পঞ্চকন্যাকে বর্ণাঢ্য বরণ চট্টগ্রামে

31

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বীর চট্টলায় বীরের বেশে এসেছেন ওরা পাঁচজন। ছাদখোলা জিপে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে এসেছেন তারা। দুই পাশে তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরদের জয়ধ্বনি। কেউ তুলছেন বীরকন্যাদের ছবি, কেউবা আবার বাড়িয়ে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন। সেই ফোনে তুলে দিচ্ছেন সেলফি। শতাধিক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ছিল সবার আগে। গতকাল বিকেল চারটার আগেই জামালখান পরিণত হয় দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে।
দৈনিক আজাদী আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়া মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে (সাফ) অংশ নেওয়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ ফুটবলারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের চিত্র এটি।
‘আঁরার মাইয়া, আঁরার গর্ব’ শিরোনামে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির রূপনা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলার মনিকা চাকমা এবং জমজ দুই বোন আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনী।
বিকেল চারটার দিকে চট্টগ্রাম ক্লাব থেকে তাদের বহনকারী খোলা ছাদের জিপটি এসে পৌঁছে জামালখান মোড়ে। এ সময় রাস্তার দুই পাশের মানুষজন তাদের দেখতে ভিড় করেন, হাত উঁচিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
আসরের আজানের বিরতির পর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতে পাঁচ ফুটবলারকে ফুলের মালা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কেট কাটা হয়।
সংবর্ধনায় পাঁচ নারী ফুটবলারের প্রত্যেককে দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। মুন্নু সিরামিকসের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ডিনার সেট।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনুভূতি জানাতে গিয়ে কৃতী ফুটবলারদের মধ্যে ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, আমি বৃহত্তর চট্টগ্রামের মেয়ে। আমি গর্বিত চট্টগ্রামের মেয়ে হয়ে। যখন দূরে থাকি তখন চট্টগ্রামকে মিস করি। অনেকদিন পরে চট্টগ্রাম শহরে এসে অনেক ভালো লাগছে। অনেক খুশি লাগছে আজকে। আমাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশে ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, এতোদিন যেভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও এভাবে পাশে থাকবেন বলে প্রত্যাশা করি। আমারা যেন বাংলাদেশকে আরও ভালো সাফল্য এনে দিতে পারি সেই দোয়া করবেন। আপনাদের সীমাহীন সমর্থন আমাদের পথচলা আরো দৃঢ় করবে।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেকের সভাপতিতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন, পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, সাবেক মেয়র ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ন্যাশনাল টিম কমিটি এবং উইমেন উইংসের সদস্য, বিসিবি পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চিটাগাং উইমেন্স চেম্বারের প্রেসিডেন্ট লায়ন কামরুন মালেক, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন প্রমুখ। শারীরিক অসুস্থতার জন্য সশরীরে উপস্থিত হতে না পেরে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান।
এর আগে বেলা ১১টায় পাঁচ ফুটবলার ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রাম আসেন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় অভিজাত চট্টগ্রাম ক্লাবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় মোটর শোভাযাত্রাযোগে চট্টগ্রাম ক্লাব থেকে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় সাফজয়ী পাঁচ ফুটবলারকে।
অনুষ্ঠানে একুশে পদক বিজয়ী দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ‘এই নারীরাই আমাদের গর্ব, অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তারা আমাদের জন্য সম্মান ছিনিয়ে এনেছেন। ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ফুটবলারদের জন্য মা ও শিশু হাসপাতালে আজীবন ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সাফ ফুটবলে বাংলার নারী ফুটবলাররা যে সম্মান বয়ে এনেছেন, তা ধরে রাখতে হবে। আশিয়ান ফুটবলেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তাহলে এশিয়া মানের ফুটবলের কৃতিত্ব অর্জন করা সম্ভব হবে। এই ফুটবলাররা দেশের সম্মান, এদের বিপদগামী হতে দেওয়া যাবে না। তারা নিজেদের ধরে রাখলে, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে আগামীতে এই নারীরাই এশিয়াতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে।’
বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন বলেন, এই নারীরা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশের জন্যে গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছেন। তাদের সম্মান জানাতে পেরে আমরাও সম্মানিত বোধ করছি।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, আজ চট্টগ্রামের পাঁচ নারী ফুটবলার শুধু নয়, আমরাও এই জয়ের অংশীদার, গৌরবের অংশীদার। কারণ আমার পরিবারেও ফুটবলের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
ওয়েল গ্রুপ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, পাঁচ নারী ফুটবলার আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব।