নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে কঠোর পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

20

খাদ্যে ভেজাল; নতুন কিছু নয়, তবে সরকারি নানা পদক্ষেপের মধ্যেও এটি বেড়ে চলছে আশঙ্কাজনকভাবে। সাধারণ মানুষ পেটের তাগিদ ও রুচির কারণে বাছবিচার ছাড়া এ খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু মচমচে মজাদার খাদ্যের আড়ালে মানুষ কী পরিমাণ বিষ বা ক্ষতিকর খাদ্য গ্রহণ করছে-এর আরেকটি নজির পাওয়া গেল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। গত শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে স্থাপিত রেস্ট্রুরেন্ট বা ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে হরেক রকম সাজিয়ে রাখা স্ট্রিটফুডে মসল্লার সাথে মিশানো হচ্ছে সীসা জাতীয় সব ক্ষতিকর উপাদান তথা ‘লেড ক্রোমোটের’, যা মানুষের শরীরে ভযাবহ ক্যান্সরসহ নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। স্ট্রিটফুডের মধ্যে কাকড়া, চিংড়ি ও পিঁয়াজুতে এমন ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা দেখতে আকর্ষণীয়, মচমচে ও মজাদার করতে এসব ক্ষতিকর উপাদান মিশাচ্ছেন, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বরং মারাত্মক অপরাধের সামিল। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে এসব দোকানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেও খাদ্য নিরাপদ নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখার বিষয়। সূত্র জানায়, সম্প্রতি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে স্ট্রিটফুড বিক্রি করে এমন ৮৭ টি দোকানে অভিযান চালায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৮৫টি দোকানেই খাদ্যে ক্ষতিকর সীসা পাওয়া গেছে। জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম, তাৎক্ষণিক চিংড়ি, কাকড়া ও সমুদ্রের মাছ উদ্ধার করে জনসম্মুখে ধ্বংস করে ফেলেন। এরপর দোকানিদের সতর্ক করার পাশাপাশি দোকান সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দেন ফারহানা ইসলাম। দোকানদের সচেতন করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও তিনি বলেছেন। খাদ্য কর্মকর্তার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে ক্রেতদা-বিক্রেতা সকলকে সচেতন হতে হবে। এ জাতীয় খাদ্য মানব দেহে কি পরিমান ক্ষতি করতে পারে তা জানতে হবে উভয়কে। আমরা মনে করি, প্রশাসনিক ও আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে নিরাপদ খাদ্য অনেকটা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমরা জানি, জাতিসংঘ বহু আগেই খাদ্য অধিকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ। এছাড়া খাদ্য অধিকারবিষয়ক অন্যান্য সনদও বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। তার প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করি বাংলাদেশের সংবিধানে। সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘…(ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা…’ হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। তবে এখন শুধু খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করলেই হবে না, সেটিকে নিরাপদও রাখতে হবে। কেননা প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মানুষ খাদ্যজনিত রোগে প্রাণ হারায়। বাংলাদেশেও এ সংখ্যা কোনো অংশে কম নয়। খাদ্যপণ্যে ভেজালের কারণেই দেশের মানুষের বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেইলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানিসহ আরো জটিল রোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। একে নিয়ন্ত্রণে আনতে খাদ্যকে নিরাপদ করতে হবে সর্বাগ্রে।
আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশও খুব একটা পিছিয়ে নেই। দেশে নিরাপদ খাদ্য আইনসহ আরো কিছু পরিপূরক আইন আছে। রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানও। তবু নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যায়নি। শুধু আইন বা প্রতিষ্ঠান থাকলে হবে না, আইনের প্রয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা দরকার। এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকেই আরো শক্তিশালী করা যেতে পারে। আমরা আশা করব, ভেজালবিরোধী অভিযান কঠোর হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত হবে। ভেজাল পণ্য ও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে অভিযান নিয়মিত থাকলে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।