নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব

669

স্কুল, কলেজে শিক্ষাগ্রহণ জীবন গঠণে অবশ্যই বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সেটা পরিপূর্ণ মানুষ হতে যথোপযুক্ত নয়। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। বর্তমান সমাজটা আজ অস্থিরতায় ভরা। প্রতিমুহূর্তে কী ঘটে বলা মুশকিল। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, খুনসহ নানা অপরাধ প্রতিদিনকার খবরের শিরোনাম হচ্ছে। কেন এই অবস্থা? ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে পারছে না শিশুরাও। অধঃপতন ঘটেছে চরিত্রের। ধ্বংস হচ্ছে মনুষ্যত্বও! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেমন নিরাপদ নয় শিক্ষার্থীরা তেমনি আপন বাবা-চাচার কোলে নিরাপদ নয় সন্তানও। অন্ধকার যুগেও এ অবস্থা ছিল বলে মনে হয় না। অপরাধ করেও অপরাধীর কোন অনুশোচনা নেই। হয়ে উঠছে আরো বেপরোয়া, উচ্ছৃংখল।
আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থান একেবারে তলানীতে ঠেকেছে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা চর্চা জরুরি। জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে এর কোন বিকল্প নেই। নৈতিক শিক্ষার অভাবে পরিবার ও সমাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় যা কোনভাবেই কাম্য নয়। পরিবারে গড়ে উঠছে না নৈতিক মূল্যবোধের পরিবেশ। ধর্মীয় শিক্ষা তো কোন এক সময় বিলুপ্তই হয়ে যাবে। অথচ পরিবারে যদি নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সন্নিবেশ ঘটে, কোনদিন সে পরিবারের সন্তান লম্পট আর খারাপ চরিত্রের অধিকারী হবে না। পরিবার এবং সমাজের পরিবেশ অনৈতিকতায় ভরে থাকবেই বা না কেন যেখানে হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে অপরাধের সব উপকরণ। যে সমাজে অশ্লীলতা, অনৈতিকতা, মদ, জুয়া, নেশাজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে সে সমাজ তো ধ্বংস হওয়ারই কথা। বিলুপ্ত হবে শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান ইত্যাদি। সেখানে জেঁকে বসবে অপরাধ।
অনৈতিকতা আর অশ্লীলতা যেন দিন দিন স্বাভাবিকতা পাচ্ছে। সেগুলো যেন কোন অপরাধই নয়। অবৈধ এসব কর্মকাÐের সাথে জড়িতদের বাঁচানোর চেষ্টাও হয়। এসব দেখে সচেতন মানুষ ক্ষুব্ধ, হতাশ। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না তাদের। ধনী লোক হলেই কী সন্তানকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলতে হবে? তাকে কী নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার কোনই দরকার নেই? এসব নিয়ে প্রত্যেক পিতা-মাতা, অভিভাবককে ভাবতে হবে। যে সন্তান নেশা আর অশ্লীলতার দিকে ঝুঁকবে সে সন্তান পরবর্তী সময়ে কাল হয়ে দাঁড়াবে। বড় হলে কোনভাবেই আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
অর্থ-বিত্ত, সন্তান-সন্ততি মানুষকে অহংকারী করে তোলে আবার ভাল পথে চলার সুযোগও থাকে। দু’টি পথের মাঝে ভালো পথটিই বেছে নিতে হবে নিজের জন্য, পরিবার ও সমাজের জন্য। ধর্মীয় অনুশাসন না থাকলে মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠে। অধঃপতনের দিকে ধাবিত হওয়া এই সমাজকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হবে পরিবারকে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে অনৈতিকতা ও অশ্লীলতামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে। এসব অপরাধের সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে কঠোর আইন করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে চরিত্রধ্বংসকারী সব উপাদান, উপকরণ যেন মানুষের কাছে না পৌঁছে।
ইন্টারনেটের সব অশ্লীল সাইট ও পেজ ডিলিট করে দিতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে প্রতিটি শ্রেণিতে নৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়কে বাধ্যতামূলক করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি মা-বাবা, অভিভাবক, সচেতন সব মানুষকে এসব অনৈতিকতা ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান নিতে হবে। সবাই মিলে যৌথ প্রচেষ্টায় নৈতিক শিক্ষা চর্চার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মান করতে পারি।