নয়াপল্টন ঘিরে উত্তেজনা সংঘাত, নিহত ১

16

ঢাকা প্রতিনিধি

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নয়াপল্টন এলাকা। গতকাল বুধবার বেলা ৩টার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত একজন হাসপাতালে মারা গেছেন। এছাড়াও আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহব্বায়ক আবদুস সালাম এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর আগে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া গতকাল বিকেলে একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, নয়াপল্টন এলাকায় সংঘর্ষের সময় আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তদের মধ্যে মকবুল আহমেদ নামে ৩০ বছর বয়সী একজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ওই যুবকের শরীরে ‘ছররা গুলির চিহ্ন’ রয়েছে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু। মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত নয়াপল্টনের সংঘর্ষে আহত আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে আনা হয়। তাদের মধ্যে মকবুল মারা গেছেন। অন্যদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে, তারা হলেন রনি, মনির, আনোয়ার ইকবাল ও খোকন।
দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছি। তারা (সরকার) ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছে। সমাবেশকে বানচাল করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনার দায় সরকারকে নিতে হবে।
বিকেল ৫টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে বসে দলটির মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে ডিএমপি কমিশনার আমাকে নয়াপল্টনে আসতে বলেছেন। অথচ আসার পরে আমাকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে সেখান থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।
এদিকে নয়াপল্টন থেকে অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, অভিযানে নয়াপল্টন থেকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছি। অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। অসংখ্য সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করেছি। সেফটি ও সিকিউরিটিকে যারা নষ্ট করতে চায়, তাদের কোনোভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ ছাড় দেবে না উল্লেখ করে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা যখন দেখলাম, জনগণের জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ কার্যক্রম হচ্ছে নয়াপল্টন এলাকায় এবং পুলিশের ওপর হামলা ও বোমা নিক্ষেপ হয়েছে, তখন আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।
এর আগে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে জমায়েত বড় হয়ে রাস্তার এক পাশ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অনেকে আহত হন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, সমাবেশের স্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন এই সংঘর্ষ শুরু হলো। আজ (বুধবার) পল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভিড় করতে শুরু করে। একপর্যায়ে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে।
তবে গ্রেপ্তারের আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের এ গুলি চালানো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত।
এদিকে বিএনপি চায় তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে। কিন্তু পুলিশ বলছে, রাস্তায় সমাবেশ বা কোনো জমায়েত হওয়া যাবে না। পুলিশ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না বলে অনড় রয়েছে। এরপর আরামবাগের আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তায় সমাবেশে জন্য বিএনপি অনুমতি চাইলে পুলিশে তাতে সাড়া দেয়নি। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে টঙ্গীর বিশ্ব ইতজেমার ময়দান অথবা পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে বিএনপি চাইলে সমাবেশ করতে পারে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে পুলিশের কোনো আপত্তি নেই বলেও গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।