নিউমার্কেট মোড়ে ‘স্বাধীনতার স্তম্ভ’ উদ্বোধন

107

নগরীর নিউ মার্কেটস্থ শহীদ কামাল উদ্দীন চত্বরে ‘স্বাধীনতার স্তম্ভ’ উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এটি উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্থানীয় কাউন্সিলর তারেক সোলাইমান সেলিম, কেওয়াই স্টিলের পক্ষে এক্সিকিউটিভ এসএম ইকরাম আলী ও অভিষেক সেনগুপ্ত, স্ত্রিপ্ট এর পরিচালক আরিফুল হাসান, আদিউস ইঙ্ক এর স্বত্বাধিকারী আব্দুল আহাদ, সোহান মাসুদ ও চসিক নগর পরিকলপনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম বক্তব্য রাখেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, মোরশেদ আকতার চৌধুরী, রাজনীতিবিদ জামশেদুল আলম চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন ইকবাল, রাজনীতিবিদ মশিউর রহমান চৌধুরী, কামাল উদ্দিন স্মৃতি সংসদের সভাপতি আনিসুর রহমন, সাধারণ সম্পাদক সাদেক হোসেন পাপ্পু, শওকত হোসেন, আবদুস সালাম মাসুম, সাইফুদ্দীন আহমদ, তানভীর আহমেদ রিংকু, জাহাঙ্গীর আলম, শহীদ কামাল উদ্দিনের বড় ভাই মাকসুদুল আলম, খোরশেদ আলম প্রমুখ।
নগর সৌন্দর্যবধনের অংশ হিসেবে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নিউ মার্কেট গোল চত্বর এবং আশেপাশের এলাকার কাজটি করছে স্ত্রিপ্ট এবং আদিওস ইঙ্ক। এই প্রতিষ্ঠানদ্বয়কে পৃষ্ঠপোষকতা করছে কে ওয়াই স্টীল। এই কাজের মধ্যে থাকবে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন, জিপিও ও শাহ আমানত শপিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক এলাকার মিড আইল্যান্ড এবং
ফুটপাতের সৌন্দর্যবর্ধন, আধুনিক যাত্রী ছাউনি, টয়লেট স্থাপন এবং ফুটওভার ব্রিজের সংস্কারকরণ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন করেছে চুক্তিবদ্ধ দুই প্রতিষ্ঠান।
স্বাধীনতার স্তম্ভ উদ্বোধন উপলক্ষে নিউ মার্কেট শহীদ কামাল উদ্দীন স্কোয়ারে পরিণত হয় মিলনমেলা। সন্ধ্যা থেকে ২৭ ফুট উচ্চতার স্বাধীনতার স্তম্ভ’, ১০ ফুট প্রস্থ ফোয়ারা, বাগান ও ডিজিটাল আলোকায়নবিশিষ্ট ৪০ ফুট গোল চত্বরটি এক পলক দেখার জন্য জড়ো হতে থাকেন হাজারো মানুষ। তা দেখে মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এই স্বাধীনতা স্তম্ভে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ৪টি অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, দ্বিতীয় ধাপে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, তৃতীয় ধাপে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ধাপে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্পাইরাল টাওয়ারের মধ্যমে প্রতীকি রূপে তুলে ধরা হয়েছে। এই স্বাধীনতা স্তম্ভে রাতে চাঁদে আলো ও দূর থেকে আসা গাড়ি হেডলাইটও অপরূপ প্রতিবিম্বিত হচ্ছে। দিন ও রাত্রি ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করছে এটি। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিনকে উপলক্ষ করে রাত্রিকালিন ভিন্ন ভিন্ন রং ধারণ করবে এটি।
উল্লেখ শহীদ কামাল উদ্দিন সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের দুই বারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৯ সালের ১৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এক সহকর্মীকে রক্ত দিয়ে ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। মৃত্যুর সাথে চারদিন লড়াই করে ২১ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও শহীদ কামাল উদ্দিন মহানগর ছাত্রলীগের গ্রন্থণা ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। নগরীর নিউ মার্কেট চত্বরকে এই উদয়মান ছাত্র নেতার নামকরণে চসিকের সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে শহীদ কামাল উদ্দিনের বড় ভাই খোরশেদ আলম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনকালে আয়োজিত সমাবেশে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, এই স্বাধীনতার স্তম্ভটি আগামি প্রজন্মকে স্বাধীনতা সম্পর্কে অনেক তথ্য-উপাত্ত দান করবে। আমাদের সকলকে একদিন চলে যেতে হবে। ভালো কাজ করলে মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকা যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন এই স্বাধীনতা স্তম্ভটি যুগ যুগ ধরে আমাদের প্রজন্মের কাছে তাদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখবে। শহীদ কামাল উদ্দিনের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তারই একজন সহপাঠির জন্য রক্ত দিতে গিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। যা সমাজে বিরল। এই শহীদের আত্মদান অমর করে রাখার জন্য শহীদ কামাল উদ্দিনের জন্ম ও মৃত্যু সর্বোপরি তাঁর জীবনীর কথাও এখানে সন্নিবেশিত করা হবে। পরে মেয়র স্বাধীনতার স্তম্ভ ফলক উন্মোচন করেন। বিজ্ঞপ্তি