নৌকা প্রতীক পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ

28

পটিয়া প্রতিনিধি

পটিয়ার স্বাগতিক ইউনিয়ন হিসেবে এ ইউনিয়নের আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে পুরো পটিয়াজুড়ে। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট ৪ প্রার্থী মনোনয়ন পেতে ঢাকায় দলের হাইকমান্ডে লবিং শুরু করেছেন। উপজেলার অন্য ইউনিয়নের চেয়ে এ ইউনিয়নে আগাম নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছে। নির্বাচনী উত্তাপে কয়েক দফায় মারামারি ও মামলা এবং পাল্টা মামলার কারণে সাধারণ লোকজনের মাঝে বেড়েছে উৎকণ্ঠা। এ ইউনিয়ন থেকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া ৯ জন প্রার্থী। এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এহসানুল হক, উপজেলা আওয়ামলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাছির, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর খালেদ, ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ খোকন, যদু রঞ্জন বিশ্বাস, আনম সেলিম ও এরশাদুল আলম। এদের মধ্যে চারজন রয়েছেন হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশি। জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে বর্তমান চেয়ারম্যানের দুরত্ব বাড়ায় মারামারিসহ প্রায়শ নানা ঘটনার জন্ম হয় এ ইউনিয়নে। সবশেষ গত এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে পটিয়া মাঠে ও শোভনদন্ডীতে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত পাল্টাপাল্টি মামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ খোকন ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুল হক আসামি হন। পটিয়ায় অন্য কোন ইউনিয়নে নির্বাচনী উত্তাপ উৎসবে পরিণত হলেও এ ইউনিয়নে উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের নির্বাচনের পর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকলেও এক বছর পর থেকে দলের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে বলে জানা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা এরশাদ ইকবাল জানান, ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডস্থ কাপ্তান বাড়ির দক্ষিণ পাশে একটি প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের জন্য এমপি টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্ত ২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান এহসানুল হক জানান, গত ১০ বছরে স্থানীয় এমপির বিশেষ বরাদ্ধে ও পরামর্শে অত্র ইউনিয়নে প্রায় ১১০ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন কাজ হয়েছে। স্বাগতিক ইউনিয়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর কাজ বেশ ভালো হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হলে ইউনিয়ন মড়েলে পরিণত হবে। আগামীবারও দলের মনোনয়ন চান জানিয়ে বলেন, সুযোগ পেলে আগামী ৫ বছরে এমপি সামশুল হক চৌধুরীর সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন মোতাবেক কাজ করে এ ইউনিয়ন পরিপূর্ণ মড়েল ইউনিয়নে পরিণত করা হবে। জমির অভাবে ইউপি ভবন সুরক্ষিত করা সম্ভব হয় নি এবং তার সাথে তৃণমূলের দুরত্ব নেই। কেউ কেউ দলে নতুন এসে দুরস্ত তৈরি করেছেন তাদের স্বার্থে। তৃণমূলের সমর্থন তার পক্ষে জানিয়ে বলেন, লোকজন তার সাথে আছে বলেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কাপ্তান বাড়ি সড়কের প্রকল্প এ প্রজেক্টের অন্য কাজের সবগুলোতে সমস্যা হয়েছে। যেসব কাজ শুরুতে হয়নি, সেসব কাজ এ প্রজেক্টের আওতায় আর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রজেক্টের কোন টাকা লোপাট হয়নি। মৌখিক অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। ভালো কাজের কারণে তিনি ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে প্রশংসা পত্র পেয়েছেন বলেও দাবি করেন। আরো জানা যায়, দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে বেশ এগিয়ে আছেন আলমগীর খালেদ। জন্ম থেকে আওয়ামী লীগের পরিবারের যুক্ত থাকা এ রাজনীতিবিদের ১৯৮৭ সালে শোভনদন্ডী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু রাজনীতি। ৯০ সালে পালন করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব ও বর্তমানে পটিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এবার তিনি ইউপি নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়ে লড়তে চান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকে সুষম উন্নয়ন ও গ্রাম আদালতকে প্রতিষ্ঠানিক রুপ দেবেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের মাঝে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এ সেবার হাত আরো শক্তিশালী করতে এবং স্থানীয় এমপির উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রার্থী হচ্ছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ খোকন দলীয় মনোনয়ন পেতে এবার মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শোভনদন্ডীকে সুন্দর করে সাজানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি অনেক দুর এগিয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে তার ও দলের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মাথায় দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করেন নি। নৌকা প্রতীক পেলে তিনি অবশ্যই জয়ী হবেন।
এলাকায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দলকে সুসংগঠিত করবেন। বন্ধ করবেন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাছিরও এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। ২০১৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগে তৃণমুলের ভোটে জয় লাভ করা এ নেতার এগিয়ে চলার পথে রাজনৈতিক কারণে বার বার ছন্দ পতন হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো দমে যান নি। এবার তিনি ইউপি নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আধুনিক শোভনদন্ডী গড়তে চান উল্লেখ করে বলেন, ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করে আসছি। মনোনয়ন বোর্ড তাকে মনোনয়নের ব্যাপারে বিবেচনা করবেন জানিয়ে বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলের সিদ্ধান্ত মেনে আগামীতেও কাজ করবেন।