নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরসমূহ কোনটা এভারেস্টের কাছে, আবার কোনটার রানওয়ে ছোট

11

পূর্বদেশ ডেস্ক
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নেপাল যতটা আকর্ষণীয়, ঠিক ততটাই কুখ্যাত দেশের বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলির জন্য। শুধু তাই-ই নয়, গত তিন দশকে ২৭টি বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই দেশ। যে তালিকায় নতুন সংযোজন ১৫ জানুয়ারি পোখরার বিমান দুর্ঘটনা। যে দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যেই ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নেপালের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি জানিয়েছে। কেন নেপালে বার বার বিমান দুর্ঘটনা হয়? ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, এর আসল কারণ নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান। আর তার থেকেও ভয়ঙ্কর যে বিষয়টি তা হল, এ দেশের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরের অবস্থান এবং সেগুলির রানওয়ে। খবর আনন্দবাজারের
পাহাড়ের কোলে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর থাকায়, হঠাৎ হঠাৎ আবহাওয়া বদলের কারণে এই সব বিমানবন্দরে বিমান নামানো অনেক বেশি বিপদসঙ্কুল হয়ে ওঠে। তা ছাড়া অত উচ্চতায় বিমানবন্দরগুলি হওয়ার কারণে তাপমাত্রা নামতেই তুষারপাতের কারণে রানওয়েগুলি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। আরও একটি কারণ হল ছোট রানওয়ে। এমন বিমানবন্দরও রয়েছে যেখানে রানওয়ে শেষেই কয়েকশো ফুট গভীর খাদ। ফলে একটু ভুলচুক হলেই সব শেষ। তাই এই সব বিপজ্জনক বিমানবন্দরে দক্ষ পাইলট ছাড়া বিমান ওঠানামা করানো হয় না।
নেপালে সব মিলিয়ে মোট ৪৩টি বিমানবন্দর আছে। তার মধ্যে ১০টি বিমানবন্দর বেশ পরিচিত। এই বিমানবন্দরগুলি যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বেশ জনপ্রিয়। তেমনই সেগুলির মধ্যে আবার কয়েকটি বিমানবন্দর রয়েছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
নেপালের সুপরিচিত বিমানবন্দরগুলি হল ত্রিভুবন, লুকলা, সিমারা, বিরাটনগর, ভরতপুর, পোখরা, নেপালগঞ্জ, গৌতম বুদ্ধ, জমসম এবং বাজুরা। তবে একমাত্র ত্রিভুবন বিমানবন্দরই আন্তর্জাতিক মানের। আর যে বিমানবন্দরগুলি বিপজ্জনক, সেগুলি হল লুকলা, সিমিকোট বা হুমলা, তালচা বা মুগু, মুস্তাং বা জমসম, ডোলপা এবং পোখরা বিমানবন্দর।
শুধু নেপাল নয়, বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর বলে মনে করা হয় লুকলাকে। এই বিমানবন্দর তেনজিং হিলারি এয়ারপোর্ট নামেও পরিচিত। এই বিমানবন্দর এভারেস্টের খুব কাছে। এই বিমানবন্দর জনপ্রিয়, কারণ এখান থেকেই এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছনো যায়।
কাঠমাÐু থেকে লুকলা যাওয়ার জন্য প্রতিদিন বিমান রয়েছে। তবে শুধু দিনের বেলাতেই এই রুটে বিমান চালানো হয়। আবহাওয়াও ভাল থাকতে হবে। না হলে বিমানবন্দর রন্ধ রাখা হয় অথবা বিমান বাতিল করা হয়। নিরাপত্তার খাতিরেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,৩৩৪ ফুট উঁচুতে রয়েছে লুকলা বিমানবন্দরটি। রানওয়েটি দৈর্ঘ্যে ১,৭২৯ ফুট এবং প্রস্থে ৯৮ ফুট। রানওয়ের চারপাশে প্রায় ২ হাজার ফুট গভীর খাদ।
নেপালের আরও একটি বিপজ্জনক বিমানবন্দর হল সিমিকোট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,২৪৬ ফুট উঁচুতে এই বিমানবন্দর। কার্নালি প্রদেশের হুমলা জেলায় এই বিমানবন্দর। এটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১,৮০১ ফুট।
সিমিকোট নেপালের একমাত্র বিমানবন্দর যেটি ন্যাশনাল রোড নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। পশ্চিম নেপালের ডোলপায় যাওয়ার জন্য এই বিমানবন্দর প্রবেশপথ হিসাবে কাজ করে। তা ছাড়া নেপাল থেকে কৈলাস এবং মানস সরোবরে যাওয়ার মূল প্রবেশদ্বার হল এই সিমিকোট।
নেপালের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর হল তালচা। এটি মুগু বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৯৭৩ ফুট উঁচুতে গড়ে তোলা হয়েছে এই বিমানবন্দরটি। এখানে বছরের বেশির ভাগ সময় বরফ পড়ে। ফলে রানওয়ে পিছল থাকে, তা ছাড়া অতিরিক্ত ঠাÐার কারণে বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া নানা কারণে দুর্ঘটনার বিপুল আশঙ্কা রয়েছে এই বিমানবন্দরে।
২০১০ সালের ২৬ মে তারা এয়ারের ডিএইচসি-৬ টুইন অটার বীরেন্দ্রনগর বিমানবন্দর থেকে ক্রু-সহ ২১ জন যাত্রীকে নিয়ে তালচাতে আসার সময় ওড়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে কেবিনের দরজা খুলে যায়। তার পর বিমানটিকে ফের বীরেন্দ্রনগরে জরুরি অবতরণ করানো হয়। ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর সুরখেত বিমানবন্দর থেকে তালচাতে নামার সময় রানওয়েতে বিমানের চাকা পিছলে গিয়েছিল। ১১ জন আহত হয়েছিলেন।
নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরের মধ্যে আর একটি হল জমসম। মুস্তাং নামেও পরিচিত এটি। মুস্তাং জেলার প্রবেশদ্বার এই বিমানবন্দর। যে পথে জমসম, কাগবেনী, তাংওয়ে, লো মাংথাং এবং মুক্তিনাথ মন্দিরের মতো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৯৭৬ ফুট উঁচুতে এই বিমানবন্দর। খুব জোরে হাওয়া বইলে, খারাপ আবহাওয়া থাকলে এই বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়। সকালের দিকে প্রচÐ জোরে হাওয়া বয়। তা ছাড়া সারা বছর এই বিমানবন্দরের দৃশ্যমানতা কম থাকে।
নেপালের আরও একটি বিপজ্জনক বিমানবন্দর হল ডোলপা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই বিমানবন্দর ৮,২০০ ফুট উঁচুতে। এটি জুফল বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২,১৭৫ ফুট, প্রস্থ ৯৮ ফুট।
নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরের তালিকায় রয়েছে পোখরার নামও। ১৯৫৮ সালে তৈরি করা হয় এই বিমানবন্দরটি। এখান থেকে কাঠমাÐু এবং জমসমে নিয়মিত বিমান চলাচল করে। পাহাড়ের কোলে এই বিমানবন্দর। রানওয়েও ছোট। এ বছরের ১৫ জানুয়ারি কাঠমাÐু থেকে পোখরা আসার পথে রানওয়ে ছোঁয়ার আগেই একটি যাত্রিবাহী বিমান ভেঙে পড়ে। মৃত্যু হয়েছে ৬৮ জনের।
এই প্রথম নয়, এর আগেও ২০০২ সালের ২২ আগস্ট সাংগ্রী এয়ারের বিমান জমসম থেকে পোখরা যাওয়ার পথে পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়ে ছিল। ৩ জন ক্রু এবং ১৫ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান পোখরা থেকে জুমলা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে ভেঙে পড়েছিল খারাপ আবহাওয়ার কারণে। ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়।