পঞ্চগড়ে কেন সংক্রমণের হার বেশি?

2

বাংলাদেশে গত কয়েকমাসের তুলনায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশ কমে এসেছে। জুন-জুলাই মাসে শনাক্তের হার বিশ শতাংশ পার হয়ে গেলেও গত সোমবার সেটা নেমে এসেছে ৫.৬৭ শতাংশে। বাংলাদেশে মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। বেশিরভাগ জেলায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেক বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশে। এই জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৭১৮ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮৮ জনের।
জেলাটির বাসিন্দা প্রায় ১০ লাখ হলেও এখন পর্যন্ত এখানে মোট পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ১১০৭৩টি।

কেন পঞ্চগড়ে এতো বেশি সংক্রমণ ঝুঁকি?
পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা শারমিন আক্তার মৌরি বলেন, উত্তরবঙ্গের কম উন্নত এই জেলায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতার প্রচন্ড অভাব তার চোখে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে বাইরে বের হলে কারও মধ্যে আর কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা দেখি না। বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। আমি মাস্ক পরে বের হলে সবাই উল্টো তাকিয়ে থাকে। হাসপাতাল, বাজারঘাট, কোথাও- করোনা ভাইরাস নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হয় না’।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের ওয়েভটা অন্যান্য জেলার চেয়ে আমাদের এখানে অনেক পরে আসছে। পরে আসছে বলে হয়তো পরে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত- যখন সারা দেশে বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো, সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়া হলো, তখন পঞ্চগড়ের মানুষ আসলে একদমই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এসব কারণে সংক্রমণ বাড়তে পারে।
পঞ্চগড়েই রয়েছে একটি সীমান্ত বন্দর বাংলাবান্ধা। সোমবার পর্যন্ত যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকলেও এই বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হতো। তবে সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে এই সংক্রমণ বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন না। যুক্তি হিসাবে তিনি বলছেন, ‘রবিবার পর্যন্ত এই জেলার সীমান্ত বন্দর বন্ধই ছিল, সোমবার থেকে সেটি চালু হয়েছে’।
সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান জানান, টেস্ট কম হচ্ছে, ফলে সংক্রমণের হার বেশি দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে জেলায় বা হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক কম। মানুষ শেষ মুহূর্তে টেস্ট করতে আসছে, যখন খুব বেশি সমস্যা দেখছে, তখন টেস্ট করতে আসছে। তখন পজিটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমাদের জেলায় ৫০/৬০ জন করে রোগী ভর্তি থাকতো। এখন আমাদের হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাত/আটজন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দল পঞ্চগড়ে

আশেপাশের অন্যসব জেলায় যেখানে সংক্রমণের হার কমে আসছে, তখন উত্তরের সীমান্তবর্তী এই জেলায় উচ্চহারে সংক্রমণ ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
এর কারণ অনুসন্ধান করতে বাংলাদেশের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, আসলে তিন-চারটি জেলায় আমরা এরকম দেখতে পেয়েছি। মুন্সীগঞ্জ, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া- এসব জেলায় আমাদের টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, কেন এই জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, সেটি বোঝার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল সেখানে পাঠানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনে আবার সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে।