নির্বাচন ও মেরুকরণে চাপা পড়েছে সম্মেলন

18

রাহুল দাশ নয়ন

মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল গত ৩১ জুলাই। কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ এমন নির্দেশনা দিলেও জাতীয় নির্বাচনের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। এর আগেও অন্তত আরও তিনদফা সম্মেলন স্থগিত করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে যেন ‘শনিরদশা’ ভর করেছে। উপ-নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে সম্মেলন পেছানো হলেও এবার সম্মেলন ঘুরপাক খাচ্ছে মেরুকরণে। জাতীয় নির্বাচনের পর বড়ধরনের মেরুকরণের আভাস মিলেছে আওয়ামী লীগে। যার প্রভাব পড়েছে সম্মেলনে। সম্মেলন যেন নির্বাচন ও মেরুকরণে চাপা পড়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন মাত্র শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিব।’
দলীয় সূত্র জানায়, নগরের আওতাধীন ১১২টি ইউনিট কমিটি, একটি থানা ও ১৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন করেছে নগর আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ৩১ জুলাই নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। উপ-নির্বাচনের কারণে চতুর্থবারের মতো সেদিনের সম্মেলন স্থগিত করা হয়। এর আগে প্রথমবার ২০২২ সালের ১ অক্টোবর, দ্বিতীয়বার ৪ডিসেম্বর, তৃতীয়বার ১৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেও সম্মেলন স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সম্মেলনের এসব তারিখ ঘোষণা করে গেলেও শেষতক তা টিকেনি।
দলীয় নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং ও দুই শীর্ষপদে কারা আসবেন তা নিয়ে বিভক্তির কারণেই সম্মেলন নির্ধারিত সময়ে হয়নি। ২০২২ সালের ২৮ জুন ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নগরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি ওয়ার্ডে সম্মেলন হলেও পরবর্তীতে আবারও স্থগিত করা হয়। গত ১৯ ফেব্রæয়ারি নগর আওয়ামী লীগের নেতারা গণভবনে দলীয় সভানেত্রীর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন দ্রæত শেষ করতে কঠোর নির্দেশনা দেন। সে বৈঠকে নেতারা সম্মেলন হওয়া না হওয়ার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর গত ১৫ মার্চ থেকে পুনরায় ওয়ার্ড সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জুন মাসে ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শুরু হলেও তা আবারও থমকে যায়।
নেতাকর্মীরা বলেন, সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হলেই কোনো না কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। কখনো উপ-নির্বাচন, সিনিয়র নেতাদের গ্রুপিং, প্রধানমন্ত্রীর জনসভার কারণে সম্মেলন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে সম্মেলন পিছিয়ে দেয়া হলেও মূলত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারা হচ্ছেন তা নিয়েই সম্মেলন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তিও বেড়েছে। যার প্রভাব নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পড়বে। জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন করে আওয়ামী লীগে মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘এখন আমরা সাংগঠনিকভাবে রুটিন ওয়ার্ক করছি। প্রতিদিনই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছি। নির্বাচন শেষ হয়েছে বেশিদিন হয়নি। যে কারণে সম্মেলন বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। কেন্দ্র থেকে যখনই কোনো সিদ্ধান্ত আসবে আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিব।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। এরপর ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বরে সম্মেলন ছাড়াই ঢাকা থেকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছরের কমিটি দেয়া হয়। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথম সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। এখন এই নেতা ভারমুক্ত হয়েই পূর্ণ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।