পঞ্চম দফায় সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন

7

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার পঞ্চম দফার সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। গত রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার টানা ৩ দিনে এ মামলার ১৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ ও আসামিদের পক্ষে জেরা করা হয়।
পাঁচ দফায় এ নিয়ে ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করতে পেরেছে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
পিপি বলেন, পঞ্চম দফার শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবার ১২ অক্টোবর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর ষষ্ঠ দফায় সাক্ষ্যের দিন ধার্য্য করেছেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। চলতি সপ্তাহের গত ৩ দিন টানা মামলার ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ ও আসামিদের পক্ষে জেরা শেষ হয়। ষষ্ঠ দফা সাক্ষ্যের ধার্য্য আগামী ৩ দিনও একটানা সাক্ষ্য গ্রহণে একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য সম্পন্ন করার প্রস্তুতি থাকবে।
পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রæত সম্পন্ন করতে আমাদের প্রচেষ্টা থাকলেও আসামিপক্ষ সবসময় তাতে ব্যাঘাতের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মামলার দ্বিতীয় আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপের আইনজীবী মামলার দ্বিতীয় সাক্ষীকে রি-কলের আবেদন করেছেন ১২ অক্টোবর। এটি মামলার গতিশীল কার্যক্রমকে স্থবির করার পাঁয়তারা বলে উল্লেখ করেন পিপি।
এদিকে, গত তিনদিনে এ মামলায় মোট ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিয়েছেন, রামু সেনানিবাসের ১০, এমপি ইউনিটের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসান, র‌্যাব-১৫ এর এএসআই নজরুল ইসলাম, এসআই সোহেল সিকদার, পুলিশের কনস্টেবল শুভ পাল।
এনিয়ে মামলার বিচারকার্য শুরুর পর হতে সাক্ষ্য দেয়া ৩৫ সাক্ষীর অপরাপরগণ হলেন, মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম, ডা. রনধীর দেবনাথ, সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, মোক্তার আহমদ, ছেনোয়ারা বেগম, হামজালাল, আলী আকবর, ফরিদুল মোস্তফা খান, বেবী ইসলাম, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. মুনতাসীর আরেফিন, সার্জেন্ট মো. মোক্তার হোসেন, কর্পোরাল নুর মোহাম্মদ, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সৈয়দ মঈন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবু জাফর এবং লেন্স কর্পোরাল মো. রুহুল আমিন, আহমদ কবির মনু, ধলা মিয়া, সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট আনিসুর রহমান, কনস্টেবল কামরুল হাসান।
সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ফরিদুল আলমকে সহযোগিতা করছেন, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ।
এসময় বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু, অ্যাডভোকেট ফারহানা কবির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছৈয়দুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এসমিকা সুলতানা প্রমুখ আদালতে উপস্থিত থাকছেন।
আসামিদের পক্ষের হয়ে আদালতে অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ, অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, অ্যাডভোকেট দিলীপ দাশ, অ্যাডভোকেট শামশুল আলম, অ্যাডভোকেট মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, অ্যাডভোকেট এম.এ বারী, অ্যাডভোকেট ওসমান সরওয়ার শাহীন, অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন শিমুল, অ্যাডভোকেট ইফতেখার মাহমুদ প্রমুখ সাক্ষীদের জেরা করেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির জানান, প্রতিদিন ১০ জন সাক্ষীকে উপস্থিত থাকার জন্য সমন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সমন পাওয়া সাক্ষীদের মধ্যে প্রতিদিন ৯ জন করে আদালতে হাজির হন।
এপিপি ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, সাক্ষীরা যথারীতি আদালতে উপস্থিত থাকলেও আসামিদের পক্ষে জেরা দীর্ঘ করার কারণে সমন পাওয়া সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য নির্ধারিত দিনে গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলা সংশ্লিষ্ট ১৫ ব্যক্তিকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। আসামিরা হলেন, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। এছাড়া পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেন। ৫ আগস্ট নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য র‌্যাব-১৫ কে দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে মামলার এজাহারে থাকা ৯ আসামির সাথে আরো ছয়জনকে সম্ভাব্য আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব।