নিরাপত্তা ও আধুনিকতার সবটুকুই এখন বিএম ডিপোতে

78

নিজস্ব প্রতিবেদক

অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে সীতাকুন্ডে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিএম কন্টেইনার ডিপোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। নতুন রূপে সাজছে ডিপোটি। অত্যাধুনিক ফায়ার সিস্টেম, নতুন ভবন নির্মাণ, কন্টেইনার উঠানামায় অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ক্রয়ের পাশাপাশি ডিপোর ভেতরে তৈরি হচ্ছে তিন লক্ষ গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন রিজার্ভ পানির ট্যাংক। এছাড়াও ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে ‘ফোম ফায়ার সিস্টেম’ তৈরি করা হয়েছে। যে সিস্টেমের মাধ্যমে মাত্র ১৯ মিনিটে দুই লক্ষ ৮৬ হাজার স্কয়ারফিটের পুরো শেড ফোমে ভরপুর করা যাবে। নতুন করে এই ডিপোর আধুনিকায়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিপোটি চালুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএম কন্টেইনার ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাইনুল আহসান বলেন, ‘অগ্নি দুর্ঘটনার পর নতুন লে-আউটে পুরো ডিপোটি আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। আগামীতে সার্ভিস ও কোয়ালিটির দিক থেকে এই ডিপোটি বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার মডেল ডিপো হিসেবে সামনে আসবে। আগামী তিন বছরের একটি ভিশন নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। যা আগামী ছয় মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে। এই ভিশন বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা, টিমওয়ার্ক, কাস্টমার ভেল্যু, বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করবো।’
ডিপো ঘুরে দেখা যায়, নতুন লে-আউটের অধীনে একটি তিনতলা অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে তিন লক্ষ গ্যালন রিজার্ভ পানির ট্যাংক বসানো হচ্ছে। চালু হচ্ছে তিনটি ফায়ার পাম্পের সমন্বয়ে ফায়ার সিস্টেম। দুর্ঘটনায় অক্ষত শেডটির পাশাপাশি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেডটি নতুন আঙ্গিকে দ্বিতল করা হচ্ছে। ভোগ্যপণ্য রাখার জন্য আলাদা শেড তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের বিষয় মাথায় রেখে ১২ হাজার স্কয়ার ফিটের ডেঞ্জারস গুডসের জন্য বিশেষ শেড বানানো হচ্ছে। নির্মাণাধীন ফায়ার ফোম সিস্টেমটি আগুন লাগার খবরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল দিবে। সীমানা প্রাচীরের নিরাপত্তায় লাইন ক্রসিং ডিটেকশন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এই সিস্টেমে কেউ সীমানা প্রাচীর পার হতে চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পৌঁছে যাবে। এছাড়াও কন্টেইনার ও কার্গো ট্রাকিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে সিস্টেম চালু হলে কন্টেইনার কার্গো যেখানেই থাকবে তার তথ্য ডিপোতে সংরক্ষিত থাকবে। এমনকি কন্টেইনার মধ্যসাগরে থাকলেও এই সিস্টেমে তথ্য জানা যাবে।
দুর্ঘটনার পর পুরো ডিপোটিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার উদ্যোগ হিসেবে পরিচালনা টিমে পরিবর্তন, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১২০ জন কর্মচারীকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিনির্বাপনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবাও চালু করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন প্রদানের পাশাপাশি নতুন করে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।
বিএম কন্টেইনার ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাইনুল আহসান বলেন, ডিপো চলে কাস্টমস রুলে। নিজের ইচ্ছেয় কিছু করতে পারবো না। পুরো ডিপো এলাকাটি কাস্টমস বন্ডেড এলাকা। দুর্ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে যে নিয়মগুলো ফলো করতে বলা হয়েছে সেগুলো মেনেই ডিপোটি মডেল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমরা দুর্ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নিয়েছি মূলত সেগুলো নিয়েই কাজ করছি। আগামী নভেম্বরের মধ্যে একটি শেড চালুর প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২৪ একর জায়গার উপর বিএম ডিপো গড়ে উঠে। সর্বশেষ ২০২১ সালে বিএম ডিপোতে রপ্তানি কন্টেইনার হেন্ডেলিং হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টিইউএস, আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টিইউএস, খালি কন্টেইনার হেন্ডেলিং হয়েছে ৪০ হাজার টিইউএস। গত ৪ জুন অগ্নি দুর্ঘটনায় বিএম ডিপো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুনে পুড়ে মারা যান ৫১ জন। অগ্নিকাÐে হতাহতদের সহায়তায় প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দুর্ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এদিকে গতকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিখ্যাত দুটি কোম্পানি এইচএন্ডএম ও মার্স্ক লাইন এর শীর্ষপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বিএম ডিপো পরিদর্শনে যায়। এসময় তাঁরা পুরো ডিপোটি ঘুরে অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করেন। পরে ডিপোটির আধুনিকায়ন কার্যক্রম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরিদর্শনে আসা প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন, এইচঅ্যান্ডএমের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাটস স্যামুয়েলসন, সুইডেন থেকে এইচঅ্যান্ডএমের বিজর্ন ব্লোমেগ্রেন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ক্যালেবো অ্যানেলি, গুলশান আরা মুন্নি, ফ্রান্সিস গোমেজ এবং মার্স্ক লাইনের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লাউস কোয়েলার্ট প্যাগ, সুইডেন থেকে সোফিয়া পার্টোভি, নেদারল্যান্ডস থেকে কার্লিন ভ্যান ডের মার্ক, ভারতের অ্যাক্তা কোহলি, বাংলাদেশের মানব মেহতা, অভিজিৎ পাল ও রাশেদুজ্জামান রানা। এসময় বিএম ডিপো লিমিটেডের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মইনুল আহসান, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার লে. কর্নেল মো. তৌফিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ নুরুল আকতার, ম্যানেজার মো. সাকিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দুটি কোম্পানির প্রতিনিধি দলকে অভ্যর্থনা জানান।