নারী সদস্যকে দিয়ে ফাঁদ অপরাধ দমনে আরো বেশি কৌশলী হতে হবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে

37

চট্টগ্রামে রাজনৈতিক বিরোধজনিত অপরাধ কমলেও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে প্রতারণা ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট পারিবারিক, সামাজিক ও গোষ্ঠীবদ্ধ অপরাধ। এসব অপরাধের সাথে নাজনৈতিক মতাদর্শের সম্পর্ক না নাথাকলেও সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের নামের সাথে রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায় প্রায় সময়। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং কালচার-এ নেপথ্যে থাকা বস বা বড় ভাইদের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নাম দেখা যায়। অতিসম্প্রতি কিশোর গ্যাং-এর পাশাপাশি নারীদ্বারা ফাঁদ পেতে বিভিন্ন অভিনব কৌশলে অপরাধ সংঘটনের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় অপরাধ সংঘটনে নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র। ফাঁদে পা দিলেই ঘটছে সর্বনাশ। প্রযুক্তির নানা মাধ্যমকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এ অপরাধে ব্যবহার কার হচ্ছে নারীদের। সূত্র জানায়, চক্রের নারী সদস্যরা প্রযুক্তি সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব কিংবা প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর প্রলোভনে ফেলে ছিনতাই ও ব্ল্যাকমেইলিংসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ও দেখতে সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে এমন অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। নারী সদস্যদের অপতৎপরতা কেবলই ফাঁদ পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, চুরি-ছিনতাইসহ প্রকাশ্যে নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছেন এসব নারীদের অনেকে। প্রতিবেদনে পুলিশ সূত্রে দুটি ঘটনার এক লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে, গতবছর ১৪ ডিসেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে এক নারী অসহায়ত্বের ভান করে মোটরসাইকেল আরোহী সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আসাদুজ্জামান সুমনের কাছে সহযোগিতা চান। ওই নারী সুমনকে তার মোটরসাইকেলে করে দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় গন্তব্যে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন। সুমনও সাত-পাঁচ না ভেবে নিজের মোটরসাইকেলে ওই নারীকে নিয়ে দক্ষিণ কাট্টলীর প্রাণহরি দাশ রোডের রূপালী আবাসিক এলাকার হাজী সোলায়মান ভবনের সামনে পৌঁছান। সেখানে নামিয়ে দেয়ার পর ওই নারী সুমনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাসায় এক কাপ চা খেয়ে যাওয়ার আবদার করেন। একথা বলেই সুমনকে নিয়ে যাওয়া হয় ভবনের সপ্তম তলার ছাদে। আর ছাদে পা রাখামাত্রই সেখানে আগে থেকে অবস্থানরত সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের পুরুষ সদস্যরা তাকে ঝাপটে ধরে বেঁধে ফেলে। অতপর মোটরসাইকেলে আরোহী সুমনের শার্ট-প্যান্টের পকেট হাতিয়ে সোনালী, লংকাবাংলা ও সিটি ব্যাংকের পৃথক তিনটি ক্রেডিট কার্ড, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ও ইউসিবিএল- এর পৃথক তিনটি ডেবিট কার্ড, দুটি স্মার্ট ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নগদ ১৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বুথ থেকে ১২ হাজার টাকা উত্তোলন করে মোটরসাইকেলটিও কেড়ে নেয়া হয়। সবশেষে সুমনকে অচেনা জায়গায় নিয়ে ছেড়ে দেয় দুর্বত্তরা। এ ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তের এক পর্যায়ে দক্ষিণ কাট্টলী থেকে ওমর ফয়সাল রনি (২২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে সুমনের লুণ্ঠিত মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়। পুলিশ রনির নারী সহযোগীসহ চক্রের অপরাপর সদস্যদের খুঁজছে। এ ঘটনার কিছুদিন আগে এক নারীর মাধ্যমে মোটা অংকের নগদ টাকা খুইয়েছেন একজন পেশাদার চিত্রগ্রাহকের। গণমাধ্যম সুত্রে এ জাতীয দুটি ঘটনা আমরা জানতে পারলেও বাস্তবে নগরীতে অসংখ্য ঘটনা ঘটছে, যা নানা কারণে প্রকাশ পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ বেগে যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, ছিন্তাইকারী এসব অপরাধী চক্র যতই কৌশল াবরম্বন করুক না কেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে আরো বেশি আধুনিক ও কৌশলী হবেন, তা বিশ^াস করতে পারি না। নগর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নেয়ার পাশাপাশি ঘটনার শিকার হওয়ার আগেই সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। অনাকাক্সিক্ষত বিপদ এড়াতে অচেনা-অজানা যে কারও সাথে কথায় ও কাজের ক্ষেত্রে সচেতন থাকার তাগিদ দিয়েছেন তারা। এ ধরনের অপরাধচক্রের অভিনব ফাঁদে পা দেয়ার আগে নিজের সাবধানতাই সবচেয়ে কার্যকর রক্ষাকবচ হতে পারে বলেও তারা মনে করেন। আমরা পলিশের এ আহবানের সাথে সহমত পোষণ করে বলতে চাই, পুলিশকে আরো কৌশলী হয়ে এসব প্রতারকচক্রকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।