নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

7

পুরো নগরজুড়ে মশার উপদ্রব বেড়েছে। কোথাও দাঁড়ানোর, বসার এমনকি ঘুমানোরও উপায় নেই। ঝাঁকে ঝাঁকে মশার দল আক্রমণ করে নগরবাসীকে অতীষ্ঠ করে তুলছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, হালিশহরসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে মশার উদ্রব বেশি, বাকি ওয়ার্ডগুলোতে নিয়ন্ত্রণে। তথ্যটি আদৌ সঠিক নয় বলে আমাদের ধারণা। আমরা মনে করছি, নগর পিতার কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, চট্টগ্রাম নগরীর এমন কোন ওয়ার্ড নেই যেখানে মশার উপদ্রব বাড়েনি। যদিও চসিক কর্তৃপক্ষ বলে আসছেন, প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ড এ মশার ওষুধ চিটানো হচ্ছে, বাস্তবে এমন অনেক ওয়ার্ড রয়েছে, যেখানে মাসে একবারও ওষুধ ছিটাতে কাউকে দেখা যায়নি। তবে যেসব এলাকায় কাউন্সিলরা সক্রিয় সেখানে কিছুটা মশক নিধন কার্যক্রম দেখা যায়। এক্ষেত্রে সিটি মেয়রের উচিৎ তদারকি বাড়ানো। ইতোমধ্যে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে কাউন্সিলরদের দায়িত্বশীল ভুমিকার কথা স্মরণ করে দিয়েছেন। গতকাল রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত চসিকের মশক নিধনের ক্র্যাশ প্রোগ্রামের সংবাদে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী মশা নিয়ন্ত্রণে হালিশহর ফইল্যাতলী বাজার সংলগ্ন মহেশখালা খাল পরিস্কার করে তাতে ওষুধ ছিটানোর মাধ্যমে নগরীতে মশকনিধনের ক্র্যাশ পোগ্রামের উদ্বোধন করছেন। এসময় মেয়র বলেছেন, মশা কমাতে কাউন্সিলরদের ভূমিকা রাখা দরকার। ওয়ার্ড পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কাউন্সিলারদের তদারকি করতে হবে। সামনে যেহেতু ডেঙ্গুর মৌসুম তাই মশা নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরদের আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ সচেতনতা ও মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কাউন্সিলরদের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মেয়র মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি গবেষণাদল গঠন করি। উনাদের বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শের আলোকে বর্তমানে সর্বাধুনিক মশার ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। আমাদের কাছে মশার ওষুধের পর্যাপ্ত মজুদও আছে। তবে, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে চাই জনসচেতনতা। নিয়ন্ত্রণে গবেষণার জন্য গবেষণাগার চালুর ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি এপ্রিলের মধ্যে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের ৮ম তলায় পরীক্ষাগারটি চালু করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। আমরা সিটি মেয়রের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমরা জানি, মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণের পর অগ্রাধিকার হিসেবে মশক নিধনের কার্যক্রমে গতি আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে একটি গবেষণা টিমও গঠন করেছিলেন। তারা নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন, পরামর্শ ও প্রস্তাবনা দিয়েছেন। আমরা যতটুকু জানি, প্রাকৃতিক উপায়ে মশক নিধনের একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ নেযা হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা যতটুকু জানি, উদ্যোগটি নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। আমাদের ধারণা মেয়র মশক নিধনে যে গবেষণা সেন্টারের কথা বলেছেন, তা পূর্বের গবেষণার ধারাবাহিকতায় হবে। এখান থেকে কার্যকর কোন প্রস্তাবনা বের হয়ে আসলে এবং যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে নগরবাসী কিছুটা স্বস্তি পাবে। মেয়র যে কথাটি বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার জীবনচক্রও যাচ্ছে বদলে। এজন্য মশা নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় জানতে এপ্রিলের মধ্যে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের ৮ম তলায় মশা নিয়ে গবেষণার জন্য পরীক্ষাগারটি চালু করা হবে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখব, কোন ধরনের ওষুধ কোন ধরনের মশার জন্য কার্যকর। এরপর গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক ওষুধ ছিটানো এবং কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সিটি মেয়র আরো বলেছেন, কেবল ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না, যদি না আমরা নিজেদের বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি অপসারণ না করি। নাগররিকদের প্রতি আহবান, যাতে তারা প্রতি তিনদিনে একদিন বাসায় জমে থাকা পানি অপসারণের মাধ্যমে মশার প্রজননের সুযোগ কমান। নালা-খালে জমে থাকা পানি মশার গুরুত্বপূর্ণ প্রজননক্ষেত্র। এজন্য প্রতিদিন বিভিন্ন নালা-খাল পরিষ্কার করছি আমরা। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ মহেশখাল পরিষ্কার করছি। নালা-খালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ থাকলে জলাবদ্ধতা হবে না, যা মশা কমাতে সহায়ক। ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করায় এক সপ্তাহের মধ্যে মশার প্রকোপ কমবে বলে আশা করছি। আমরা মনে করি, নালা, নর্দমা ইত্যাদি পরিস্কার করার ক্ষেত্রে চসিকের প্রধান দায়িত্ব। ক্ষেত্রে মেয়র মহোদয় ও কাউন্সিলরদের তদারিকিই পারে মশামুক্ত এবং পরিচ্ছন্ন একটি নগর গড়ে তোলা।