খেয়াল রাখবেন আগামিতে এ সরকার ক্ষমতায় না এলে এসব ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের কারণে। ২০১৯ সালে একবার পটিয়ার এমপি তাকে পটিয়ায় নিয়ে এসেছিলেন। তখন পটিয়ার অবস্থা দেখে গিয়ে এবার দ্বিতীয়বার এসেছেন প্রকল্পের কাজ শুরু করতে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হবে। তিনি বলেন, পটিয়ার এমপিকে ছাড়বেন না। তাকে ধরে রাখতে পারলে পটিয়া ও পটিয়াবাসীর আরো উন্নতি হবে। উনি নিষ্টাবান এমপি। বঙ্গবন্ধু না হলে এ জাতির ম্বপ্ন পূরণ সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ আছে। উনি না থাকলে বাংলাদেশ এ অবস্থায় থাকবে না। গতকাল বুধবার পটিয়ায় মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। প্রকল্পের উদ্বোধক ছিলেন পটিয়া আসনের এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। এতে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশীদ, পটিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মেয়র আইয়ুব বাবুল, ইউএনও আতিকুল মামুন, জেলা পরিষদের সদস্য দেবব্রত দাশ দেবু, পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জান চৌধুরী. সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ। এতে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক বলেন, এ প্রকল্পে সিংহভাগ টাকা জমি অধিগ্রহণ কাজে ব্যয় হবে। সে লক্ষে ক্ষতি পূরণের টাকা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১১টি খাল খনন, ফ্লাডওয়াল, বন্যায় পানি ও সাগরের লবণ পানি যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য বাঁধ ও ¯øুইচ গেট হবে।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি বলেন, আজ স্বপ্নপূরণের দিন। পটিয়ার উন্নয়নের জন্য স্টেড়িয়াম থেকে সংসদে নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচনের পর দেখলাম পটিয়ার কিছুই নেই। সর্বত্র খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। প্রধানমন্ত্রী ডেকে বলেছিলেন তুমি মানুষের কাছাকাছি থাকবে। তার পরামর্শে মানুষের কাছে থাকার চেষ্টা করেছি। আমানউল্লাহ নামের এক প্রকৌশলীকে পটিয়ায় এনে বাস্তব অবস্থা দেখিয়েছি। তিনি ঘুরে দেখে বলেছিলেন পুরো পটিয়াকে নদীপথ ঘিরে রেখেছে। চারদিকে বাঁধ তৈরি করতে হবে। তখন আমি সেভাবে প্রকল্প তৈরি করার অনুরোধ করি। দীর্ঘ সময় নিয়ে তৈরি হয় প্রকল্প। বিগত সময়ে বিএনপির এমপি ¯øইচ গেট করার শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। আমি এসে ইনলেট ও আউটলেট করার পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য উঠেপড়ে লেগে থাকি। ২০১৯ সালে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক দায়িত্বে আসার পর এ প্রকল্পে গতি পায়। জাহিদ ফারুকের সহযোগিতায় আজ এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ নয়। বতর্মান প্রতিমন্ত্রী না হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না। এ প্রকল্প যখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাশ হয় তখন বিশাল স্বপ্ন বাস্তবের পথে আরো একধাপ এগিয়ে যায়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেই পটিয়াবাসী বুঝবে এ সরকার পটিয়ার জন্য কি দিয়েছে। কাজে যাতে ফাঁকি দেয়া না যায় সেজন্য তার পক্ষ থেকে আলাদা একটি কমিটি করে দেয়ার ঘোষণা দেন। এ প্রকল্পে যাদের জমি পড়েছে তারা ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন। তিনি বলেন, আমার উপর আস্থা রাখবেন। সরকার ক্ষতিপূরণের টাকা না দিলে আমার পক্ষ থেকে দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছেন। এক বছরের মধ্যে অন্তত ৭০ ভাগ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।
বক্তব্যের সময় আবেগাপ্লুত হুইপ : পটিয়ায় ১১৫৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের শুরু থেকে বর্ণনা দিতে গিয়ে দুই দফায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সামশুল হক চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ২০০৪ সালে কৃষককে বিনামূল্যে সার দিতে গিয়ে তিনি বিএনপি জামায়াতের হামলার শিকার হয়েছিলেন। তার গাড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছিল। এরপর তাকে মামলা দেয়া হয়। দিনের পর দিন আদালতে ঘুরে বেরিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী ও এমপি নই, আমি আপনাদের সেবক। পটিয়া ও পটিয়াবাসীর জন্য শেখ হাসিনা ও তার সরকার যা করেছে তার কৃতজ্ঞতা জানাতে হলেও আগামী ৪ ডিসেম্বর জনসভায় সকলকে যোগ দেয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।