‘নেট মিটারিং’ গ্রাহক সৃষ্টির নতুন লক্ষ্যমাত্রা

43

প্রতিটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে এ অর্থবছরের মধ্যে ১০০ জন করে ‘নেট মিটারিং’ গ্রাহক সৃষ্টির নতুন লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতিতে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা যেমন উপকৃত হবেন, জাতীয় গ্রিডেও যুক্ত হবে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ।
নেট মিটারিং পদ্ধতি হলো, গ্রাহক নিজের আঙ্গিনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ব্যবহারের পর অতিরিক্ত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করেন। বর্তমানে ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের অনেক দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এর আগে প্রতিটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে বছরের মাঝামাঝি সময়ে দুই মাসের টার্গেট দিয়ে ২০ জন করে নেট মিটারিং গ্রাহক সৃষ্টি করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ছাড়া সবাই এই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার মধ্যেই নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগ মনে করছে, অর্থবছরের বাকি ৬ মাসে ৬টি বিতরণ কোম্পানি ১০০ জন করে নেট মিটারিং গ্রাহক সৃষ্টি করলে ৬০০ গ্রাহকের আঙ্গিনায় সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। এতে গ্রাহক ও সরকার উভয় পক্ষেরই লাভ।
নেট মিটারিং পদ্ধতিতে গ্রাহক নিজের আঙ্গিনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ব্যবহার শেষে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করেন। যখন গ্রাহকের নিজের উৎপাদিত বিদ্যুৎ থাকবে না, তখন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এতে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলে সাশ্রয় হবে। আবার সরকারের তহবিল থেকেও কোনও অর্থ খরচ হবে না।
নেট মিটারিং পদ্ধতিতে গ্রাহকের এলাকায় একটি মিটার বসানো হবে। ওই মিটারে গ্রাহকের ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চলে যাবে গ্রিডে। মাস শেষে গ্রাহক গ্রিড থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন তা থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দাম দিয়ে বিল করা হবে। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলে বড় রকমের সাশ্রয় হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত অক্টোবরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) ৪টি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ৩৪টি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ৩৬টি এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ৫টি নেট মিটারিং সিস্টেম চালু করেছে। নেসকো এখন পর্যন্ত কোনও নেট মিটারিং চালু করতে পারেনি। গত নভেম্বরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সফলতা পেলেও অন্য বিতরণ কোম্পানি ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে ২০ জন গ্রাহককে নেট মিটারিংয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্য বেঁধে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কেবল আরইবি এই লক্ষ্য পূরণ করে জাতীয় গ্রিডে ২ দশমিক ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করেছে। অন্য ৫ বিতরণ কোম্পানি মিলে মাত্র ৪০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করেছে। অর্থাৎ প্রতিটি বিতরণ কোম্পানি ১০০ কিলোওয়াটের নিচে বিদ্যুৎ যোগ করেছে।
এ অবস্থায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সভায় বলা হয়, সব বিতরণী সংস্থাকে নেট মিটারিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং এই অর্থবছরে কমপক্ষে ১০০টি করে সিস্টেম চালু করতে হবে। সভায় শহর এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে তাদের ব্যর্থতার কারণ খুঁজে দেখতে নির্দেশও দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রধান উৎস হতে পারে সৌরবিদ্যুৎ। দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতে সোলার হোম সিস্টেম বসিয়ে ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, যা বিভিন্ন দেশ উদাহরণ হিসেবে নিয়েছে।’ তবে দেশে ভূমির অপর্যাপ্ততা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভূমির অপর্যাপ্ততার কারণে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সাড়ে তিন একর জমি প্রয়োজন হয়। এভাবে ১০০ মেগাওয়াটের জন্য দরকার হয় ৩৫০ একর। সঙ্গত কারণে নেট মিটারিং জনপ্রিয়তা পেলে দেশে সবুজ জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।’
ঢাকার বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী মিটারিং সিস্টেম করে যাচ্ছি। এই পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৫টি সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমে ২০টি স্থাপনের টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাশ্রয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। বড় লোডের গ্রাহকদের তুলনায় কম লোডের গ্রাহকরা বেশি। তবে সব মিলিয়ে শিল্প, আবাসিক সব ধরনের গ্রাহকই পাওয়া যাচ্ছে।’