নিজেকে বদলানোর এবং পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের মাস মাহে রমজান

25

 

(গতকালের পর)
অতঃপর সেখানে মলম লাগাই যা একে দ্রুত সারিয়ে ফেলে। ঠিক তেমনি আমাদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন স্বচ্ছ মন যখন উল্লিখিত পাপাচারগুলো দ্বারা জখম হয় তখন সাধারণত সেগুলো আত্মা থেকে সরাবার চেষ্টা করতে হবে ঠিক যেমনি আমরা ও অন্যান্য পশুরা যেমনি বেচেঁ থাকবার জন্য খায়, ঘুমোয়, তারা প্রজনন করে এবং জখম স্থলে রক্তাক্ত হয় আমরা মানুষেরাই সেই রকম খাই, ঘুমোয়, প্রজননে সঙ্গম, জখম হলে রক্তাক্ত হই। কিছু শুধুমাত্র একটি বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে- তাদের আত্মিক উন্নয়ন সাধনের ক্ষমতা নাই কিন্তু আমরা আমাদের আত্মার উন্নয়ন সাধন করে সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাতে পরিণত হতে পারি। নচেৎ পশু শ্রেনীর মতো Physical function ও মারামারি, হানাহানি, কড়াকাড়ি করে আমরা তাদের দলভূক্ত হয়ে যাবো। আমাদের অপরিষ্কার ডিশ ততক্ষণ ঘষে পরিষ্কার করি যতক্ষণ তা পরিষ্কার না হয়। ততক্ষণ আমাদেরকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এটি একটি সাধনার প্রক্রিয়া যা একদিনে অর্জন সম্ভব নয় এবং রমজান মাস এই সাধনার সবচেয়ে অনুকূল মাস। তাহলে এ প্রক্রিয়ার প্রথমে আমাদের উরৎঃ বা সমস্যাগুলো আমাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। যেমন:- আমি বন্ধুদের সাথে গল্প করতে বসলে অবশেষে তা গীবতে শেষ হয়। অতএব গীবতের বুনাকে সরাতে হলে আমাকে ঐ বন্ধুদের সঙ্গ বা আড্ডা পরিহার করতে হবে। একজন মুমিন মুসলমান কোন খারাপ কথা বা সমালোচনা বা আড্ডা চলতে থাকলে তা থেকে সালাম দিয়ে সরে আসে। এইভাবে আমাদেরকে অন্যের নয় বরং নিজের দোষ-ক্রটি অন্বেষণ করে বের করতে হবে তা একটি কাগজে লেখা যেতে পারে এবং প্রতিদিন ভুলগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। বারবার একই ভুল হলে নিজেকে কোন কঠিন কাজ যেমন:- বড় রকমের সাদাকা বা তাহাজ্জ্বাদ বা ১২ বা ২০ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। গীবত হচ্ছে তার জন্য বেশী বেশী দোয়া করা প্রভৃতি কাফফারার ব্যবস্থা করে নিজেকে শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করতে হবে যেন ঐ সকল কঠিন ভালো কাজের কারণে ভুলগুলো বারবার না হয়। নিজের ভুলগুলো দুর করার জন্য বেশী বেশী আল্লাহ্র সুবহানতালার সাহায্য চাইতে হবে। বেশী বেশী আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ও মুমিন মুুমিনাদের জানবার চেষ্টা করতে হবে। আমরা আল্লাহ্ ও তাদেরকে যত বেশী চিনবো, জানবো, এতে আমাদের Short comings বা lackings গুলো সম্পর্কে জানবো। অতএব প্রথম পর্যায়ে আমাদের দোষগুলো চিহ্নিত করার পর স্বিতীয় পর্যায়ের কাজটি হচ্ছে জিহাদের কাজ। নিজেকে ঠিক করার জন্য,আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবার নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করতে হবে। যদিও এ কাজটি কঠিন মনে হচ্ছে কিন্তু মাত্র চারটি কর্ম বা কাজ এবং একটি বেশী কাজ করে আমরা এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারি। আবদুল কাইয্যুম (রহ:) এ যুদ্ধে জয়ী হবার কৌশল খুব সুন্দভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন।
চারটি কর্ম বা কাজ হচ্ছে:-
১। কম কথা বলা, ২। কম ঘুমানো, ৩। কম খাবার খাওয়া এবং ৪। মানুষের সাথে কম Interaction করা ।
আর বেশী করতে হবে যে কাজটি তা হচ্ছে বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ করা। রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন আল্লাহর স¥রণ বা যিকির আমাদের হৃদয় বা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার অন্যতম উপায়। অতএব জখমকৃত আত্মার ময়লা পরিষ্কার করে তাতে আল্লাহর যিকরের মলম লাগাতে হবে যেন জখমকৃত রোজাক্রান্ত আত্মা দ্রুত সেরে উঠে আর আল্লাহ্র স্মরণ বৃদ্ধি করার কৌশলগুলো নিম্নরূপ ;-
১। কুরআন বুঝে সহীভাবে পড়া,মুখস্ত করার চেষ্টা করা।
২। নিজের দোষ বা ভুলগুলোর জন্য বেশী বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করা ।
৩। সকালে সন্ধ্যায় বা পারলে প্রতি ফরজ নামাজের পর সুবহানল্লাহ,আলহা মদুলিন্নাহ, আল্লাহু আকবর লাইলাহা ইল্লালাহু ওয়াহ পড়া।
৪। সকলের হক আমার করার সাথে সাথে বেশী বেশী দান সাদাকাহ্্ করা।
৫। বেশী বেশী ভালোকাজ করা, সুযোগ পেলেই অন্যেই উপকার করা ।
৬। আল্লাহর সৃষ্ট পৃথিবী, প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে তার জন্য শুকরিয়া জানানো এবং তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা।
৭। আমাদের প্রতি আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা বা শোকর আদায় করা। কি পায়নি তা ভাববো না। কি পেয়েছি তাই শুধু ভাববো কি পায়নি এই চিন্তা পরিহার কবার জন্য আমরা আমাদের চেয়ে যারা খারাপ অবস্থায় আছে তাদের কথা চিন্তা করবো এবং আল্লাহর কাছে খারাপ অবস্থা থেকে পানাহ্ চেয়ে তার উপকারের চেষ্টা করবো।
৮। সব সময় ভালো কাজে পজিটিভ থাকবো। সব কিছু ও সবার সম্পর্কে সুধারণা খারাপ অবস্থা থেকে পানাহ চেয়ে তার উপকারের চেষ্টা করবো। এটি একটি প্রক্রিয়া যা রাতারাতি সম্ভব নয়। তাই আসুন এই রমজানে আমরা নিজেকে বদলাই। আমরা আল্লাহর সেই সেরা জীব আশরাফুল মাখুফাত হবার জন্য আমাদের Crystal clear করার জন্য আজ থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু করি। অন্যের নয় নিজের দোষ খুজে বেড়ায় আমাদের সৃষ্টির্কতাকে জানার ও জানার চেষ্টা করি। তা না হলে আমাদের এই আত্মা আরো বেশী আমরা নিজেরাই রোগাগ্রস্ত হব এবং আমাদের আত্মার উপর জুলুম করবো এতে অন্যের ক্ষতি হবে না বরং নিজের ইহকাল ও পরকালের সাগরে নিমজ্জিত হবো। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন এবং সকলের চেষ্টা কবুল করুন। আমিন ।

লেখক: নারী উন্নয়নকর্মী ও প্রিন্সিপ্যাল সিভিএনএস