নিঃস্ব পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার এ ধারা অব্যাহত থাক

21

 

পৃথিবীর দেশে দেশে বিভিন্ন সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে থাকেন। উন্নত দেশগুলোতে বয়স্ক ভাতা, বেকার ভাতা, শিক্ষা ভাতা, স্বাস্থ্য ভাতা, বিবাহ বা বিধাবা ভাতাসহ নানা অধিকার বা সুবিধার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসলেও এসব ভাতা কবে মিলবে আমাদের দেশে- এমনটি কল্পনার বিষয়ই ছিল বলা যায়। কিন্তু সময় বেশিদিন গড়ায়নি, আগের সেই স্বপ্ন বা কল্পনা এখন বাস্তবতা। শুধু বাস্তবতা নয়, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আরো বিভিন্ন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশের জনগণ এখন সরকার থেকে এ জাতীয় নানা সুবিধা লাভের পাশাপাশি বাসস্থানের মত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকার প্রধান নিজেই নিয়েছেন। দেশের হাজারো ভূমিহীন, বাড়িহীন নিঃস্ব মানুষকে সরকার ভূমির মালিকানাসহ ঘর করে দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশের মত জনবহুল অথচ ছোট্ট একটি দেশের জন্য কল্পনার বিষয়ই বটে। এজন্য সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করতেই হয। বিশ্বের দরবারে এধরনের কর্মসূচি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বছর তথা মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ গ্রহণ করে সমাজের অসহায় গরিবদের বাসস্থান নির্মাণসহ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেন। গত মঙ্গলবার এ প্রকল্পের অধীনে ৩য় দফায় ঘর পেয়েছে, ৩২ হাজার ৯০৪ টি পরিবার। ঈদুল ফিতরের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এ ঘরগুলো প্রাপকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঙ্গলবার এ ঘর ও ভূমির দলিল যখন অসহায় মানুষগুলোর হাতে তুলে দেযা হচ্ছে, তখন তাদের চোখেমুখে তৃপ্তির আভা ফুটে উঠেছে। গৃহ ও ভূমিহীন মানুষগুলোর প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার পেয়ে আনন্দিত। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে বাড়ি ও ভূমি হস্তান্তর করেন। এসময় তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সরকারের চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ৩২ হাজার ৯০৪টি গৃহহীন পরিবার ইদের আগে এই উপহার পেল। গৃহহীন-ভূমিহীন উপকারভোগী মানুষরা ইদের আগে জমিসহ ঘর উপহার প্রাপ্তির খুশির আনন্দে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দুই শতক জমির উপর দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর, একটি টয়লেট এবং একটি বারান্দা দেওয়া হয়েছে উপহার হিসেবে। এসব ঘরের ডিজাইন প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রণয়ন করেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পরিবার। তৃতীয় ধাপের আরও ৩২ হাজার ৭৭০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। জানা গেছে, আশ্রয়ণের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো অনেক বেশি টেকসই। তৃতীয় ধাপে একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। তৃতীয় ধাপের ঘরগুলোতে আরসিসি পিলার, গ্রেড ভিম, টানা লিংকটারসহ বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আর একজন লোকও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ক্ষমতার মানেই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন, ভূমিহীন এবং ঠিকানাবিহীন থাকবে না। আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার প্রধান বলেন, বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ, চা-শ্রমিক, কুষ্ঠ রোগি, ভিন্নভাবে সক্ষমসহ সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণির মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখার কথা ঘোষণা করেছেন। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ব্যর্ত্যয় হবেনা। দেশের গৃহহীন, ভূমিহীন সকল নাগরিক বেঁচে থাকার অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ভোগ করবেন-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।