নির্বাচন প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে উজ্জীবিত তৃণমূল

26

রাহুল দাশ নয়ন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঈদের পরেই সংগঠন গোছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও সম্মেলন করে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চায় দলটি। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কয়েকদফা চট্টগ্রাম সফর করে বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা। আগামী দুইমাসকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি দলে বেড়েছে সাংগঠনিক ব্যস্ততা। ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত নেতৃত্ব পরিবর্তনের আভাস মিলছে। জাতীয় নির্বাচনকে উপলক্ষ করে একপ্রকার নড়েচড়ে বসছে সরকারি দলের নেতারা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংগঠন গুছিয়ে নিতে দলীয় সভানেত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে আনতে চাই। দক্ষিণ জেলা ও মহানগরে সম্মেলন করতে চাইছি। দক্ষিণ জেলায় সংগঠনে গতি ফেরাতে সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে।’
চলতি মে মাসেই বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো। গত ১৪ মে জিইসি কনভেনশন সেন্টারে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভা থেকেই সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী ২১ মে আটটি উপজেলায় একযোগে বর্ধিত সভা করে সাংগঠনিক প্রতিবেদন দিতে আটটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। আসছে ১০ জুন অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির বর্ধিত সভা। এ সভা থেকেই উপজেলা ও জেলা সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হবে। ইতোমধ্যে জুন-জুলাইয়ে উপজেলা সম্মেলন ও সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জেলা সম্মেলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে সভা করে কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ইউনিট সম্মেলন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক নিরসনে গঠন করা হয়েছে সমন্বয় কমিটি। গত ৯ মে নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা থেকে সমন্বয় কমিটিগুলোকে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই ওয়ার্ড ও ইউনিটে সভা করে নগর কমিটির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ২৫ মের মধ্যে অসমাপ্ত ইউনিট কমিটিগুলোর সম্মেলন শেষ করে জুনের শুরুতেই ৪৪টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রম হাতে নিতে চাইছে নগর আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে জুন-জুলাই মাসে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে তাগাদা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যেও দল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ জেলায় ২৮ মে, উত্তর জেলায় ২৯ মে ও মহানগরে আগামী ৩০ মে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ জেলার সম্মেলন সফল করতে আজ বিকালে আন্দরকিল্লা দলীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সভায় চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলে নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিবেন।
মহানগর ছাত্রলীগও গত ৯ মে দুটি মোহরা ও জামালখান ওয়ার্ডের কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক ব্যস্ততার জানান দিয়েছে। গত পরশুদিন কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের কমিটিও দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন কয়েকটি উপজেলা ও কলেজ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর ছাত্রলীগের তিন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেখানে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি সামনে এসেছে।
এদিকে সাংগঠনিক এমন ব্যস্ততার মধ্যেই বাঁশখালীর ১৪ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে ব্যস্ততা বেড়েছে জেলা আওয়ামী লীগের। গত ১৩ মে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘তৃণমূলের প্রতিনিধি সভা থেকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আটটি সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে। টিমগুলো কাজ শুরু করে মাঠের চিত্র তুলে ধরবে। কার্যকরী কমিটির বর্ধিত সভা থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা জুন-জুলাইয়ে উপজেলা সম্মেলন ও সেপ্টেম্বরে জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’