নীরদ মজুমদার

0

বাঙালি চিত্রশিল্পী। বিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতীয় আধুনিকতাবাদী নবীন প্রজন্মের ও কলকাতা গ্রæপের অন্যতম চিত্রশিল্পী ছিলেন তিনি। ইউরোপীয় ছবির আঙ্গিকে ভারতীয় শৈলীর অপূর্ব সংমিশ্রণ করে নিজস্ব আঙ্গিকে শিল্প সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার অদ্বিতীয় কথাশিল্পী কমলকুমার মজুমদারের এবং চিত্রশিল্পী শানু লাহিড়ীর সহোদর। নীরদ মজুমদারের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মে। তিনি পিতা প্রফুল্লকুমার মজুমদার ও মাতা রেণুকাময়ী দেবীর সাত সন্তানের একজন। বাবা প্রফুল্লচন্দ্র ছিলেন পুলিশ অফিসার। মা ছিলেন বাড়ির সাংস্কৃতিক পরিমÐলের এক নিবেদিত প্রাণ। ছোটবেলাটা নীরদের সেই সাংস্কৃতিক পারিবারিক আবহাওয়াতেই কেটেছে। শৈশব থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল তার। তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত শহর টাকিতে। তবে তাঁদের কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে একটা ভাড়াবাড়ি ছিল। বছর ছয়েক বয়সে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুরের ‘বিষ্ণুপুর শিক্ষা সংঘ’ স্কুলে নীরদ ও তাঁর বড় ভাই কমলকুমারের সাথে একই শ্রেণিতে ভর্তি হন। কয়েক বছর পর সেখান থেকে কলকাতার ক্যাথিড্রাল মিশনারি স্কুলে। এখানেও বেশি দিন তাঁর মন টেকেনি। সংস্কৃত ভাষা শিখতে ভর্তি হলেন ভবানীপুরের এক সংস্কৃত টোলে। নীরদ মজুমদার ছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদারের (১৯১৪-১৯৭৯) কনিষ্ঠ ভ্রাতা। তাঁদের কনিষ্ঠা ভগিনী শানু লাহিড়ী (১৯২৮-২০১৩) ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রকর ও চিত্রকলার প্রশিক্ষক। নীরদ মজুমদার শিল্পকলার প্রথম পাঠ নেন কলকাতার ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্টে। তার প্রথম শিক্ষক ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাত্র চিত্রশিল্পী ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার। শৈপ্লিক দক্ষতার জন্য পাঠ শেষে ‘নরম্যান বøান্ট স্মৃতি পদক’ লাভ করেন।
প্রদোষ দাশগুপ্ত, রথীন মৈত্র এবং পরিতোষ সেন প্রমুখ এক ঝাঁক নবীন প্রজন্মের আধুনিকতাবাদীদের নিয়ে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নীরদ মজুমদার গড়ে তোলেন ক্যালকাটা গ্রæপ। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা গ্রæপে তার একক প্রদর্শনী হয়। ইতিমধ্যে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সরকারের বৃত্তি পেয়ে নীরদ প্যারিসে যান সেখানে তার শিক্ষাকেন্দ্র ছিল আঁদ্রে লেৎ-এর অ্যাকাডেমি। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউসে এক প্রদর্শনীতে অংশ নেন এবং কিছুদিন সেখানে আর্ট গ্যালারিতে কিউরেটার হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে নীরদ প্যারিসে ফিরে আসেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে ‘গ্যালরী বারবিজ’ -এ তার একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপে তিনি দশ বৎসর বসবাস করেন এবং সেখানে অবস্থানকালে কনস্ট্যান্টিন ব্রানসুয়েসি, জর্জেস ব্রাক এবং জিন জেনেটের প্রমুখ অনেক লেখক এবং শিল্পীর সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল। সাহিত্যের প্রতি নীরদ মজুমদারের একটা আকর্ষণ ছিল। বড় দাদা কমলকুমার মজুমদারের পরোক্ষ প্রভাব ছিল। তিনি একসময় তার স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে ভক্তকবি রামপ্রসাদের গানের ফরাসি অনুবাদ করেছিলেন। নীরদ মজুমদার তাঁর প্রয়াণের চার বছর আগে দেশ সাহিত্য পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লেখেন আত্মজীবনীমূলক রচনা পুনশ্চ প্যারী। এটি তাঁর মৃত্যুর পর আনন্দ পাবলিশার্স কলকাতা কর্তৃক ১৯৮২-এ পুস্তুকাকারে প্রকাশিত। সূত্র: বাংলাপিডিয়া