নিষেধাজ্ঞা শেষ, সাগরে যেতে প্রস্তুত জেলেরা

47

আজ শেষ হচ্ছে সাগর ও নদীতে মাছ ধরার ওপর সরকার প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশের সুষ্ঠু প্রজনন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে সরকার। আজ রাত থেকে নদী ও সমুদ্রে মৎস্য আহরণে যেতে পারবেন জেলেরা। ফলে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে জেলেদের মাঝে। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও জাল নিয়ে সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তারা।
চলমান করোনা মহামারির কারণে বাইরে কোনো কাজ করতে পারেননি জেলেরা, অন্যদিকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্টের অন্ত ছিল না জেলেদের। জাল ও জল নিয়েই জেলেদের কাজ। তাই মাছ ধরা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে তাদের কষ্ট বেড়ে যায়।
জামাল উদ্দিন নামে এক জেলে বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। যদিও নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে সরকার থেকে ৪০ কেজি চাল দিয়েছে। কিন্তু আমাদের পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী তা খুবই অপ্রতুল।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্রে মাছ শিকার ছাড়া আর কোন পেশায় অভিজ্ঞতা নেই। তাই অপেক্ষায় ছিলেন ভরা মৌসুমে ইলিশ শিকারের মাধ্যমে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর। সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা মেনে সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাননি। তাই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে বলে জানান তিনি।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্বজুড়ে লকডাউন অবস্থায় প্রকৃতিতে দূষণের মাত্রা কমে যাওয়া এবং বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও মজুদ, সংরক্ষণ এবং সহনশীল মাছ আহরণ নিশ্চিত করতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার কারণে এবার ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, আমরা সরকার প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে সব সময় জেলেদের উদ্বুদ্ধ করেছি। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের অর্থকষ্ট দূর করার জন্য সরকারের দেওয়া চাল তাদের মাঝে সুষমভাবে বন্টন করেছি। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিয়েছি। সবকিছু সঠিকভাবে মেনে চলার কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মৎস সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ নিয়েছি। এই মৎস্য সপ্তাহে আমরা মাছ সংরক্ষণ, মাছ চাষের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এছাড়াও আমরা মৎস্য আইন অনুযায়ী পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুরের চাষ বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে ইলিশের উৎপাদন পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। চলতি মৌসুমে তা ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এক দশক আগেও দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। দেশের জলসীমার প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ইলিশের অভয়াশ্রম। ক্রমবর্ধমান ইলিশ উৎপাদনের এই প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশকে ইলিশ উৎপাদনের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একইসঙ্গে ইলিশ উৎপাদনেও বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে।
জানা যায়, সরকারি হিসেবে আগে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাগরে ইলিশ আহরণের মৌসুম ধরা হলেও এখন প্রজনন মৌসুম বাদ দিয়ে পরবর্তী তিন মাসও ইলিশ আহরণের মৌসুম হিসেবে গণনা করা হয়। মা ইলিশের ডিম ছাড়ার কারণে আশ্বিনী পূর্ণিমায় (অক্টোবর) মা ইলিশের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে সরকার দেশের সমুদ্র উপকূল নদী ও নদীর মোহনায় ইলিশ আহরণে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। শুরুতে এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১১ দিন থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা বাড়িয়ে সর্বশেষ ২২ দিন করা হয়। এতে বাড়ছে ইলিশের আকার, ওজন এবং আহরণের পরিমাণ।