নিচে ফাঁকা, উপরে কংক্রিটের ঢালাই

54

ইকবাল ফারুক, চকরিয়া

পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সড়কের কার্পেটিংয়ের বেড তৈরিতে নি¤œমানের ইটের খোঁয়া ব্যবহার করায় সড়কের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ৩৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ সড়কটি চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোঁয়াখালী এলাকায় রাস্তার উত্তর পাশে নির্মাণাধীন গাইডওয়ালের নিচের অংশ ফাঁকা রেখেই ওপরে কংক্রিটের ঢালাই দিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে গাইডওয়ালের নিচের ফাঁকা অংশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে মাটি ভরাট করে দেওয়া হয়। এছাড়া পহরচাঁদা এলাকায় সড়কের কার্পেটিংয়ের বেড তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইটের খোঁয়া।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী একতাবাজার থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটারের বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ৩৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ সড়কটি চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স, জামিল ইকবাল, রানা বিল্ডার্স ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স নামে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ সড়ক নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে সড়কে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি তাদের।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী একতাবাজার থেকে মগনামা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটারের এ সড়কটি ১০ দশমিক ৩ পয়েন্টে উন্নীত করা হবে। তিন প্যাকেজে সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম প্যাকেজে সড়কে ১ দশমিক ৯১ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, দশমিক ৪ কি.মি. বাঁক সরলীকরণ, ৬ দশমিক ৫৪ কি.মি. পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ ও প্রশস্তকরণ, ৫ দশমিক ৭৬ কি.মি. পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ, প্রশস্তকরণ ও উঁচুকরণ, দশমিক ৭০ কি.মি. রিজিভ পেভমেন্ট, আরসিসি বক্স কালভার্ট ৪টি, ইন্টারসেকশন ৩টি ও আরসিসি সসার ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
দ্বিতীয় প্যাকেজে সড়কে ১ দশমিক ৯২ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, ৩ দশমিক ৫ কি.মি. নতুন পেভমেন্ট, দশমিক ৪ কি.মি. বাঁক সরলীকরণ, ৫ দশমিক ৪০ কি.মি. পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ ও প্রশস্তকরণ, দশমিক ৩০ কি.মি. রিজিভ পেভমেন্ট, আরসিসি বক্স কালভার্ট ৫টি, আরসিসি ড্রেনেজ স্লুইস গেট দুইটি, ইন্টারসেকশন ১টি, আরসিসি সসার ড্রেন, সাইন-সিগন্যাল, গাইড পোস্ট, রোড মার্কিং নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রস্তাাবিত সড়কের অংশে সাবমেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনা সড়কে যাতায়াতের জন্য ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে সড়কের কাজ চলমান রয়েছে।
পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হিজবুল্লাহ বলেন, তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করতে গিয়ে কাজের মান ঠিক রাখতে পারছেন না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া সুষ্ঠু তদারকির অভাবে হচ্ছে নানা অনিয়ম। এমনকি বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি দিয়ে সিমেন্টের মিশ্রণ (মসলা) তৈরি করে গাইডওয়ালের আস্তরণ দেয়া হয়েছে। এক কথায় এ সড়ক নির্মাণে দায়সারা কাজ করে সরকারি অর্থ লুটপাটের মহোৎসব চলছে।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সওজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আঁতাত করে খুবই নি¤œমানের কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিনি আরও বলেন, বরাদ্দের অর্ধেক টাকার কাজও করা হলে সড়কটি অন্তত কিছুটা টেকসই হতো। সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে এ সড়ক ভরাটের অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল কনস্ট্রাকশনকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তাদের প্রতিটি কাজই অনিয়মে ভরা।
তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার জামিল আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তদারকিতে আমাদের প্রতিটি কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ভালভাবেই অধিকাংশ কাজ শেষ করেছি।
বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়ক প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, প্রকল্পের প্রতিটি কাজ আমাদের তদারকিতে হচ্ছে। সেখানে অনিয়ম বা নির্মাণ ত্রুটির কোনো সুযোগ নেই। নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।