পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিতেই পিআইওর জালিয়াতি!

129

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তালিকায় ১০৭নং ক্রমিকে আছে দৈনিক আজকের প্রত্যাশা পত্রিকাটি। রাজবাড়ি জেলা থেকে প্রকাশিত হওয়া পত্রিকাটি চট্টগ্রামে পাওয়া যায় না। অথচ এ পত্রিকাতেই গত ১৮মে বাঁশখালীর নয়টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার তালিকাভুক্ত ঠিকাদার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিতে পারবে মর্মে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হলেও বাঁশখালীর অধিকাংশ ঠিকাদার বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানতেন না। তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) পছন্দের ঠিকাদাররা ছাড়া অন্যকোন ঠিকাদার দরপত্র ক্রয় কিংবা জমা দিতে পারেনি। ফরম বিক্রি কম হওয়ায় রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম পূর্বদেশকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের দরপত্র সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম উপজেলায় হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভালো জানবেন। দরপত্র আহবান, কাজ তদারকি সব দায় দায়িত্ব উনার। কোন অনিয়ম হলে ইউএনও ব্যবস্থা নিবেন। যদি তা না হয় তাহলে অনিয়ম দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তিনিও দায়ী থাকবেন। এরপরেও আমি যেহেতু বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি সেহেতু খোঁজ নিয়ে দেখব। কোন অনিয়মের প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নিব।
দুইজন ঠিকাদার জানান, চট্টগ্রামের অনেকগুলো বহুল প্রচারিত দৈনিক থাকতে অখ্যাত একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্য ঠিকাদাররা যাতে এটি না বুঝে সেজন্য এমন কৌশল করেছেন পিআইও। নোটিশ বোর্ডেও কোন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। সম্পূর্ণ অনৈতিক উপায়ে দরপত্র আহবান থেকে শুরু করে কার্যাদেশ দেওয়া পর্যন্ত বড় রকমের জালিয়াতি করা হয়েছে। এমন জালিয়াতির ফলে দরপত্র বিক্রি না হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারিয়েছে। অথচ কিছুদিন আগে ২৫টি ব্রীজের দরপত্রে ১২৫২টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে। দুদক তদন্ত করলে এ জালিয়াতির রহস্য বের হবে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, আমি এখনো বিল দেইনি। কয়েকটি আশ্রয়ণকেন্দ্র দেখে এসেছি। আবারো আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ কয়েকটি প্রকল্প দেখতে বের হবো। অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কাজ না হয় এটা একটা লার্নিং। আপনারা যেভাবে সজাগ আছেন। এটি উন্নয়নের জন্য পজেটিভ। সবসময় আমাকে সহযোগিতা করবেন।
সূত্র জানায়, দরপত্রে ফরম বিক্রির তারিখ নির্ধারিত ছিল ১৯ মে থেকে ২০মে অফিস চলকালীন সময় পর্যন্ত। এক হাজার ও পাঁচশত টাকা হারে দরপত্রের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ২১মে দুপুর ২টা পর্যন্ত দরপত্র জমা নেওয়া হয়। একইদিন ৩টায় দরপত্র বক্স উম্মুক্ত করা হয়। কিন্তু দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলেও কয়টি ফরম বিক্রি হয়েছে কিংবা ফরম জমা দিয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস এর সুস্পষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেনি। এমনকি দ্রুত সময়ে কার্যাদেশ দিয়ে নিয়োগকৃত ঠিকাদারদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়।
ফরম বিক্রি ও জমার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল কালাম মিয়াজী বলেন, ফরম কয়টি বিক্রি হয়েছে তা না দেখে বলা যাবে না। নয়টি কাজের মধ্যে একেকটিতে ৬ থেকে ১০টি করে ৭০টির মতো ফরম জমা পড়েছে। এত ঠিকাদার নাই ফরম জমা হলো কিভাবে এমন প্রশ্নে হেসে উঠেন পিআইও। তিনি বলেন, সামনে যে কোন বরাদ্দ আসলে আপনাদের সাথে নিয়েই করবো।
জানা যায়, উত্তর সরল রেড ক্রিসেন্ট আশ্রয়কেন্দ্র ১৪ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা, তোতকখালী রেড ক্রিসেন্ট আশ্রয়কেন্দ্র ১৪ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা, খুদুকখালী রেড ক্রিসেন্ট আশ্রয়কেন্দ্র ১৪লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা, বাহারছড়া রতœপুর রেড ক্রিসেন্ট আশ্রয়কেন্দ্র ১৪ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, উত্তর বাহারছড়া রেড ক্রিসেন্ট আশ্রয়কেন্দ্র ১৪ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা, বাঁশখালী ইউনাইটেড হাইস্কুল ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ১৪ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা, প্রেমাশিয়া হীড আশ্রয়কেন্দ্র ১৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা, ছনুয়া নয়াপাড়া প্রশিকা আশ্রয়কেন্দ্র তিন লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ও মধ্যম বড়ঘোনা গন্ডামারা মাতব্বর পাড়া ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র পাঁচ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্র আহবানের পরপরই কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করেন ঠিকাদাররা। এ কাজ চলাকালেই গত ২৩জুন অনুন্নয়ন রাজস্ব বাজেটের আওতায় ঘুর্ণিঝড়/দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র মেরামতের জন্য চ‚ড়ান্ত প্রাক্কলন অনুমোদন দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
ছনুয়ার তোতকখালী এলাকার আনোয়ার হোসেন নামে একব্যক্তি বলেন, সবক’টি আশ্রয়কেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ। চুনকাম ও রঙ দেওয়ার পর আশ্রয় কেন্দ্রে সৌন্দর্য্য দৃশ্যমান হলেও শিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা কিংবা বরাদ্দ অনুসারে কাজ করা হয়েছে কিনা দেখা উচিত। প্রশাসনের উচিত অন্য এলাকা থেকে প্রকৌশলী এনে কাজের তদারকি করা। শুনছি যে ঠিকাদাররা কাজ করছে তারা নাকি গোপনে কাজটি ভাগিয়ে নিয়েছেন। এমন অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পূর্বদেশকে বলেন, আজকের প্রত্যাশা নামে একটি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সময় কম ছিল এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ার জন্য কোন বরাদ্দ ছিল না তাই এই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আমি ইউএনও ম্যাডামকে বলছি এরকম যদি বরাদ্দ না থাকে ভবিষ্যতে এমনভাবে আর করবো না। প্রয়োজনে টাকা ফেরত যাবে। সেটা আসলে তড়িঘড়ি করতে গিয়ে ভুল হয়েছে। এ ধরনের ভুল আর হবে না।