নীল পাখিটির সবুজ ডিম

225

বৈশাখী রোজ সকালে ছাদে যায়। কখনও সে একা যায় আবার কখনও তার নানা ভাইয়ের সাথে। ছাদে তাদের অনেকগুলো গাছ আছে। ফুল গাছ, ফল গাছ, এলোভেরা, ক্যাকটাস এসব গাছে পানি দিতেই ওরা ছাদে যায়। বৈশাখীর নানা বলেন সকালের বাতাস গায়ে লাগালে সুস্থ থাকা যায়। সকাল-বিকাল হাঁটা চলা করা শরীরের জন্য খুব ভালো।
আজ খুব ভোরবেলা বৈশাখী ছাদে এসেছে। ছাদে এসে গাছে পানি দিতে যাবে এমন সময় দৈখে পানির বালতির ভেতর একটা পাখি। পাখিটা পানির ভেতর ভিজে একাকার। হাবুডুবু খাচ্ছে। বৈশাখী বালতির ভেতর হাত ডুবিয়ে পাখিটাকে তুলে আনে। কি সুন্দর একটা পাখি! পাখিটির ঠোঁট দুটো লাল টুকটুকে, মাথার দিকে হালকা হলুদ আর শরীরটা নীল রঙের। এতো সুন্দর পাখি বৈশাখী আগে কখনও দেখেনি। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে শুধু মানুষ না পশুপাখিরাও নাজেহাল। তাই নানা ভাই ছাদে এক বালতি পানি রেখে দেয় যাতে পশুপাখিরা এখান থেকে পানি পান করতে পারে।
হয়ত এই পাখিটা পানি পান করতে এসে বালতির ভেতর পড়ে গেছে। সারা রাত পানির ভেতর হাবুডুবু খেয়ে পাখিটা ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে। বৈশাখী পাখিটাকে কাপড় দিয়ে মুছে দেয়। পাখিটা একটু সুস্থ হয়। এমন সময় সামনের আমগাছ থেকে আরেকটা পাখি ডেকে ওঠে। বৈশাখী তাকিয়ে দেখে এই পাখিটার মতো আরেকটা পাখি গাছের ডালে বসে ডাকছে। বৈশাখী বুঝতে পারে ঐ পাখিটা এই পাখিটার সঙ্গী পাখি। বৈশাখী ভেজা পাখিটাকে একটু সুস্থ করে চিলেকোঠার উপর রেখে দেয়। বৈশাখী পাখিটাকে রেখে আবার বালতির কাছে যায়।
হায় আল্লাহ! পানির ভেতর কি সুন্দর একটা ডিম। বৈশাখী হাত দিয়ে ডিমটা তুলে নেয়। ডিমটা হালকা সবুজ রঙের। চমৎকার ডিমটা দেখে বৈশাখীর মনটা ভরে গেল। ডিমটা তুলে সে চিন্তায় পরে গেল পাখিটাকে ডিমটা সে কি করে দেবে? পাখির তো আর হাত নেই যে ডিমটা ওর হাতে ধরিয়ে দেবে। আর তাছাড়া পাখিটা কেন এই পানিতে ডিম দিল? নানা চিন্তা ভাবনা করতে করতে বৈশাখী ডিমটা নিয়ে ঘরে চলে এলো। ঘরে এসে মাকে ডিমটা দেখালো।
‘মা দেখ কি সুন্দর একটা ডিম।’
‘হ্যাঁ, তাই তো। এই ডিম তুমি কেথায় পেলে?’
মায়ের কথার উত্তরে বৈশাখী পাখির ঘটনাটা মাকে খুলে বললো।
সব শুনে মা বললো ‘তুমি একটা খুব ভালো কাজ করেছো। তবে ডিমটা ওখানে রেখে এলেই ভালো করতে।’
‘কিন্তু মা পাখিটা ডিম কি করে নিত? আর পাখিটা পানির ভেতর ডিম কেন পাড়লো?’
‘পাখিটা ডিম মুখে করে নিয়ে যেত। আর রাতে পানির ভেতর পড়ে পাখিটার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তখন ওর পেটে ডিম ছিলো। পাখিটা বাঁচার তাগিদে যখন ছটপট করছিলো তখন ও ডিম পেড়ে ফেলেছে।’
‘মায়ের কথা শুনে পাখিটার জন্য খুব মায়া হয় বৈশাখীর। আহারে… কত কষ্টই না পেয়েছে পাখিটা!’ পাখির কষ্টে ওর মনটা মুচড়ে ওঠে।
‘আচ্ছা মা এই পাখিটার নাম কি?’
‘এই পাখিটার নাম তো আমি জানি না। পৃথিবীতে অনেক পাখি আছে,সব পাখি কি চেনা যায়?। চলো এবার ডিমটা পাখিটার কাছে রেখে আসি।’
বৈশাখী ওর মায়ের সাথে ছাদে গেল। পাখিটা তখনও বসে ঝিমুচ্ছে। ও উড়তে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ওর ডান পায়ে মনে হয় ব্যথা পেয়েছে।
মা চট করে তেল আর হলুদ এনে পাখিটার পায়ে লাগিয়ে দেয়। তেল-হলুদ এন্টিবায়োটিকের কাজ করে। দ্রæত ব্যথা সেরে যায়।
কিছুক্ষণ পর মনে হয় পাখিটা একটু সুস্থ অনুভব করে। উড়তে চায়। বৈশাখী ওর পাশেই ডিমটা রেখে দেয়। তারপর ওরা একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। পরম মমতায় পাখিটা ডিমটা পাখার নিচে নিয়ে একটু বসে থাকে। হয়ত সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে ডিমটা সে ফিরে পেয়েছে। এভাবে কয়েক মিনিট সময় পার হয়।
ওদিকে অন্য পাখিটা সঙ্গী পাখির মাথার উপর দিয়ে উড়ছে আর ডাকছ। হয়ত বলছে ‘উড়তে চেষ্টা করো। তুমি পারবে।’ হঠাৎ করে পাখিটা ডিমটা খপ করে দুই ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলো। তারপর আস্তে আস্তে একটু দৌঁড় দিয়ে বাতাসে ভেসে উঠলো। ওর সাথে সঙ্গী পাখিটি ও যোগ দিল। বাতাসের তালে তালে পাখি দুটি উড়ে চলে গেল চোখের সীমানা ছাড়িয়ে।
বৈশাখী তখনও চেয়ে রইলো পাখি দুটির চলে যাওয়া পথের দিকে। খুশিতে ওর মুখ ঝলমল করে উঠলো।