নার্সারি-কেজি ওয়ান-কেজি টু

48

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

চেম্বারে প্রথমে নিতে হয় শিশুর নাম-ধাম। এরপর সঠিক বয়স নির্ণয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তারপরে যতসব রোগ ইতিহাস খোঁজা।
তুর্ণার বর্তমান বয়স ১২ বছর ০২ মাস। ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। তার মানে সে যখন এসএসসির পরীক্ষায় বসবে তখন তার বয়স দাঁড়াবে ১৭ এর বেশি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় এই নার্সারি, কেজি ওয়ান, কেজি-টু করতে করতে সবুজ-অবুজ শিশুদের এই দৈন্য-দশা।
৪ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করার কথা। অধুনা স্কুলগুলোতে এই বয়স ধরে নার্সারি বা কেজি ওয়ান শুরু করা হয়। আবার কোনো কোনো স্কুলে নার্সারিতে ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত প্রশ্ন থাকে। সেখানে এক থেকে ১০০, ওয়ান-টু হানড্রেড পর্যন্ত বানান করে লিখতে বলা হয়।
কীভাবে একজন চার বছরের শিশু এরুপ প্রশ্নের উত্তর দান করবে, তা কেউ মাথায় রাখেন না। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ মতে ৪ বছরে একজন শিশু কেবলমাত্র বৃত্ত আঁকায় পারদর্শিতা লাভ করে। শিক্ষকদের মধ্যে কারো কারো ধারণা , লেখাপড়ায় সেরা ছাত্র-ছাত্রীরা তা পারে।
আসলে মা-বাবা, অভিভাবকেরা নামকরা স্কুলগুলোর নার্সারিতে ভর্তি প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসেন পুত্র কন্যার বয়স ৬ থেকে ৮ বছর গড়িয়ে যাওয়ার পরও। এজন্য এসব শিশু স্কুলের এমন ধরনের প্রশ্নপত্রের উত্তর লিখে আসতে সক্ষম হয়। এরপর এ বয়সের শিশু কেজি ওয়ান-কেজি টু সিঁড়ি পেরিয়ে যখন ক্লাস ওয়ানে উঠে, সে তখন আর শিশু থাকে না। হয়ে যায় কিশোর-কিশোরী। ঠাট্টা করে মাঝে মাঝে বলে ফেলা হয়Ñ ‘এরা তো দেখি আমার চেয়েও বুড়ো। একটা আক্কেল দাঁতও অবশিষ্ট নেই’।
আমাদের কালে এই ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে মা-বাবা নিকটস্থ যেকোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দিতেন। এতসব ঝুট-ঝামেলা পোয়াতে হয়নি। তাতে করে বয়সন্ধি পেরোনোর পূর্বেই অনেকের এস.এস.সি পাস সম্পন্ন হয়ে যেত।
আর একালের খাঁচাবন্দী শিশুদের এই যে বয়স হরণ, তার দায়দায়িত্ব কার ঘাড়ে কিছুই বোঝার অবকাশ নেই।
নার্সারি, কেজি ওয়ান-কেজি টু, হাস্যজনক লটারি-
এতসব হৈ-হট্টগোল, ভর্তি প্রতিযোগিতার রঙ-তামাশা পরিহার করা আদৌ কি অসম্ভব!

লেখক: প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।