নিয়ন্ত্রনহীন নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণের কষ্ট লাঘবে এখনই পদক্ষেপ নিন

7

কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত স্বাভাবিক হলেও আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হয়তো আরো সময়ের দরকার। কিন্তু এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ মারাত্মক সংকটে ফেলছে বিশ্ববাসীকে। মহামারী থেকে মুক্তির স্বাদ নেয়ার আগেই এ যুদ্ধ মানুষের জীবনযাত্রায় আরেক দফা ছন্দপতন ঘটিয়ে চলছে। এ অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে মানুষের জীবন। নিত্যপণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। গত মাসে সরকার আকস্মিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করাই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের কয়েক লাখ মানুষ চাকুরিহারা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে, প্রবাসীদের যারা পুনরায় যেতে পারেনি তারাও বেকারত্ব বরণ করেছে। এ অবস্থায় আরেকদফা জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে মারাত্মক প্রভাব পড়া শুরু করেছে। মানুষ কতটা অসহায় ও কষ্টে জীবন যাপন করছে তা চিন্তা করা যায় না। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের ভাড়া। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বা টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটাই স্পষ্ট। গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া পুনর্নিধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় প্রয়োজন তবে একবারে এত বেশি না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে করা যেত। গত ফেধ্রুয়ারির শেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম হয়ে ওঠে অস্থিতিশীল। এরপর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কয়েক বছরের মধ্যে শীর্ষে ওঠে। প্রতি ব্যারেলের দর ১১০ ডলারে গিয়ে ঠেকে। যদিও সম্প্রতি তা ৯৪ ডলারে নেমেছে। জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ বাজারে দর সমন্বয় করেনি। তবে বিশ্ববাজারের পড়তি সময়ে এসে হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডিজেলের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ ৮০ টাকা লিটারের ডিজেল এখন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়। আগে কখনোই এর দাম এত হারে বাড়েনি। ৯ মাস পরই জ্বালানির দাম আবারো বাড়ল। এর আগে ৩ নভেম্বর জ্বালানি তেলের দাম ২৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। জ্বালানি তেল এমন একটা পণ্য যার মূল্য বাড়লে মূলত মানুষের নিত্য ব্যবহার্য ও খাদ্যসামগ্রিসহ সবকিছুর দামই বেড়ে যায়। সম্প্রতি সরকার তেলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা কমালেও এর কোন প্রভাব বাজারে পরেনি। বরং নানা অজুহাতে চালসহ নিত্য পণ্যেরদামে কোন প্রভাব পড়েনি। শুক্রবার চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি সহযোগী পত্রিকায় পণ্যমূল্য বৃদ্ধিও যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে চোখ কুচকে যাবে। ডিম থেকে শুরু করে শাকসবজি পর্যন্ত কয়েকগুণ বেড়ে গেছে পণ্যমূল্য। এ অবস্থায় কী করে পরিবারের খরচ মেটানো হবে, এটাই মানুষের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে খাপ খায় না তখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চরম কষ্টে পড়ে। আর নিম্নআয়ের বা বেকার মানুষের অবস্থা হয় আরো দুর্বিষহ। সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশের পরিবহন ব্যয় রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। গত এক বছরে মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ৯১ শতাংশ। যাতায়াতে সাধারণ মানুষকে কয়েক গুণ ব্যয় তো করতেই হচ্ছে, উপরন্তু পণ্য পরিবহনে ব্যয় বাড়ায় এরও বিরূপ ধাক্কা লেগেছে বাজারে। আবার নতুন করে পরিবহন খাতে এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন ভাড়ানো ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার পরিস্থিতি যে কোনো মূল্যে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। মানুষের জীবনযাপন করতে হবে নির্বিঘ্ন। সরকার নিজেদের জনগণের সরকার হিসেবে দাবি করে। আমরাও বিশ্বাস করি, জনগণের নির্বাচিত বর্তমান সরকার নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের কথা প্রথমেই ভাববে। সাধারণ মানুষ ভালো নেই এ কথা সরকারের অজানা থাকার কথা নয, সুতরাং মানুষের জীবনমান রক্ষার্থে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিবে আমাদের সরকার- এটাই প্রত্যাশা।