নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

11

দেশের নয় শুধু দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে। কিন্তু বেপরোয়া গতির গাড়ি ও দুর্ঘটনার কারণে আজ অনিরাপদ হয়ে উঠেছে টানেলটি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা এমনকি দুর্ঘটনায় প্রাণ সংহারের মত ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও দর্শনার্থী আতঙ্কিত। এতে টানেলের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির সমূহ শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া জরুরি। গতকাল বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামবাসীর বহু কাক্সিক্ষত ও স্বপ্নের টানেল গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। পরের দিন টানেলটি সর্বসাধারণের গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেওয়ার দিন রাতেই নির্ধারিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর ঘটনা ঘটছে। এতে প্রথম দিনেই দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, কতেক ধনির দুলাল টানেলের ভিতর ‘গাড়ির রেস’এর কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতার ওই দৃশ্য ধরা পড়ে টানেলের সিসি ক্যামেরায়। ওইদিন রাত তিনটায় টানেলের আনোয়ারা প্রান্তের টোল প্লাজা অংশে আন্ডারভিহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম সংলগ্ন ব্যারিয়ারে ধাক্কা দেয় একটি প্রাডো গাড়ি। তাতে ব্যারিয়ারটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্বোধনের সপ্তাহের মধ্যেই টানেলের ভিতর একটি কারের পেছনে আরেকটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। ১০ নভেম্বর টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে টোল বক্সের আগে আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বাস উল্টে একজন নিহত হন। একের পর এক দুর্ঘটনাতেও টানেলে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা বন্ধ করা যায়নি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে বেপরোয়া গতির একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা লাগে। এতে গাড়িটি উল্টে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা একজন নৌবাহিনীর সদস্যসহ কয়েকজন আহত হন। গত ২৯ অক্টোবর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টানেলে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হলে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পুলিশ বেশকিছু গাড়ির বিরুদ্ধে মামলাও দেয়। এতো কিছুর পরও টানেলে প্রবেশের পর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অনেকে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলছেন। অথচ টানেলে গাড়ি থামানো এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষেধ। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অমান্যকারীদের শনাক্ত করতে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পূর্বদেশ প্রতিবেদক বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের উপপরিচালক (অ্যাপ্রোচ রোড, সার্ভিস ফ্যাসিলিটিজ ও এনভায়রনমেন্ট) মো. আবুল কালাম আজাদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, টানেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা বলতে ভিতরে একটি, পতেঙ্গা প্রান্তে একজন মারা যাওয়া আর আনোয়ারা প্রান্তে মঙ্গলবার দুর্ঘটনা। তাছাড়া ছোটখাট কিছু ঘটনা ঘটেছে। মূলত অতিরিক্ত স্পিডের কারণে ঘটেছে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা। স্পিড কমানোর জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সকল প্রসেস শেষ করেই ক্যামেরা বসাতে একটু সময় লাগবে। তবে মূল কথা হচ্ছে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা মনে করি, সচেতনতার পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ২৯ অক্টোবরের পর যেসব দুর্ঘটনার পর মামলা হয়েছে, সেগুলো দ্রæত শেষ করে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করা হলে গাড়ি চালকরা কিছুটা হলেও সচেতন হবে আশা করা যায়।
আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি সুড়ঙ্গ। এ টানেলের ভিতরে এবং পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে গাড়ি চালানোর জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। টানেল এলাকায় আসলেই রেডিওতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুনানো হচ্ছে নির্দেশনা। এরপরও টানেল চালুর দিন থেকেই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন অনেকে। ফলে এরই মধ্যে ঘটেছে কয়েকটি দুর্ঘটনাও। আর এসব দূর্ঘটনার মূলে রয়েছে গাড়ির অতিরিক্ত গতি। বাঙালিরা নতুন যে কোন বিষয়ে অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ হয়ে উঠে। তাদের উচ্ছ্বাস ও আনন্দ অনেকসময় বড় দূর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠে। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও আমরা তা লক্ষ করেছি। ক্রমান্বয়ে এ আবেগ ও উচ্ছ্বাস হয়ত লোপ পাবে। তবে টানেল যাতে অক্ষত থাকে, তার সৌন্দর্য ও নন্দনত্ব যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বঙ্গবন্ধু টানেলের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বশীলরা আরো বেশি সজাগ থাকবেন এবং নিরাপদ টানেল নিশ্চিত করবেন-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।